করোনা নিয়ে সারাদেশে আতঙ্ক আর উদ্বেগ থাকলেও তার লেশ মাত্র নেই খুলনায় পাড়া মহল্লার চায়ের দোকানের আড্ডায়। যুবক থেকে বৃদ্ধ সবাই যোগ দিচ্ছেন আড্ডায়। মহানগরীর প্রধান রাস্তাঘাট জনশূন্য থাকলেও মহল্লায় তেমনটা নয়। পুলিশের টহল গাড়ি দেখলে সবাই আড়ালে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর যা তাই। তবে প্রশাসন বলছে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শিবাবাড়ী, নিউ মার্কেট, ময়লাপোতা মোড়, সাতরাস্তা মোড়, ডাকবাংলো এলাকা, সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল, গোবরচাকা, শাহ বাড়ি, পল্লীমঙ্গল, খলিল চেম্বার, খালিশপুর মোড়, রূপসা ট্রাফিক মোড়ে লোক সমাগম দেখা গেছে। কিছু কিছু জায়গায় পুলিশ দোকানে যাতায়াত ও বেচা-বিক্রির সময় দূরত্ব মেনে চলার জন্য ছক কেটে দিয়েছে। সিটি করপোরেশন রাস্তায় জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি ছিটিয়েছে। এছাড়াও অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিরা মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করছেন। করোনা প্রতিরোধে মানুষকে ঘর থাকতে উদ্বুদ্ধ করতে প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘মানুষ নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র কিনতে বের হতে পারে। তবে আমরা তাদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার জন্য উৎসাহিত করছি। প্রতিটি থানা এলাকায় তিন ফুট দূরত্ব মেনে বেচা-বিক্রি করতে নির্দেশনা দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘লোকসমাগম যেন না হয় সে ব্যাপারে সবাইকে সর্তক করেছি। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবীরা সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে এগিয়ে আসা উচিত।’
ময়লাপোতা মোড় এলাকার ব্যবসায়ী কাশেম হোসেন বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক বন্ধ রাখার কথা থাকলেও রুটি-রুজির জন্য খোলা রাখতে হয়। তবে টহলের গাড়ি আসার অবস্থা টের পেলেই সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শেখপাড়া মোড় এলাকায় র্যাবের টহল গাড়ি দেখে দৌড় দেওয়া জামশেদ হোসেন বলেন, মোড়ের ওপর এমনি প্রায় সময়ই জমজমাট থাকে। তবে আগের তুলনায় অনেক কম। দোকান-পাটও পুরোপুরি বন্ধ করা হয় না। টহল গাড়ি দেখলেই তাড়াহুড়ো করে বন্ধ করে সবাই। এখনও পুরোপুরি কেউ সচেতন হয়নি।
সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা ছমিরন খাতুন বলেন, সরকারি নির্দেশনার পরেও অনেক এলাকায় রাত ১২টার পরে দোকান খোলা রাখে। তাদের সন্তানেরা আড্ডা দিয়ে এখনও গভীর রাতে বাসায় ফেরে।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমতাজুল হক বলেন, ‘নিউ মার্কেট, সোনাডাঙ্গাসহ বেশ কয়েক জায়গায় আমরা ফার্মেসি ও মুদি দোকানে তিন ফুট দূরুত্ব মেনে ছক এঁকে নির্দেশনা মানতে বলেছি। থানা এলাকায় কোনও চায়ের দোকানে আড্ডা দেখা মাত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নগরীতে আমাদের নিয়মিত টহল চলছে। লোক দেখামাত্রই তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাব্বিরুল আলম বলেন, ‘খালিশপুর এলাকায় মিল থাকায় এখানে লোকসমাগম থাকে। আমরা তাদের দেখা মাত্রই ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করছি। সেইসঙ্গে চায়ের দোকান দেখামাত্রই আমরা তাদের বুঝিয়ে বাসায় যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি। কিছু মানুষ বাইরে বের হলেও অধিকাংশ মানুষ বাড়িতে থাকছে।’
খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান খান বলেন, ‘শনিবার দিনভর আমরা সেনাবাহিনীর টিম নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছি। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অভিযান হয়েছে নিউ মার্কেট, জোড়াগেট হয়ে ফুলতলা এলাকায়। আর বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অভিযান হয়েছে রূপসা মোড় থেকে রূপসা সেতু হয়ে জিরো পয়েন্ট, বয়রা মোড় পর্যন্ত। এসব এলাকায় অভিযানকালে বেশ কিছু মোড়ে ও স্থানে মানুষের জটলা দেখা যায়। আমরা তাদেরকে বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়েছি।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যেন মানুষ বাসায় থাকে। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে রয়েছেন। তারাও চেষ্টা করছে। শুক্রবার বিকালে পুলিশ সুপারসহ আমি নিজেই বিভিন্ন স্থানে ভিজিট করেছি। মানুষকে সচেতন থাকার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে। তারপরও যারা সচেতন না হবে তাদের জন্য আমরা আইনি ব্যবস্থা নেবো।’