মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে রাজশাহীতেও বাড়ছে শীতের তীব্রতা। কনকনে ঠান্ডায় দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত, ছিন্নমূল মানুষ। সেইসঙ্গে শীতজনিত রোগী বাড়ছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা বেলা ১২টায় বেড়ে দাড়ায় ১৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
রাজশাহীতে হঠাৎ করে শীতের তীব্রতা বাড়ায় নিম্নবিত্ত, শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল লোকজন দুর্ভোগে পড়েছেন। শীতের কোনও রকম প্রস্তুতি ছাড়াই শীত জেঁকে বসায় দুর্ভোগে পড়েছে তারা। এখন পর্যন্ত তারা কোনও সাহায্যও পায়নি। নগরীর বিপণিবিতান ও ফুটপাতে শীতবস্ত্রের বেচাকেনা জমে উঠেছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট এলাকার শ্রমজীবী দেওয়ার হোসেন জানান, সকালে ট্রেনে করে শহরে কাজের সন্ধানে আসি। আবার রাতে ফিরতে হয়। ঠান্ডার মধ্যে খুব কষ্ট হয়। কিন্তু জীবিকার সন্ধানে বের না হলে সংসারের খরচ তো চলবে না।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ে আগুন জ্বালিয়ে শ্রমজীবী লোকজনকে শীত নিরারণ করতে দেখা গেছে। এদেরই একজন তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অটোরিকশা চালাই। কিন্তু ঠান্ডায় কাহিল হয়ে গেছি। শীত থেকে বাঁচতে আগুন পোহাচ্ছি।’
রামেক হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, মেডিসিন, শিশু ও চর্ম বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। মেডিসিনের চারটি ইউনিটে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২০০ জন। যাদের বেশিরভাগই জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, হাঁপানিতে আক্রান্ত। শিশু ওয়ার্ডের তিনটি ইউনিটে পাঁচ শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। শিশুরা নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত।
নাটোরে মতিউর রহমান দু’দিন আগে পাঁচ বছরের সন্তানকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি জানান, প্রচণ্ড ঠান্ডায় সন্তানের পাতলা পায়খানা হচ্ছে। দেরি না করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঠান্ডায় অল্পতেই আক্রান্ত হচ্ছে নানান বয়সী মানুষ। অনেকে বাইরের নানান খাবার খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রবীর মোহন জানান,শীতের কারণে বড়-ছোট সবাইকে একটু সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে। ইনফ্লুয়েঞ্জা শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়ার প্রবণতা বাড়ে। বাচ্চাদের মধ্যে হাঁচি-কাশি, জ্বর ও ডায়রিয়ার আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে ঠাণ্ডা না লাগে। বাইরে বের হলে অবশ্যই গরম কাপড় পরতে হবে।
তিনি আরও জানান, হালকা কুসুম গরম পানি খাওয়া ভালো। শীতের কারণে অনেক শাক-সবজি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো এখন বেশি বেশি খেতে হবে। আর কোনোভাবে অসুস্থ হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চলতে হবে। কোনও হাতুড়ে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়া যাবে না।
রামেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. বেলাল উদ্দিন জানান, শীতের কারণে শিশুদের মাঝে নিউমোনিয়া, সর্দি, কাঁশি শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সব অভিভাবকের একটু বাড়তি সচেতনতার সঙ্গে শিশুদের যত্ন নিতে হবে। রোদ উঠলেই বাচ্চাকে বাইরে নিয়ে বের হতে হবে। অনেক ঠান্ডা বাতাস হলে বের হওয়া যাবে না।