পছন্দের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় মা মাহমুদা বেগমকে (৪৫) পরিকল্পনা মোতাবেক হত্যা করে মেয়ে জুলেখা আক্তার জ্যোতি। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল প্রায় ১০টার দিকে মানিকগঞ্জ শহরের দক্ষিণ সেওতা এলাকায় নিজ বাড়িতে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় তাকে। এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় জ্যোতির সঙ্গে কথিত প্রেমিক নাঈম ইসলাম ও তার তিন সহযোগী। আটক জ্যোতি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা জানায়। সোমবার বিকেলে মানিকগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল আদালতে এই জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
নিজের মাকে হত্যা করতে খুনিদের ভাড়া করা হয় দেড় লাখ টাকায়। এরমধ্যে জ্যোতি তার স্বর্ণালংকার এবং নগদ ১৬ হাজার টাকা দিয়ে প্রাথমিক চুক্তি করে। কথা হয় হত্যার পর বাকি টাকা পরিশোধ করবে। রাতেই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পরিকল্পনা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। বুধবার সকালে জ্যোতির বাবা জহিরুল ইসলাম আলিয়ার হাঁটতে বাড়ির বাইরে যায়। এই সুযোগে গলা টিপে হত্যা করা হয় জ্যোতির মা মাহমুদা বেগমকে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মানিকগঞ্জ সদর থানার সাব-ইন্সপেক্টর শামীম আল মামুন জানান, মাহমুদা বেগমকে নিজ ঘরে খাটের ওপর লেপ দিয়ে চেপে শ্বাসরোধে হত্যার পর জ্যোতিকে হাত, পা, মুখ বেঁধে মাকে হত্যার নাটক সাজায় তারা। কথাবার্তায় অসংলগ্ন হওয়ায় বুধবার সকালে হত্যাকাণ্ডের সময় বাড়িতে থাকা নিহতের একমাত্র মেয়ে জ্যোতিকে জিজ্ঞাসাবদের জন্য ওই দিনই থানায় ডেকে নেন তারা। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে সে। বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবার বিকেলে তাকে মানিকগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল আদালতে পাঠানো হয়। পরে তার তথ্যের ভিত্তিতে আটক করা হয় প্রেমিক নাঈম ও তার বন্ধু রাকিবকে। অন্য দুজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। জ্যোতির চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার বিকালে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
মামলার ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, জ্যোতির সঙ্গে মোবাইলে ফোনে ৮ মাস আগে থেকে ভোলা জেলার নির্মাণশ্রমিক নাঈমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু তার সঙ্গে বিয়ে দিতে নারাজ ছিলেন মা। এজন্য তিন মাস আগে জ্যোতি ও নাইম মাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যাকাণ্ডের পর শুক্রবার নিহতের স্বামী জহিরুল ইসলাম আলিয়ার বাদী হয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় মেয়ে জ্যোতি আক্তার, তার প্রেমিক নাঈম ইসলাম এবং তার সহযোগী রাকিব ও অন্য দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।