X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লকডাউন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ থেকে আসছে মানুষ, ঝুঁকিতে ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
১০ এপ্রিল ২০২০, ০১:৪৮আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২০, ০২:০০

 

লকডাউনের পরও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন যানবাহনে চেপে ঠাকুরগাঁওয়ে যাচ্ছে মানুষ।

করোনার কারণে লকডাউনকৃত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাজের খোঁজে যাওয়া মানুষ দলে দলে এখন ঠাকুরগাঁও ফিরছেন। এর ফলে আবারও নতুন করে ঝুঁকির মুখে পড়ে গেছেন জেলাবাসী। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও এখন এমন আশঙ্কা করছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বিকল্প যানবাহনে গাদাগাদি করে তারা ফিরছেন। বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে এভাবে ১৪টি গাড়িতে করে আসা ৯০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এসময় অনেকে পালিয়েও যায়। তার আগের রাতেই জেলা শহরে ঢোকার মুখ সত্যপীর সেতুতে আটক হয়েছেন প্রাইভেট কারসহ ৫ আরোহী।

প্রশাসন জানিয়েছে, তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। নিষেধাজ্ঞার পরেও যাত্রী পরিবহনের কারণে ১৪টি গাড়ির চালককে জরিমানাও করা হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমিত এলাকা থেকে এত মানুষ একসঙ্গে ফিরতে থাকায় স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

পুলিশ জানায়, আটক ব্যক্তিরা ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। তাঁরা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে কাজ করেন। সম্প্রতি এসব এলাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় লকডাউন করে প্রশাসন। এর পরপরই তারা গোপনে এসব এলাকা থেকে বের হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে রওনা হন। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও জেলার সীমানা অতিক্রমের সময় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ ১৪টি যাত্রীবাহী বাস, অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যান ও প্রাইভেট কার আটক করে। এ সময় অনেক যাত্রী পালিয়ে গেলেও ৯০ জনকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। একইভাবে বুধবার গভীর রাতে একটি প্রাইভেট কারসহ ৫ জন আটক হন।

 জানা গেছে, মালবাহী ট্রাক ফেরার সময় সেগুলোতে উঠে যেসব এলাকায় পুলিশের পাহারা সেসব এলাকায় ট্রাকের পেছনের মালবহনের অংশে গাদাগাদি করে শুয়ে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে নিজেদের জেলায় ফেরেন এদের অনেকেই। আবার জেলা শহরে ঢোকার আগেই অনেকে নেমে ভেগে যান। 

কয়েকজনকে আটকের পর কোয়ারেন্টিনের নেওয়ার জন্য দাঁড় করিয়ে রেখেছে পুলিশ।

আটকের পর পুলিশ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুনকে খবর দেয়। তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করে প্রত্যেক গাড়ির চালককে ৫০০০ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পণ্য উন্নয়ন অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নেওয়া হয়। আর বুধবারের ৫ জনকে নমুনা সংগ্রহের জন্য সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে নিয়ে তারপর হোম কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশ দেন প্রশাসন। সেখানে সদর হাসপাতালের সিনিয়র মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. তোজাম্মেল হকের তত্ত্বাবধানে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে রংপুর মেডিক্যালে পাঠানো হয়, পরবর্তীতে যদিও তাদের কোভিড-১৯ নেগেটিভ ফলাফল আসে।

এব্যাপারে গড়েয়া এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম শাহ বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমিত এলাকা থেকে দলে দলে মানুষ যেভাবে এলাকায় আসছেন, তাতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছি।

ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু বক্কর সিদ্দিক এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমরা জানছি কেবল তাদের কথা যারা পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে ধরা পড়ছে। আমার ধারণা, প্রশাসনের পাহারার ফাঁক গলিয়ে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ করোনা আক্রান্ত এলাকা থেকে জেলায় ঢুকছেন। প্রশাসনের হাতে ধরা পড়া সংখ্যাটাও নেহাত কম না, অনেকে পালিয়েও গেছেন। যারা পলাতক তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনেও নেওয়া যাচ্ছে না। এতে করে করোনার ঝুঁকিতে পড়ছে আমাদের জেলা।

বেশ কয়েকজনকে আটকের পর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, সরকার গণপরিবহন বন্ধ করেছে। এ অবস্থায় কোনও যানবাহনে যাত্রী বহন করার সুযোগ নেই। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিভিন্ন যানে যাত্রী বহন করায় ১৪টি যানবাহন আটক করা হয়। এসব যানে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ অন্তত দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। অনেকেই পালিয়ে যান।

ঠাকুরগাঁওয়ের আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নাদিরুল আজিজ চপল বলেন, আটক ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। এরপর তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।

ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, আটক করা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার সুযোগ থাকছে, তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষা, হোম কোয়ারেন্টাইন, প্রয়োজনে আইসোলেশন। কিন্তু পালিয়ে যাওয়া বা চুরি করে ঢোকা মানুষের ছড়িয়ে পড়াটা করোনার ব্যাপারে আরও বেশি বিপজ্জনক। তাই সবার নিরাপদের জন্য এভাবে আইন অমান্যকারীদের ব্যাপারে পুলিশ, প্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিভাগের হটলাইনে তথ্য জানাতে সবাইকে অনুরোধ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকা অবস্থায় কিভাবে এই গাড়িগুলো বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে এই জেলা পর্যন্ত আসলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ অবস্থায় গণপরিবহন ঠাকুরগাঁয়ে আসলে বা জেলা থেকে বাইরে গেলে পরিবহনের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর যুবরাজ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর যুবরাজ
অবশেষে মুক্তির বার্তা
অবশেষে মুক্তির বার্তা
এমপিপুত্র প্রার্থী হওয়ায় ‘আগুন জ্বলছে’ সেলিম প্রধানের গায়ে
এমপিপুত্র প্রার্থী হওয়ায় ‘আগুন জ্বলছে’ সেলিম প্রধানের গায়ে
ব্রাজিলিয়ানের গোলে আবাহনীতে স্বস্তি
ব্রাজিলিয়ানের গোলে আবাহনীতে স্বস্তি
সর্বাধিক পঠিত
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন