X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন আইনের প্রতিবাদে চার বিভাগে বাস ধর্মঘট

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
১৮ নভেম্বর ২০১৯, ১৭:৫৮আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ২০:৫২

ঝিনাইদহে বাস ধর্মঘট নতুন সড়ক পরিবহন আইনের প্রতিবাদে এবং এর কিছু বিধান সংশোধনের দাবিতে দেশের তিন বিভাগে পরিবহন ধর্মঘটের খবর পাওয়া গেছে। খুলনা বিভাগের সব জেলায়, রাজশাহী বিভাগের কয়েক জেলায়, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুরে বাস ধর্মঘট পালন করছেন চালক ও শ্রমিকরা।

খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় কোনও ধরনের ঘোষণা ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছেন বাসচালক ও শ্রমিকরা। সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকাল থেকে ধর্মঘটের কারণে এ অঞ্চলে বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ থাকার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে রাজশাহী বিভাগের কয়েকটি জেলায়ও অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চালক ও শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করছেন বলে জানা গেছে। এর বাইরে ঢাকা বিভাগের মধ্যে শুধু টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে নতুন সড়ক আইনের কিছু বিধান সংশোধনের দাবিতে পরিবহন চালকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট করছেন।

খুলনা জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী মো. নুরুল ইসলাম বেবী জানান, ‘খুলনা বিভাগের ১০ জেলাতেই চালকদের কর্মবিরতি চলছে। মূলত রবিবার থেকেই বাসচালকরা ধর্মঘট শুরু করেছেন। তবে সেটা ছিল আংশিক। সোমবার থেকে সব বাসচালকই নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে ধর্মঘট শুরু করেছেন। এক্ষেত্রে শ্রমিক ইউনিয়ন বা মালিক সমিতির কোনও আহ্বান নেই।’

তিনি জানান, ‘রবিবার সকাল ১১টায় ঝিনাইদহে মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশনের একটি বৈঠক ছিল। সেখানে সব মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠক শুরুর আগে থেকেই চালকরা কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন। বৈঠকে ফেডারেশনের নেতারা ২২ নভেম্বর পর্যন্ত সময় চাইলে সব শ্রমিক ইউনিয়ন তা প্রত্যাখ্যান করে। ফলে সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।’

যশোরে বাস ধর্মঘট


নুরুল ইসলাম বেবী বলেন, ‘মোটর শ্রমিকরা সড়ক পরিবহন নিয়ে তৈরি নতুন আইনকে শ্রদ্ধা জানায়। কিন্তু এ আইনের কতিপয় ধারা ও বিধান সরাসরি মালিক ও শ্রমিকদের ওপর আঘাত করছে। সেগুলো সংশোধন করার দাবিতে চালকরা এ ধর্মঘট পালন করছেন। এরমধ্যে গাড়ির চালকদের জন্য করা জরিমানার বিধান, বাণিজ্যিক ছোট ছোট গাড়ি নিয়ে করা বিধান, আইনে জামিন না দেওয়ার বিধান, মালিকদের ওপর আরোপিত জরিমানার বিধান সংশোধন করার দাবি জানানো হয়েছে।’

এদিকে নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের ঘোষণার পর সোমবার সকাল থেকে হঠাৎ করে রাজশাহী থেকে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাজশাহীর সঙ্গে বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। এতে দুর্ভোগে পড়েন মানুষ। তবে ঢাকামুখী কোচগুলো রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। মোটর শ্রমিকরা রাজশাহী নগরীর শিরোইল ও নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল এবং ভদ্রা মোড়ে অবস্থান নিয়ে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রত্যাহারের দাবি জানান।

রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এটা ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ডাকা কোনও ধর্মঘট নয়। সকাল থেকে শ্রমিকরা নিজেরাই বাস বন্ধ রেখেছেন। রাজশাহীর মালিকদের বাস দু-একটি করে নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে ছেড়ে যাচ্ছে। তবে বাইরের জেলার মালিকদের বাসগুলো রাজশাহী আসার পর পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বাস চলছে না রাজশাহী-নওগাঁ রুটে। এছাড়া রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়েও শহর থেকে কোনও বাস ছেড়ে যাচ্ছে না।’ খুলনায় বাস ধর্মঘট

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের প্রতিবাদে শ্রমিকরা বাস বন্ধ করেছেন।’ এটা সমর্থন করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সমর্থন করি না। প্রতিবাদ জানানোর আরও ভাষা আছে। এভাবে বাস বন্ধ করে যাত্রীদের দুর্ভোগে ফেলা আমি সমর্থন করি না।’

প্রসঙ্গত, গত ১ নভেম্বর থেকে আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর করা হয়। তবে এই আইন নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কিছু দিন এর প্রয়োগ শিথিল করা হয়। রবিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, এই আইন কার্যকর করা শুরু হয়েছে। এর পরদিনই বাস বন্ধ করে দিলেন রাজশাহীর শ্রমিকরা।

নওগাঁর শ্রমিক নেতা ওমর ফারুক জানান, নওগাঁয় বাস মালিক ও চালকরা বাস চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্তও বিভিন্ন রুটে বাস চলছিল। তবে রাস্তায় বাসসহ অন্যান্য যানবাহনের পরিমাণ কিছুটা কম।  

নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের জেরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস ও ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক আছে। পরিবহন মালিকদের দাবি, এটি শ্রমিকদের ব্যাপার। তবে জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাইদুর রহমান জানান, ‘নতুন আইনে শাস্তি বেশি হওয়ায় চালকরা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামার সাহস পাচ্ছেন না। এ কারণে তারা স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি শুরু করেছেন। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী রুটে মহানন্দা ও গেটলক সার্ভিস সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে।’ এদিকে বাস চলাচলে বন্ধের কারণে দুর্ভোগে পড়েন আন্তঃজেলা রুটের যাত্রীরা। বিকল্প মাধ্যম হিসেবে গন্তব্যে পৌঁছাতে ইজিবাইক, মিশুক ও মহাসড়কে নিষিদ্ধ তিন চাকার যানবাহনে চলাচল  করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। আন্তঃজেলা বাস চলাচল না করায় রেলের ওপর চাপ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল স্টেশন ম্যানেজার মনিরুল ইসলাম।

এদিকে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে নতুন সড়ক আইনের কিছু বিধান সংশোধনের দাবিতে পরিবহন চালকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট করছেন। সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকাল থেকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভূঞাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলরত সব প্রকার যানবাহন বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা। এর ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।পরিবহন শ্রমিকরা জানান, নতুন সড়ক আইনের কয়েকটি বিষয় সংস্কার না করলে তারা পরিবহন সেক্টরে কাজ করবেন না। বিশাল অংকের জরিমানা, শাস্তি আর অপমানজনক ‘ঘাতক’ শব্দ মাথায় নিয়ে তারা গাড়ি চালাবেন না। আপত্তিকর বিষয়গুলো সংস্কারেরর দাবি জানান তারা।

জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক চিত্তরঞ্জন বলেন, ‘শ্রমিকদের এ কর্মবিরতির সঙ্গে ইউনিয়নের কোনও সম্পর্ক নেই। আমাদের এ ধরনের কোনও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। আগামী ২১ তারিখের দিকে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে কোনও কর্মসূচি পালন করা হবে না।’ খুলনায় বাস ধর্মঘটের কারণে দুর্ভোগে যাত্রীরা

নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে শেরপুর থেকে সব ধরনের দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকাল থেকে শহরের বাগরাকসা ও নবীনগর এলাকায় দু’টি বাস টার্মিনাল থেকেই ঢাকা-শেরপুরসহ সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। 

সোমবার দুপুরে শহরের বাগরাকসায় সোনার বাংলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, কাউন্টারের সামনে যাত্রীরা টিকেটের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। কাউন্টারে টিকেট মাস্টারও রয়েছেন। তবে  কোনও বাসের চালক গাড়ি চালাতে রাজি না হওয়ায় টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে না। রশিদ মিয়া নামে ঢাকাগামী এক যাত্রী জানান, জরুরি কাজে ঢাকা যাবেন তিনি। কিন্তু কোনও বাস ছাড়ছে না। অগ্রিম ঘোষণা না দিয়ে হঠাৎ এভাবে বাস বন্ধ করায় বিপদে পড়েছেন তার মতো আরও অনেকেই।

এ ব্যাপারে জেলা বাস-কোচ মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক  সুজিত ঘোষ বলেন, ‘নতুন সড়ক পরিবহন  চালকরা কখন কোন মামলায় পড়েন সেই ভয়ে তারা রাস্তায় গাড়ি নামাতে চাচ্ছে না। আমরা কোনও ধর্মঘট ডাকিনি বা বাস বন্ধেরও নির্দেশনা দেইনি। আমাদের টিকেট কাউন্টার খোলা, লোকজনও রয়েছে। তবে কোনও চালক যদি জরিমানার ভয়ে বাস চালাতে না চায়, তাহলে আমরা কী করতে পারি?’

পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে দুর্ভোগে পড়েছেন বিভিন্ন এলাকার যাত্রীরা। ফরিদপুর নিবাসী রাজিয়া আক্তার বলেন, গ্রামে যাওয়ার জন্য সকালে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি বাস চলছে না। জরুরি কাজে গ্রামে যাওয়ার দরকার ছিল। এখন সমস্যায় পড়তে হলো।

বাগেরহাটের নাসিমা বেগম জানান, কুষ্টিয়া যাওয়ার জন্য সোমবার সকালে বাগেরহাট থেকে ভেঙে ভেঙে খুলনায় এসেছেন তিনি। কিন্তু এখানে এসে জানতে পারেন বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবহন শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি মোর্তুজা হোসেন জানান, রবিবার থেকে কর্মবিরতি শুরু হওয়ার পর যশোর থেকে ১৮টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। মূলত নতুন সড়ক আইন কার্যকরের ঘোষণার পর থেকে স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি শুরু করেন চালক ও শ্রমিকরা। তাদের দাবি, নতুন আইনে যে শাস্তি ও জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা মেনে কাজ করা সম্ভব নয়। এজন্য যশোর থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। চালক ও শ্রমিকদের দাবি, এ কালো আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছাদেক আহম্মেদ খান বলেন, ‘বাস বন্ধ রাখার ব্যাপারে সংগঠন থেকে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমাদের সঙ্গে আলাপ না করে বাসচালক-শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় নড়াইল থেকে ছেড়ে যাওয়া খুলনা, যশোর, ঢাকাসহ পাঁচ রুটে বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছে। তবে বিক্ষিপ্তভাবে কোনও কোনও রুটে দু-একটি বাস চলছে।’

/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো সেনাসহ ২৮৫ বিজিপি সদস্যকে
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো সেনাসহ ২৮৫ বিজিপি সদস্যকে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে বাইডেনের সই
ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে বাইডেনের সই
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা