X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যেই সর্বক্ষণ কুমিল্লাবাসীর পাশে জেলা পুলিশ

মাসুদ আলম, কুমিল্লা
২১ মে ২০২০, ১৯:০৮আপডেট : ২১ মে ২০২০, ১৯:২৫

কুমিল্লা জেলা পুলিশের তৎপরতা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে শুরু থেকেই মাঠে রয়েছে পুলিশ। জনসমাগম রোধ এবং মানুষকে ঘরে রাখতে গিয়ে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ১০ জন পুলিশ সদস্য প্রাণ দিয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২৯শ' পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে কুমিল্লা জেলার ১৭ জন ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন। নিজস্ব অর্থায়নে অসহায় মানুষের সহায়তার পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতে বাউল গান প্রচারসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে কুমিল্লা জেলা পুলিশ।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়,  করোনা সংকট মোকাবিলায় শুরু থেকেই জনগণকে সচেতন করতে তারা কাজ করে যাচ্ছে। বিদেশ থেকে আসা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তাসামগ্রী প্রদান, অসহায়, দুস্থ ও পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে।

জানা যায়, গত ১০ এপ্রিল কুমিল্লা লকডাউন ঘোষণার পর থেকে জেলা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় ‘সুলভ মূল্যে ঘরের বাজার’ নামে একটি কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য—চাল, ডাল, তেল, ছোলা, বেসন, লবণ, চিনি, আলু, পেঁয়াজ, বেগুন ইত্যাদি সুলভমূল্যে মানুষের কাছে ট্রাক ও পিকআপে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ কার্যক্রমের একটাই লক্ষ্য যেন বাজারগুলোতে মানুষের ভিড় কমানো সম্ভব হয় এবং সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানো যায়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পুলিশ সদস্যদের নিজস্ব অর্থে জেলার দুই হাজারের বেশি পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলামের উপস্থিতিতে বিতরণের পর জেলার ১৮টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) সহযোগিতায় এবং সার্কেল এসপিদের তদারকিতে অস্বচ্ছ, দিনমজুর ও কর্মহীনদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়। যারা খাদ্য সহায়তার কথা সরাসরি বলতে লজ্জা পান। তারা যেন মোবাইল ফোনে মেসেজের মাধ্যমে জানান এবং সহযোগিতা নেন তারও ব্যবস্থা করা হয়। পরে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি তদন্তের তত্ত্বাবধানে রাতে তাদের বাড়ি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়।

বাউল গানের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করছে জেলা পুলিশ পুলিশের খাদ্য সহায়তা পাওয়া কুমিল্লার টিক্কারচর এলাকার জাকির ও মুন্না বলেন, 'এই দুর্যোগের সময় পুলিশ সদস্যরা খাদ্য সহায়তা নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সর্বপ্রথম পুলিশের কাছ থেকেই খাদ্য সহায়তা পাই। এছাড়া করোনা সংক্রামণ রোধে এলাকার মানুষকে সচেতন করতে পুলিশ সদস্যরা সব সময় কাজ করে যাচ্ছেন।'

নগরীর কাপ্তান বাজার এলাকার সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, 'পুলিশের সহায়তার নাম্বারে মেসেজ ও কল করে রাতে খাবার পেয়েছি। দুর্যোগে যখন আমি ঘরবন্দি, তখন পুলিশ আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। সংক্রমণ রোধে ঘরে থাকতে উৎসাহিত করেছে।'

এ বিষয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল হক জানান, করোনাযুদ্ধ জয়ে এবং এই দুর্যোগ মোকাবিলায় মানুষকে সর্বাধিক সেবা দিয়ে আসছেন পুলিশ সদস্যরা। প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিইন নিশ্চিত করা, জেলা পুলিশের নানা কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন এবং রাতের আঁধারে খাদ্য সহায়তার আবেদন করা ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।’

কুমিল্লার কোতোয়ালি, মনোহরগঞ্জ, লাকসাম, হোমনা, মেঘনা, সদর দক্ষিণ, লালমাই, নাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম, ব্রাহ্মণপাড়া, দাউদকান্দি, চান্দিনা, তিতাস, বরুড়া, বুড়িচং, দেবিদ্বার, বাঙ্গরা, ও মুরাদনগর থানাধীন বিভিন্ন স্থানে গণজমায়েত রোধ, অযথা ঘোরাঘুরি বন্ধ এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে জেলা পুলিশ। এছাড়াও আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে না দেন, সে লক্ষ্যে বাজারগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। মত বিনিময়ের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সতর্কও করা হচ্ছে।’

দায়িত্ব পালনে কুমিল্লা জেলা পুলিশ কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিএসবি মো. আজিম-উল-আহসান বলেন, 'কুমিল্লা জেলা পুলিশের নির্দেশনায় ১৭টি উপজেলার ১৮টি থানার সব পুলিশ সদস্যরা করোনা সংকট মোকাবিলায় এবং লকডাউন নিশ্চিতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। অসহায়দের খাদ্য সহায়তা থেকে শুরু করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণসহ সব ধরনের কাজ করা হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'কুমিল্লায় আক্রান্ত ৩০০ জনের মধ্যে ১৭ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে বরুড়া থানার এক এসআই এবং দেবিদ্বার থানা পুলিশের ১৬ জন সদস্য রয়েছেন। সবাই কুমিল্লা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তদারকিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’

পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম বলেন, 'পুলিশের প্রধান কাজ হলো জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা। এই দু'টি কাজের পাশাপাশি এখন আমরা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।'

তিনি বলেন, 'লকডাউন নিশ্চিতে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ জেলায় কেউ যেন আসা-যাওয়া না করে—এ জন্য সীমান্তবর্তী এলাকার ৩২টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃতদের দাফন-কাফন করছেন পুলিশ সদস্যরা। বাজার নিয়ন্ত্রণসহ গুজব রোধে সব ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে পুলিশ। এছাড়া জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য ব্যতিক্রম একটি আয়োজনের অংশ হিসেবে বাউল গান প্রচার করা হয়। যেখানে বাউল শিল্পীদের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন পুলিশ সদস্যরাও।'

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউনুছ ভূঁইয়া বলেন, 'করোনা যুদ্ধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমার এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন পুলিশ। এ জন্য জেলা পুলিশ সদস্যদের আমরা ধন্যবাদ জানাই। নিজেদের অর্থে অস্বচ্ছল ও গরিবের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিয়ে তারা সাধারণ মানুষের মন জয় করেছেন।'

 

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
মিরপুরে ‘হারল্যান স্টোর’-এর উদ্বোধন করেন নুসরাত ফারিয়া, পণ্য কিনে হতে পারেন লাখপতি
মিরপুরে ‘হারল্যান স্টোর’-এর উদ্বোধন করেন নুসরাত ফারিয়া, পণ্য কিনে হতে পারেন লাখপতি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা