X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘ড. জোহার আত্মদান বঙ্গবন্ধুর হৃদয়কে স্পর্শ করে’

দুলাল আবদুল্লাহ, রাজশাহী
২৩ জানুয়ারি ২০২০, ১৩:৫১আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:০৩

১৯৭২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদদের স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে মোনাজাত করছেন বঙ্গবন্ধু (ছবি: সংগৃহীত)

১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়র শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহাকে হত্যার পর আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দেশে যে গণঅভ্যুত্থান ঘটে, এর ফলেই পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। ড. জোহার আত্মদান বঙ্গবন্ধুর হৃদয়কে স্পর্শ করে। আমার যতদূর মনে পড়ে- ১৯৬৯ সালের মার্চ মাসের দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ড. জোহার কবর জিয়ারত করতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। বড় ভাই ড. মযহারুল ইসলাম তার ওপেল রেকর্ড গাড়িতে বঙ্গবন্ধুকে ড. জোহার কবরের পাশে নিয়ে যান। আমি যেহেতু ড. জোহা হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী, আমার কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু জানতে চেয়েছিলেন- কীভাবে ড. জোহাকে হত্যা করা হয়েছিল। আমি ড. জোহা হত্যার নৃশংস ঘটনা তার কাছে তুলে ধরেছিলাম এবং আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পারলে ড. জোহা হত্যার বিচার দাবি করেছিলাম।

‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামের এক স্মৃতিচারণায় এসব লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে স্মৃতি থেকে কিছু বলতে বললে তাৎক্ষণিক কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলির অন্যতম এই সদস্য। তিনি বলেছিলেন,‘ শেখ মুজিব যেন-তেন ব্যক্তি নয়, তার সঙ্গে আমার সামান্য স্মৃতি রয়েছে। তবে সেটাও আমাকে ভেবে-চিন্তে বলতে হবে। কারণ বর্তমান সরকারের মেয়াদে তাকে নিয়ে অনেকেই স্মৃতিচারণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন কিংবা করবেন। কিন্তু সেই স্মৃতিচারণ কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য, তা ভাবার বিষয়। তাই প্রস্তুতি নিয়ে আমাকে কথা বলতে হবে।’

ড. আবদুল খালেক

এরপর ১৯ জানুয়ারি তিনি ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে স্মৃতিচারণমূলক লেখা দেন।

সেখানে ড. আবদুল খালেক জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি আছে। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজে অনেকবার তাকে রাজশাহীতে আসতে হয়েছে (বঙ্গবন্ধুর রাজশাহী সফর শীর্ষক প্রবন্ধে আনারুল হক আনা উল্লেখ করেছেন- বঙ্গবন্ধুর স্বেচ্ছায় রাজশাহী এসেছেন সাত বার, কারাগারের ছিলেন একবার)।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয়ের ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য ওই লেখাতে আরও বলেন, উত্তরাধিকারসূত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক। আমাদের পিতা ছিলেন সোহরাওয়ার্দীর আদর্শের অনুসারী, সেই ধারায় পরবর্তীকালে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করেন। আমার বড় ভাই মযহারুল ইসলাম পঞ্চাশের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে এবং ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে শেখ মুজিবের সান্নিধ্য লাভ করেন এবং একপর্যায়ে শেখ মুজিবের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে তাদের বন্ধুত্বের ভিত ক্রমান্বয়ে অত্যন্ত শক্ত হয়ে উঠতে থাকে। বড় ভাই মযহারুল ইসলামের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে।

ড. আবদুল খালেকের সঙ্গে প্রতিবেদক

তিনি আরও জানান, ষাটের দশকে জেনারেল আইয়ুব খানের শাসনকালে শেখ মুজিবকে বেশিরভাগ সময় জেলখানায় কাটাতে হয়েছে। জেলের বাইরে এসে সভা-সমাবেশ করার তেমন সুযোগ ছিল না। জেলের ফাঁকে ফাঁকে যখনই সুযোগ পেয়েছেন, তখনই রাজশাহীতে এসেছেন তিনি। যখনই শেখ মুজিব এসেছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে গেছেন। রাজশাহী শহরের রাজনীতিবিদদের মধ্যে যাদের সাথে শেখ মুজিব বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাদের মধ্যে এ এইচ এম কামারুজ্জামান এবং অ্যাডভোকেট আবদুস ছালামের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে যার সঙ্গে শেখ মুজিবের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল, তিনি বাংলা বিভাগের তৎকারীন অধ্যাপক ড. মযহারুল ইসলাম। যতদূর মনে পড়ে, রাজনৈতিক কোনও কর্মসূচিতে শেখ মুজিব রাজশাহী এলে শহরে অ্যাডভোকেট আবদুস ছালাম এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান সাহেবের বাসায় অবস্থান করতেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শেখ মুজিব তার নির্ধারিত কর্মসূচি শেষ করে যতটুকু সময় পেতেন, সেসময় তিনি মূলত ড. মযহারুল ইসলামের বাসায় কাটাতেন। প্রফেসর মযহারুল ইসলামের ছিল একটি ওপেল রেকর্ড গাড়ি। সেকালে রাজশাহীতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল সীমিত। বঙ্গবন্ধু রাজশাহীতে এলে ড. মযহারুল ইসলামের গাড়িটি সার্বক্ষণিক তার চলাফেরার কাজে নিয়োজিত থাকতো। মযহারুল ইসলাম নিজে গাড়ি চালাতেন। বঙ্গবন্ধু তার বামপাশের সিটে বসতেন। প্রফেসর মযহারুল ইসলাম আমার অগ্রজ, কাজেই বঙ্গবন্ধু যে সময়টুকু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং ভাইয়ের বাসায় কাটাতেন, আমি খুব কাছ থেকে তাকে দেখবার সুযোগ পেতাম।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি জানান, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার কিছু দিনের মধ্যেই যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. মযহারুল ইসলামকে উপাচার্য ভবন থেকে রাজশাহীর জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়, সেসময় আমি তার পাশেই ছিলাম। তার বাসভবনের লাইব্রেরি থেকে তার লেখা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’ গ্রন্থটি লুকিয়ে সরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন আমার সহধর্মিনী অধ্যাপক রাশেদা খালেক। গ্রন্থটি এখনও আমরা সযত্নে সংরক্ষিত রেখেছি। সময়ের আবর্তনে এখন আওয়ামী লীগ দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায়। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। দেশে-বিদেশে আওয়ামী লীগের পক্ষে এখন সুবাতাস বইছে। বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে অসংখ্য গ্রন্থ রচিত হচ্ছে। কিন্তু এক সময় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বই লেখার অপরাধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলামকে জেল খাটতে হয়েছে, সেকথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। ১৯৭৪ সালে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’ গ্রন্থটি রচনা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলাম একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক বলেন, ‘তার আদর্শকে হৃদয় ধারণ করে সোনার বাংলা গড়তে হবে। আমি আশাবাদী, নতুন প্রজন্ম তা ধারণ করে সোনার বাংলা গড়তে ভূমিকা রাখবে।’

 

 

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সীমান্তে কোনও ধরনের হত্যাকাণ্ড চায় না বাংলাদেশ
সীমান্তে কোনও ধরনের হত্যাকাণ্ড চায় না বাংলাদেশ
দুর্নীতির মামলায় মেজর মান্নান কারাগারে
দুর্নীতির মামলায় মেজর মান্নান কারাগারে
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত: সাকিব
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত: সাকিব
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’
বিএনপির নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’