X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অবহেলায় শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফার সমাধি

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৫৩আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৪:৫৯

অবহেলায় পড়ে আছে শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক গোলাম মোস্তাফার কবর

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার নামে প্রকাশ করা হয়েছে ডাক টিকিটও। তবে স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও রাষ্ট্রীয়ভাবে তার সমাধিস্থলটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হলেও কাজ হয়নি।

শহীদের সন্তান অধ্যাপক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, তারা সারাজীবন বঞ্চিতই থেকে গেছেন। শহীদ সন্তান হিসেবে তারা কোথাও কোনও সহায়তা পাননি। তিনি এখন শহীদ সন্তান হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান। সেই সঙ্গে তার বাবার কবরটি রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার দাবি জানান। যাতে নতুন প্রজন্মের কাছে শহীদ বুদ্ধিজীবীর ইতিহাস সমুন্নত রাখা যায় তিনি এ দাবি জানান।

শহীদের স্ত্রী আনোয়ারা মোস্তফা জানান, স্বামী হারিয়েছি, অনেক কষ্ট করে ছেলেদের মানুষ করেছি। কিন্তু তাদের জন্য সরকারি কোনও সহায়তা পাইনি। এতে কোনও দুঃখ নেই। তবে সমাধীস্থল সংরক্ষণসহ সন্তানদের শহীদ সন্তান হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আশা করেন তিনি।

১৪ ডিসেম্বর এলেই তার সমাধীতে পুষ্পার্ঘ অর্পণের জন্য ভীর পড়ে। সেই সঙ্গে শহীদ সন্তান হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি তার সন্তানরা। এতে তাদের কোনও দুঃখ নেই। তবে শহীদের কবরটি রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়াসহ শহীদ সন্তান হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির আশা করছেন তার স্বজনরা। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি চিঠিতে (পত্র সংখ্যা নং ২০১০-১৫৫(১) মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কে শহীদ কবরটি সংরক্ষণের নিদের্শনা দেওয়া হলেও আজো তা বাস্তবায়িত হয়নি।

’৭১ এর ১৭ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা দুপুরে কয়েকটি জিপ গাড়ি নিয়ে পীরগঞ্জে প্রবেশ করে। প্রথমেই তারা তৎকালীন পীরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. সুজাউদ্দীন আহাম্মেদের পূর্ব চৌরাস্তা ওষুদের দোকানে হানা দেয়। পরে তাকে মারধর করে গাড়িতে তুলে এবং দোকানে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এরপর পূর্ব চৌরাস্তার পাশ থেকে অধ্যাপক গোলাম মোস্তফাকে আটক করা হয়। অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা তখন মুক্তি সংগ্রাম কমিটি গঠন করে তার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। পরে শহরের বিভিন্ন স্থানে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং জব্বার মহাজনসহ বেশ কয়েকজন নীরিহ লোকের ওপর নির্যাতন চালিয়ে তাদের ধরে নিয়ে যায়। ওই দিন বিকালে পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাও পাকা সড়ক লোহাগাড়ার জামালপুর (ভাতারমারি) ফার্ম নামক স্থানে গোলাম মোস্তফাসহ অন্যদের ব্যানয়েট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যার পর লাশ ফেলে রেখে যায়। এ থেকেই শুরু হয় গণহত্যা। জামালপুর (ভাতারমারি) ফার্ম থেকে অধ্যাপক গোলাম মোস্তফার দেহাবশেষ নিয়ে এসে পীরগঞ্জ পৌর শহরের রঘুনাথপুর রেলক্রসিংয়ের পূর্বে সমাহিত করা হয়। সে সময় পীরগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন এ বুদ্ধিজীবী। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে ১৯৯৩ সালে অধ্যাপক গোলম মোস্তফার নামে স্মারক ডাক টিকিট বের করে। ১৯৯১ সালে শহীদের স্ত্রীর পক্ষে পীরগঞ্জ থানার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বায়ক আনোয়ারা মোস্তফার হাতে ক্রেষ্ট তুলে দেন সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে অনারম্বর সম্মাননা দেওয়া হয়। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত স্মৃতি ১৯৭১ এর তৃতীয় খ, অক্সফোর্ড এটলাসসহ বিভিন্ন বইয়ে তাকে নিয়ে বহু প্রবন্ধ ছাপা হয়। শহীদের নামে উপজেলা সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠাগার নির্মাণ হয়েছে। অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেও আজও কোনও সহায়তা পায়নি তার পরিবার। উপজেলা প্রশাসন থেকেও সামান্য সম্মানটুকু পর্যন্ত দেখানো হয়নি এই শহীদ পরিবারকে।

/জেবি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী