X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনা সংকটে বেনাপোলে বেকার হাজার শ্রমিক

সেলিম রেজা, বেনাপোল
০২ এপ্রিল ২০২০, ১৭:০৭আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২০, ১৮:০৫

বেনাপোল স্থলবন্দর বাংলাদেশ ও ভারত করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। তারই জেরে বন্দর এলাকার অর্থনীতি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে বেনাপোল স্থলবন্দর। আর এর প্রভাব পড়েছে কয়েক হাজার শ্রমিকের ওপর। যেহেতু এই এলাকায় কোনও শিল্প-কারখানা নেই তাই বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের ওপরই নির্ভরশীল শ্রমিকেরা।

শুধু শ্রমিক নয় বন্দর ও কাস্টমস সংশ্লিষ্ট কয়েকশ এনজিও কর্মীও একই অবস্থায় পড়েছে। ভারত দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সিংহভাগ পণ্য আসে এই বন্দর দিয়ে। আপাতত বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে যুক্ত সীমান্ত এলাকার মানুষজন করোনার চেয়ে বেশি রুটি-রুজি তীব্র সংকটের ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

বাংলাদেশের সাধারণ ছুটি ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এরপর ভারতে ২১ দিনের লকডাউন ২৩ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে যা ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। সেই হিসেবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে আমদানি-রফতানি। পণ্যবাহী ট্রাকের চালক ও হেলপারদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস যাতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে বিস্তার ঘটতে না পারে সে লক্ষ্যে বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে সব ধরনের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ করা হয়েছে।

গত ২২ মার্চ ভারতে কারফিউ থাকায় বন্ধ থাকে আমদানি-রফতানি। এরপর ২৩ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করে ভারত। এর মধ্যে ২৩ মার্চ রাতে এক ঘোষণায় ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। যা চলবে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। সেই হিসেবে ২৪ দিন বন্ধ থাকতে পারে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। এর ফলে উভয় সীমান্তে আটকা পড়ে আছে শতশত পণ্যবোঝাই ট্রাক। যার অধিকাংশই বাংলাদেশের শতভাগ রফতানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামাল। যেগুলো বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে।

গত ২২ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে কোনও পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেনি। বেনাপোল বন্দর দিয়ে কোনও পণ্য নিয়ে ট্রাক পেট্রাপোল বন্দরে যায়নি। আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও এখন পর্যন্ত তার বড় কোনও প্রভাব পড়েনি। তবে আর কয়েকদিন বন্ধ থাকলে শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যহতের পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য-সামগ্রীর মূল্য বাড়ারও শঙ্কা রয়েছে ব্যবসায়ীদের।

এদিকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে লকডাউনের সময় বৃদ্ধি করা হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে সে ক্ষেত্রে আমদানি-রফতানি সাময়িকভাবে চালু হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

এরই মধ্যে গত ৩০ মার্চ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ছুটিকালীন সময়ে আমদানিকৃত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, জরুরি চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবা সামগ্রী শুল্কায়নসহ খালাস প্রদান এবং রফতানি ও ইপিজেডের কার্যক্রম সচল রাখার জন্য সকল কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশনসমূহে সীমিত আকারে দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য সবুজ মিয়া বলেন, আমরা এখানে কাজ করে যে টাকা পাই তাতে ভালোভাবে আমাদের সংসার চলে যায়। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে সকল প্রকার লোড-আনলোড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা শ্রমিকসহ সকলে অসুবিধায় পড়েছি। কীভাবে সংসার চলবে জানি না। কোনো উপার্জন নেই এই মুহূর্তে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দু’দেশের সীমান্ত বাণিজ্য ২২ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। সেই সঙ্গে কাস্টমস ও বন্দরে কোনও কাজ হচ্ছে না। ফলে আমাদের শত শত সদস্য খুব কষ্টের মধ্যে দিন পার করছে।

ভারতের পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাজেন্ট স্টাফ ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, করোনার বিস্তার ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সকল রকম আমদানি-রফতানিসহ সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে স্থলবন্দর এলাকার অর্থনীতি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।

বেনাপোল আমদানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক আনু জানান, এখনই ক্ষতির মুখ দেখতে শুরু করেছে ভারত-বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রফতানিকারকেরা। ক্ষতি কাটিয়ে নিতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বড় ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে লকডাউন ঘোষণা করায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বাণিজ্য বন্ধ থাকলে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও বেড়ে যাবে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, প্রতিদিন পেট্রাপোল বন্দর থেকে তিনশ থেকে চারশ ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। আবার বেনাপোল দিয়ে দেড়শ’ থেকে আড়াইশ’ ট্রাক রফতানি পণ্য চালান যায় ভারতে। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দুই দেশের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমদানি-রফতানির পাশাপাশি বন্দরের সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা জানান, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ চালু হবে সেটা বলা যাচ্ছে না।

/এফএএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
বাস-সিএনজির সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত
বাস-সিএনজির সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নিহত
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’
বিএনপির নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’