X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকির মুখে সাড়ে চারশ’ কোটি টাকার ব্লক ও বাঁধ

ভোলা প্রতিনিধি
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:২০আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:৩৯

মেঘনায় বালু তোলার দৃশ্য

ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার ভাঙনকবলিত মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণে সিসি ব্লক ও বেড়ি বাঁধের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিন্তু একই এলকায় নদী থেকে অবৈধভাবে  ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। ফলে নদীর ভাঙন ঠেকাতে সরকারের সাড়ে চারশ’ কোটি টাকার সিসি ব্লক ও বেড়ি বাঁধের কাজ হুমকির মুখে পড়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত তিন বছর ধরে এই এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল অভৈধভাবে বালু তুলছে। ফলে মেঘনার ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এলাকার লোকজন, এমনকি পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কোস্টগার্ড একাধিকবার বালু তুলতে বাঁধা দিলেও কোনও লাভ হয়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর তথ্যমতে, তজুমদ্দিন উপজেলার চৌমহনী থেকে কেয়ামুল্যাহ পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার মেঘনার তীর ও স্লপ (বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঢাল) সংরক্ষণকাজ করা হচ্ছে। এখানে প্রায় ৪০ লাখ সিসি ব্লক ফেলা হবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৪৪৯ কোটি টাকা। কাজটি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শুরু হয়েছে। এখনও চলমান আছে।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি)  তজুমদ্দিন উপজেলার স্লুইসগেট মাছঘাট এলাকা  ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ভাঙনকবলিত এলাকায় বেড়ি বাঁধ ও ব্লক তৈরির কাজ চলছে। এরই পাশে বন বিভাগের শশীগঞ্জ বিট অফিস থেকে শুরু করে স্লুইসগেট পর্যন্ত একাধিক ড্রেজার বসিয়ে পাইপ দিয়ে মেঘনা নদী থেকে বালু তুলে পুকুর, বিল, কৃষিজমি প্রভৃতি ভরাট করা হচ্ছে। আবার কোনও কোনও জায়গায় বালু জমা করে রাখা হচ্ছে বিক্রি করার জন্য।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার গুড়িন্দা থেকে লঞ্চঘাট হয়ে দক্ষিণ দিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকা ভাঙনের মুখে রয়েছে। গত ২-৩ বছর ধরে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্লুইসগেট ও চৌমহনী লঞ্চঘাট নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নতুন স্থানে লঞ্চঘাট (পন্টুন) বসানো হলেও ভাঙনের কারণে তা বাঁকা হয়ে আছে। ভাঙনের কারণে কয়েকবার সরানো হয়েছে স্লুইসগেট ও চৌমহনী মাছঘাট। যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা ও মনপুরার লঞ্চে ওঠানামা করছেন।

একাধিক ব্যক্তি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তীর সংরক্ষণ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে এক দিকে ভাঙনের মুখ থেকে বালু তোলা হয়েছে। আরেক দিকে ব্লক ফেলে তীর সংরক্ষণের কাজ চলছে। এতে করে ভাঙন বন্ধ না হয়ে উল্টো বাড়ছে।

তজুমদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. ছালেম মাতাব্বর ও মো. সবুজের বিরুদ্ধে বালু তোলার অভিযোগ স্থানীয়দের।

নদী ভাঙনের শিকার একাধিক এলাকাবাসী বলেন, ভাঙন এলাকার পাশের মেঘনা থেকে মো. ছালেম মাতাব্বর ওরফে বালু সালাম নামের এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ২০১৬ সাল থেকে বালু তুলছেন। এতে করে মেঘনার ভাঙন তীব্র হচ্ছে। প্রতিদিন মেঘনা থেকে অপরিকল্পিত ২০-২৫টি কার্গো জাহাজ দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। বিগত সময়ে মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জের ড্রেজার ভাড়া আনলেও বর্তমানে ভোলার মালিকদের নিজস্ব ড্রেজার আছে। এগুলোর লাইসেন্স নেই।

স্লুইসগেট মাছঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে নদীর ভাঙন তীব্র হচ্ছে। বর্ষায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তজুমদ্দিনবাসী বর্ষার জোয়ারে প্লাবিত হয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ে। এখন শীতেও নদী ভাঙছে।’

বালু রাখার স্থান

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সালাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তাকে নদীর তীর থেকে বালু তুলতে নিষেধ করেছি। নদীর মধ্যে যে ডুবোচর আছে, সেখান থেকে কাটতে বলেছি। কারণ ডুবোচরের কারণে তীর ভাঙছে।’

তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আশ্রাফুল ইসলাম জানান, তিনি তজুমদ্দিনে আসার পরে বালু তোলা বন্ধ করেছেন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তীর সংরক্ষণ কাজের জন্য কিছু বালু তোলা হয়েছে। সেটি তোলা শেষ হওয়ার পরে আবার যদি বালু তোলা হয়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর ভোলা বন্দরের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘চরফ্যাশন-লালমোহন-মনপুরা-তজুমদ্দিন-বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান-ভোলা-ঢাকা নৌপথে মেঘনা নদীতে ১৫টির মতো লঞ্চঘাট রয়েছে। মেঘনায় অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলার কারণে ভাঙন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে মেঘনার তীরে সব কটি লঞ্চঘাট বারবার বিকল হচ্ছে।’

বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজা খন্দকার বলেন, ‘অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা সাধারণত যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করছে। এ কারণে ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ আছে। বিআইডব্লিউটিএ’র খনন বিভাগ নদীর ডুবোচর কাটে সমান (লেবেল) করে । এতে নদীর নাব্যতা ফিরে আসে। আর বালু উত্তোলনকারীরা গভীর গর্ত করে বালু তোলে। গর্ত করার কারণে চারদিক থেকে ভেঙে আবার গর্ত ভরাট হয়। এতে বিপর্যয় দেখা দেয়।’

অভিযুক্ত মো. ছালেম মাতাব্বরের ছেলে নুরে আলম জানান, তারা মেঘনা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছেন না, কার্গো থেকে মোটা দানার বালু তুলছেন।

মো. সবুজও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, মেঘনা থেকে চিকন দানার ভিটি বালু তোলা হয়। তিনি মুন্সিগঞ্জের টোক (বড় দানা) বালুর ব্যবসা করেন।

ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, ‘ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ। গত রবিবার ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি এলাকার মেঘনায় অভিযান চালিয়ে কয়েক জাহাজ বালু জব্দসহ  দুজনকে দুই বছরের জেল ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং তা অনাদায়ে তিন মাসের জেল দেওয়া হয়েছে। তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

 

 

 

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিয়েবাড়ির খাসির মাংস খেয়ে ১৬ জন হাসপাতালে
বিয়েবাড়ির খাসির মাংস খেয়ে ১৬ জন হাসপাতালে
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি