X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

এন-৯৫ মাস্ক চেয়ে ফেসবুকে চিকিৎসকদের স্ট্যাটাস

সুমন সিকদার, বরগুনা
১৬ এপ্রিল ২০২০, ২৩:০৫আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২০, ২৩:১৩

ডা. কামরুল আজাদের স্ট্যাটাস করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) এবং এন-৯৫ মাস্ক অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের জন্য এই মাস্কের ব্যবস্থা নেই। বিষয়টির গুরুত্ব উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুল আজাদ।

বুধবার (১৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মাস্কের অভাব তুলে ধরে একটি পোস্ট দেন এই চিকিৎসক। এর পর বিষয়টি নিয়ে বরগুনার বিভিন্ন মহলে আলোচনার সৃষ্টি হয়। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘আমাকে এন-৯৫ মাস্ক দিন অথবা মৃত্যুর মাধ্যমে পালাতে দিন। লোক দেখানো বাজারের ব্যাগের কাপড় দিয়ে তৈরি গাউন দেওয়া বন্ধ করুন।’

ডা. কামরুল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত এবং এর উপসর্গ দেখা দেওয়া রোগীদের চিকিৎসা ও নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে বরগুনায় একমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক। তিনি হাসপাতালটিতে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

এছাড়া, এন-৯৫ মাস্কের গুরুত্ব তুলে ধরে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বরগুনা সদর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সোহরাব উদ্দীন। তিনি তার স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘এন-৯৫ মাস্ক ছাড়া চিকিৎসা সেবা প্রদান কিংবা স্যাম্পল সংগ্রহ করা সাংঘাতিক ঝুঁকিপূর্ণ।’

ডা. সোহরাব উদ্দীনের স্ট্যাটাস ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসটি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. কামরুল আজাদ বলেন, ‘বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে এই মুহূর্তে তিনজন করোনা পজিটিভ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত সন্দেহে চিকিৎসাধীন আছেন আরও ২৩ জন। এসব রোগীর চিকিৎসা থেকে শুরু করে নমুনা সংগ্রহ পর্যন্ত তাদের সংস্পর্শে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এন-৯৫ মাস্ক ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কেননা এন-৯৫ মাস্কই পারে কেবল শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করতে। কিন্তু আমাদের এন-৯৫ মাস্ক নেই। এজন্য আমিসহ আমার পুরো টিম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। এই ঝুঁকি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবুও আমরা এন-৯৫ মাস্ক পাচ্ছি না।’

তিনি বলেন, ‘আইসোলেশনে যারা দায়িত্ব পালন করেন, তারা সাত দিন দায়িত্ব পালন শেষে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকেন। অথচ বরগুনায় চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে আমার কোয়ারেন্টিনে থাকার সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দিতে হয় আমার। তাই আমি যদি সংক্রমিত হই তাহলে আমার কাছে আসা সাধারণ রোগীরাও সংক্রমিত হবেন। এর মাধ্যমে পুরো জেলায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে। তাই বরগুনায় দ্রুত এন-৯৫ মাস্কের সরবরাহ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানাই।’

এ বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘করোনা রোগীদের চিকিৎসক, নার্স, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জামাদি পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা সরঞ্জাম এন-৯৫ মাস্কও। তাই প্রতিদিন তারা মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে তাদের কাজ করে যাচ্ছেন। সাধারণ নার্স এবং চিকিৎসকদের জন্যও পর্যাপ্ত অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করেও কোনও ফল পাওয়া যায়নি।’

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন শাহীন খান বলেন, ‘আমরা চিকিৎসা যে সুরক্ষা সরঞ্জাম পেয়েছি তাতে এন-৯৫ মাস্ক নেই।  তবে এমন একটি স্ট্যাটাস দেওয়া ওই চিকিৎসকের ঠিক হয়নি। এতে অন্য চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিতে নিরুৎসাহিত হবেন। আমরা এন-৯৫ মাস্ক সরকারের কাছে চেয়েছি। হয়তো শিগগিরই পেয়ে যাবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য এন- ৯৫ মাস্ক সরকারি নির্দেশনায় নেই। আমরা সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে পারবো।’

করোনাভাইরাস প্রতিরাধে গঠিত বরগুনা জেলা কমিটির প্রধান ও জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ‘বরগুনার স্বাস্থ্য বিভাগ এন-৯৫ মাস্কের সংকটের কথা আমাকে কখনও জানায়নি। যদি জানাতো তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি চিকিৎসকদের চাহিদা অনুযায়ী এন-৯৫ মাস্কের ব্যবস্থা করতাম।’ দ্রুতই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। 

/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে যা বললেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ
দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে যা বললেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ
গরমে পুড়ছে খুলনা বিভাগ
গরমে পুড়ছে খুলনা বিভাগ
দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব
দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি