করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এবারের ঈদুল ফিতরের নামাজ মসজিদে আদায়ের নির্দেশনা থাকলেও কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকায় উন্মুক্ত মাঠ ও ঈদগাহে নামাজ আদায় করার খবর পাওয়া গেছে। দুর্গম এসব চরাঞ্চলে প্রতিকূল যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রশাসনের নজরদারির শিথিলতার সুযোগ নিয়ে চরবাসী খোলা মাঠেই ঈদের নামাজ আদায় করেন। এসব জামাতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের পাশাপাশি শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের উপস্থিত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
চিলমারী উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চরশাখাহাতী গ্রামের বাসিন্দা হোসেইন জানান, তাদের গ্রামে ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য ৫টি মাঠ রয়েছে। এরমধ্যে তিনটি মাঠে মসজিদের বাইরে ঈদের নামাজ আদায় হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানা কিংবা হাত ধোয়ার কোনও ব্যবস্থাও ছিল না। ঈদের জামাতে শিশু ও বৃদ্ধরাও উপস্থিত ছিলেন।
হোসেইন বলেন,‘চরাঞ্চলে মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমণ নিয়ে কোনও সচেতনতা নেই। এখানে মাস্ক ব্যবহার কিংবা স্বাস্থ্যবিধির কথা বললে মানুষ উল্টো বিদ্রুপ করে। তাদের (চরবাসীর) ভাষ্য, তারা মাঠে নামাজ আদায় করলে তাদের কিছু হবে না। আল্লাহ তাদের রক্ষা করবেন।’ একাধিক জামাত নয়, মসজিদের বাইরে খোলা মাঠে এক জামাতেই ঈদের নামাজ আদায় হয়েছে বলে জানান তিনি।
চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গয়ছল হক উন্মুক্ত মাঠে ঈদের নামাজ আদায়ের কথা স্বীকার করলেও এক্ষেত্রে দূরত্ব মেনে নামাজ আদায় করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন,‘মাইকে প্রচারণা চালানোর পরও কোনও কোনও জায়গায় মাঠে নামাজ আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে চৌকিদার পাঠিয়ে দিয়ে কাতারে দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
তার অভিযোগ, ‘মানুষ নির্দেশনা মানতে চায় না। এখানকার মানুষের মধ্যে কোনও সচেতনতা নেই।’
এদিকে সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের রলাকাটার চর, ঝুনকার চর, চর ভগবতিপুর, চর কালির আলগার গোয়াইলপুরি, তিনহাজারিসহ বেশিরভাগ চরেই উন্মুক্ত মাঠে ঈদের জামাত আদায় করা হয়েছে বলে জানা গেছে। কাতারে সামাজিক দূরত্ব মানা, মাস্ক ব্যবহার কিংবা স্বাস্থ্যবিধির অন্য কোনও শর্তই এসব জামাতে পালন করা হয়নি। এমনকি নামাজ শেষে কোলাকুলি ও হাত মেলানোর (মুসাফা) ক্ষেত্রেও প্রচলিত ধারায় তা পালন করতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রলাকাটার চরের এক শিক্ষক বলেন,‘চরে কোনও ভাইরাস ভীতি নেই। প্রশাসনের নজরদারি ও প্রচারণার অভাবে এখানকার মানুষ স্বাস্থ্যবিধির কোনও তোয়াক্কা করেন না। আজ ঈদের নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রেও সরকারি কোনও নির্দেশনা মানা হয়নি। চরের সব এলাকাতেই ঈদগাহে এক জামাতেই সব শ্রেণির মানুষের উপস্থিতিতে নামাজ শেষ করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা), কুড়িগ্রামের উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, যথেষ্ট প্রচারণার পরও কিছু কিছু জায়গায় এমনটা ঘটে থাকতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদেরকে কেউ কিছু জানায়নি। ঈদের দিন হওয়ায় দুর্গম চরে তাৎক্ষণিকভাবে যাওয়াও সম্ভব হয় না।’
সংশ্লিষ্ট এলাকার ইমাম ও জনপ্রতিনিধিদের বারবার বলে দেওয়ার পরও এমনটা হওয়ার পেছনে ওই এলাকার মানুষের সচেতনতার অভাব ও কিছুটা গোয়ার্তুমি রয়েছে বলে জানান ইফা উপপরিচালক।
প্রসঙ্গত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, কুড়িগ্রামের তথ্য মতে জেলায় প্রায় চার হাজারেরও বেশি মসজিদে একাধিক জামাতের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করা হয়েছে।