প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় সুনামগঞ্জের হাওরে স্বল্প সময়ে বোরো ধান ঘরে তুলতে পারছেন কৃষক। এরই ধারবাহিকতায় এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকার ও প্রশাসনের উদ্যোগে ধান কাটায় হারভেস্টার ও রিপার মেশিনের ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে হাওর এলাকায় কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর জন্য চলমান ভর্তুকি বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বোরো মৌসুমের শুরুতে তারা ট্র্যাক্টর দিয়ে জমি চাষ করেছেন। সেচ মেশিন দিয়ে জমিতে পানি দিয়েছেন। ধান কাটা ও মাড়াইও করেছেন মেশিন দিয়ে। ফলে কৃষক স্বল্প সময়ে জমির পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে পেরেছেন। তবে ধান কাটা, মাড়াই ও চাষের মেশিনের স্বল্পতার কারণে বেশি মূল্যে সেবা নিলেও সময় কম লাগায় তারা উপকৃত হয়েছেন।
দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের সিচনী গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, ‘এখন ধান গোলাজাত করার কাজ কম করে হলেও ১৫ দিন এগিয়েছে। আগে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে এবং গরু দিয়ে ধান মাড়াই করতে অনেক সময় লাগতো। এখন একাজগুলো মেশিন দিয়ে করায় সময় সাশ্রয় হয়েছে।’
বাংলাবাজার গ্রামের লোকামান মিয়া বলেন, ‘আগে ৬ বিঘা জমির ধান মাড়াই করতে পুরো ২ দিন সময় লাগতো। এখন ৫-৬ ঘণ্টায় মাড়াই হয়ে যায়।’
ভাটিপাড়া গ্রামের আব্দুল মতিন বলেন, ‘১২ বিঘা জমির ধান শ্রমিক দিয়ে কাটলে ২-৩ দিন লাগতো। এখন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে অর্ধেক দিনে সেই ধান কাটা যায়। এতে খরচ ও সময় সাশ্রয় হয়।’
খাগাউড়া গ্রামের নিখিল তালুকদার বলেন, ‘কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়ানো গেলে হাওর এলাকার কৃষক আরও বেশি উপকৃত হবেন। প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। যেন ছোট-বড়ো মাঝারি সব কৃষক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারেন।’
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজন বলেন, এবছর ফসল কাটার কাজে ধান কাটার মেশিনের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় দেশের সবচেয়ে বেশি বোরো ধান উৎপাদন হয়। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামীতে কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমীর বিশ্বাস বলেন, হাওরের বোরো ধান কাটাকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। ধান কাটার শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে কৃষকদের ধান কাটার মেশিন দেওয়া হয়। ফলে গতবারের চেয়ে এবার হাওরের পাকা ধান কাটতে মেশিনের ব্যবহার বেশি হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি প্রশাসনের সব কর্মকর্তারা বোরো ধান কাটার বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারকি করেছেন। কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহারের সুফল পাচ্ছেন হাওর এলাকার লাখো কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সফর উদ্দিন বলেন, ‘সরকার এবছর হাওরের ধান কাটার জন্য ২২২টি রিপার ও কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন বরাদ্দ দিয়েছে। এগুলো পুরোদমে হাওরে ধান কাটার কাজ করায় হাওরের পাকা ধান কাটা আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে স্থানীয়, উপসি, ও হাইব্রিড জাতের বোরো আবাদ করা হয়েছে। তার মধ্যে হাওরে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ১০৫ হেক্টর ও হাওরের বাইরে আবাদ হয়েছে ৫৮ হাজার হেক্টর। জেলায় মোট ১ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে প্রায় ৬ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। পুরো ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারলে ১৩ লাখ মেট্রিকটন ধান বা ৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৩৩ মেট্রিকটন চাল উৎপাদন হবে। উৎপাদিত ধানের বাজার মূল্য হবে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।