X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলবাড়ী ও কামালপুর মুক্ত দিবস আজ

দিনাজপুর ও জামালপুর প্রতিনিধি
০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:১৩আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৭:৩৩

মুক্ত দিবস

৪ ডিসেম্বর দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা ও জামালপুরের ধানুয়া কামালপুর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত ও স্বাধীন হয়। এ কারণে ৪ ডিসেম্বর ফুলবাড়ী ও কামালপুর মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়। আমাদের দিনাজপুর ও জামালপুর প্রতিনিধির পাঠানো খবর−

ফুলবাড়ী: ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণপণ লড়াই করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ফুলবাড়ী উপজেলা থেকে হটিয়ে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

২৬ মার্চ দেশব্যাপী হত্যাযজ্ঞের খবরে ফুলবাড়ীর বাঙালিদের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ওই দিন সকালে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে ফুলবাড়ী শহরে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল হয়। মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে রেলস্টেশন থেকে কাঁটাবাড়ী বিহারিপট্টি হয়ে বাজারে ফেরার পথে বিহারিপট্টি থেকে মিছিল লক্ষ্য করে কে বা কারা গুলি বর্ষণ করলে সংঘাত সৃষ্টি হয়। এর ফলে বিহারিদের বাড়িতে শুরু হয় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ। এপ্রিলের ২ তারিখ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ফুলবাড়ী আক্রমণ করে নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপর থেকে শুরু হয় বাঙালিদের ওপর দখলদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচার, হত্যা, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা।

দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পরবর্তীতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ফুলবাড়ীকে হানাদার মুক্ত করার জন্য ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী যৌথভাবে বেতদিঘি, কাজিহাল, এলুয়াড়ী, জলপাইতলী, পানিকাটা, রুদ্রানী, আমড়া ও রানীনগর এলাকার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ঢুকে পাক বাহিনীকে চতুর্মুখী আক্রমণ করে। মিত্রবাহিনীর হাতে নিশ্চিত পরাজয় জেনে পাক হানাদার বাহিনী ফুলবাড়ী শহরে প্রবেশ ঠেকাতে বিকাল সাড়ে ৩টায় ছোট যমুনার ওপর লোহার ব্রিজটির পূর্বাংশ ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়। ব্রিজ ধ্বংসের কারণে মিত্রবাহিনী ফুলবাড়ী শহরে প্রবেশ করতে বিলম্ব হওয়ার সুযোগে অবাঙালিরা বিশেষ ট্রেনে করে ফুলবাড়ী থেকে সৈয়দপুর চলে যায়। ট্রেনটি ধ্বংসের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি মর্টারশেল নিক্ষেপ করলেও তা ব্যর্থ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের ওই সময় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ২০ নম্বর ব্রিজটি উড়িয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু নানা কারণে সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। তবে ৪ ডিসেম্বর ফুলবাড়ী ত্যাগ করে চলে যায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী। এ কারণে ৪ ডিসেম্বর ফুলবাড়ী মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডিপুটি কমান্ডার এছার উদ্দিন বলেন, ‘এপ্রিলের ২ তারিখে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ফুলবাড়ী আক্রমণ শুরু করে পুরো ফুলবাড়ীকে নিয়ন্ত্রণ করে নেয়। হানাদাররা দীর্ঘদিন অত্যাচার নির্যাতন করে। পরে সর্বশেষ ডিসেম্বরের ৪ তারিখ ফুলবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে হানাদার বাহিনীর বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়। কিন্তু যুদ্ধে টিকতে না পেরে এবং পরাজয় নিশ্চিত জেনে হানাদার বাহিনী ফুলবাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যায়।

কামালপুর: ৪ ডিসেম্বর জামালপুরের ধানুয়া কামালপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্ত হয় কামালপুর। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় ঘেঁষা জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর যুদ্ধের শুরুতেই হানাদার বাহিনী গড়ে তোলে শক্তিশালী ঘাঁটি। মুক্তিযুদ্ধে ১১নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের উপর্যুপরি আক্রমণে একাত্তরের এদিনে হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে শত্রুমুক্ত হয় ধানুয়া কামালপুর।

মুক্তিযুদ্ধে ১১নং সেক্টরের ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এই সেক্টরের সদর দফতর ছিল জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জ থানায়। আর সীমান্তের এপারেই ধানুয়া কামালপুর ছিল হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ধানুয়া কামালপুর ঘাঁটি দখল করা ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কামালপুর বিজয়ের লক্ষ্যে একাত্তরের ১১ নভেম্বর হানাদার সেনাদের শক্তিশালী ঘাঁটিতে আক্রমণ শুরু করে মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে হানাদার বাহিনীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ২৩ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় হানাদার বাহিনীর গ্যারিসন অফিসার আহসান মালিকের নেতৃত্বে ১৬২ জন সৈন্যের একটি দল যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসর্মপণ করতে বাধ্য হয়। শত্রুমুক্ত হয় ধানুয়া কামালপুর।

/জেবি/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা