X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধাদের মায়েদের ‘রত্নগর্ভা মা’ সম্মাননা প্রদান

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
১১ জানুয়ারি ২০২০, ১১:০৮আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২০, ১১:৩৮

মুক্তিযোদ্ধাদের মায়েদের ‘রত্নগর্ভা মা’ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে

যারা বুকে পাথর বেঁধে আদরের সন্তানদের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। যাদের অনুপ্রেরণায় ও ত্যাগে জাতির সূর্য সন্তানরা হানাদারদের পরাজিত করে দেশ স্বাধীন করেছেন এমন ৪০ জন রত্নগর্ভা মাকে বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন। এসব মায়েরা স্বাধীনতা যুদ্ধে বুকের ধনকে হারিয়ে এখনও বেঁচে আছেন। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর ক্ষণগণনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কে. এম তারিকুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নাঈমুল হাছান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী আব্দুল আলিম খান ওয়ারেশি, পৌরসভার মেয়র মো. তৌহিদুল ইসলাম, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি ইউনিট কমান্ডার ওয়ায়সুল কোরায়সী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সম্মাননা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ৭০ থেকে ১০০ বছর বয়সী মায়েরা একে একে পঞ্চগড় কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার চত্বরে আসেন। জীবনের শেষ মুহূর্তে এমন ভালোবাসা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন রত্নগর্ভা মায়েরা।

জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার সরকারপাড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হকের মা এলতেজা বেগম (৯০) বলেন, ‘জীবনের শেষ সময় ছেলের মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার সম্মান হিসেবে আমাকে সম্মাননা দেওয়ায় আমি গর্বিত।’

জেলার সদর উপজেলার বসুনিয়াপাড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধানের মা নাজমা খাতুন (৯০) জানান, আমাকে না জানিয়েই আমার ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। আমি তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করেছি। পরে শুনি সে মুক্তিযুদ্ধে চলে গেছে। ওর বাবা খুব চিন্তিত ছিলেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য আমার ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ায় মা হিসেবে আমি গর্বিত। আজ জেলা প্রশাসন আমাকে ডেকে সম্মাননা দিয়েছে এজন্য আমি আনন্দিত ও গর্বিত।’ 

বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বকদুরঝুলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা কাশেম আলীর মা সকিনা খাতুন (৮৬) জানান, আমার ছেলে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার অনুপস্থিতিতে আমাকে ডেকে এনে সম্মান জানানো হয়েছে। আমি খুব খুশি।

জেলার সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার সায়খুল ইসলাম জানান, স্বাধীনতার হওয়ার ৪৮ বছর পর জেলা প্রশাসন মুক্তিযোদ্ধাদের মায়েদের রত্নগর্ভা মা হিসেবে সম্মাননা দিচ্ছে। এটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। মায়েদের সম্মাননা মানে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দেওয়া বলেই আমি মনে করি।

অনুষ্ঠানের প্রথমেই জেলার পাঁচ উপজেলা থেকে আসা মায়েদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো ও গায়ে চাঁদর জড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে মায়েদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদসহ উত্তরীয় পরিয়ে দেন অতিথিরা।

এর আগে জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন সংবাদ সম্মেলনে মুজিববর্ষ উপলক্ষে তাদের নেওয়া কর্মসূচি তুলে ধরেন। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে জানো শিরোনামে বঙ্গবন্ধু কর্ণারে রক্ষিত বই নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বুক রিভিউ প্রতিযোগিতা। বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত দুই বাংলার কবিদের কবিতা সঙ্কলন প্রকাশ, পঞ্চগড় পৌরসভার তুলারডাঙ্গা বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় সোনারবাংলা নামে একটি দৃষ্টিনন্দন পার্ক নির্মাণ, যেসব এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিক নেই বিশেষ করে সুবিধা বঞ্ছিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, পাথরভাঙ্গা শ্রমিক, চা শ্রমিক, বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিকের মাধ্যমে বিনামূল্যে অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া, হাফিজাবাদ ইউনিয়নের খালপাড়া গ্রামকে এসডিজি ভিলেজ ঘোষণা, পুর্নবাসনের মাধ্যমে পঞ্চগড় জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা ও মার্চের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুৎতায়ন জেলা ঘোষণা করা। এছাড়াও শতভাগ স্কাউট ঘোষণা, জেলার এক লাখ শিক্ষার্থীকে ‘এক মুজিব লোকান্তরে, লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে’ স্লোগান সম্বলিত এক লাখ ছাতা বিতরণ, বছরব্যাপী জারি, সারি, পালা ও কবিগানসহ সাংস্কৃতিক উৎসবের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বিকেলে সার্কিট হাউস চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে বর্ণাঢ্য র‌্যালি নিয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে ক্ষণগণনার কর্মসূচি বড় পর্দায় প্রদর্শন, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ক্ষণগণনা যন্ত্র উদ্বোধন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন,‘আমার পরিবার একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, আমার ভাই মুক্তিযোদ্ধা, আমার চাচা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। ফলে জন্মের পর থেকে আমার চেতনায় ছিল মুক্তিযুদ্ধ। সেই চেতনা নিয়েই আমি কাজ করছি। আমাদের মায়েরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে হাসিমুখে তার সন্তানকে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন, কোনও মা জানেনই না তার ছেলে মুক্তিযুদ্ধে গেছেন, কোনও মা ছেলেকে পাঠাতে চাননি কেঁদেছেন তারপরও বাঁধা দেননি। আবার কোনও কোনও মা যুদ্ধে গিয়ে শহীদ হয়ে ফিরে আসার পর জেনেছেন। সমগ্র জাতির ইতিহাসে এর চেয়ে বড় ত্যাগ আর নেই। সেই ত্যাগী মায়েদের সম্মাননা জানানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মুজিববর্ষ ঘিরে আমরা অনেক শুভ উদ্যোগ নিয়েছি। সেই চিন্তা থেকে আমরা এই রত্নগর্ভা মায়েদেরও সম্মাননার আয়োজন করেছি।

 

/জেবি/
সম্পর্কিত
ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরার ৬ উপজেলা, প্রস্তুত ৩৬৪টি ঘর
‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে’
রাহমানের কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’, ভিডিও করলেন মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
দক্ষ বিচার বিভাগ গঠনে বিশ্বমানের জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি প্রয়োজন: আইনমন্ত্রী
দক্ষ বিচার বিভাগ গঠনে বিশ্বমানের জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি প্রয়োজন: আইনমন্ত্রী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দুই ফুটবলার
ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দুই ফুটবলার
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
সর্বাধিক পঠিত
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?