X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

দুবাইয়ের ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা দিতে বলেছিল লিবিয়ার জিম্মিকারীরা

তৌহিদ জামান, যশোর
৩০ মে ২০২০, ১৫:৩৩আপডেট : ৩০ মে ২০২০, ১৫:৪০

রকির মায়ের আহাজারি

বাংলাদেশে অবস্থানকারী পরিবারের পক্ষ থেকে মুক্তিপণের দশ লাখ টাকা দিতে রাজি হলেও শেষ রক্ষা হয়নি লিবিয়ার মিজদাহে জিম্মি হয়ে আটক থাকা রাকিবুল ইসলাম রকির। মানবপাচারকারীদের গুলিতে নিহত অপর ২৫ বাংলাদেশির মতো তাকেও জীবন দিতে হয়েছে। এই মৃত্যুর খবরে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার খাটবাড়িয়া গ্রামে শোকের মাতম শুরু হয়েছে নিহতের পরিবারে।

রকিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি টিন শেডের ঘরের সামনে উঠোনে হাউমাউ করে কাঁদছেন তার মা মাহিরুন নেছা। তিনি বলেন, 'ভিটেবাড়ি বেঁচে ১০ লাখ মুক্তিপণ দিয়ে রাস্তাতেই থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমার সোনারে বাঁচতে দিলো না।' পাশেই একটি চেয়ারে রকির বাবাকে বসিয়ে রেখেছেন কয়েকজন। প্রিয় সন্তান হারিয়ে শোকে পাথর তিনি। কাঁদতেও যেন ভুলে গেছেন। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন।

জানা যায়, ঈসরাইল হোসেন দফাদারের ছোটছেলে রাকিবুল ইসলাম রকি। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে মাত্র ২০ বছর বয়সে পাড়ি জমান লিবিয়ায়। ভিটেবাড়ির একাংশ বিক্রি ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দালালের মাধ্যমে এই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ছাড়েন তিনি। বেনগাজি থেকে ত্রিপোলিতে চাচাতো ভাইয়ের কাছে যাওয়ার কথা ছিল তার।

রকি

রকির বড় ভাই সোহেল রানা জানান, তারা চার ভাই বোন। রকি সবার ছোট। সে যশোর সরকারি সিটি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় রকি। ভিটেবাড়ির একটি অংশ বিক্রি ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দালালের মাধ্যমে তাকে লিবিয়ার ত্রিপোলি পাঠানো হয়। তার এক আপন চাচাতো ভাইও থাকেন ত্রিপোলিতে। সেখানেই তার যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দালাল তাকে ত্রিপোলিতে নিতে পারেনি। রকির বিমানটি বেনগাজিতে অবতরণ করে। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে দালাল তাকে বেনগাজি থেকে ত্রিপোলিতে নিতে পারছিল না। এজন্য রকি বেনগাজীর একটি তেল কোম্পানিতে কাজ নেয়। সেখানে দুই মাস কাজ করে। কাজের সুবাদে পরিচয় হয় এক বাংলাদেশি দালালের সঙ্গে। ওই দালাল রকিকে বেনগাজি থেকে ত্রিপোলিতে চাচাতো ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৭০ হাজার টাকায় চুক্তি করে। সে অনুযায়ী ১৫ মে রকি দালালের সঙ্গে বেনগাজি থেকে রওনা হয় ত্রিপোলির উদ্দেশ্যে। পথে কাছাকাছি মিজদাহ নামক স্থানে ১৭ মে তারা অপহরণকারীদের হাতে জিম্মি হয়।

সোহেল রানা আরও জানান, পরের দিন সন্ধ্যায় তার কাছে বাংলাভাষী একজন ফোন করে। সেই ব্যক্তি নিজের পরিচয় না দিয়ে রকির মুক্তির জন্য ১২ হাজার ইউএস ডলার অথবা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ লাখ টাকা দাবি করে। এসময় অপরহরণকারীরা তার সঙ্গে রকির কথা বলিয়ে দেয়। রকি সোহেলকে জানায় তাকেসহ অন্য জিম্মিদের অপহরণকারীরা খুব নির্যাতন করছে এবং টাকা না দিলে হত্যা করবে। এরপর প্রতিদিনই অপহরণকারীরা রকিকে নির্যাতন করে টাকার দাবিতে ফোন করাতো এবং দুবাইয়ের একটি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করতে বলতো। একপর্যায়ে ১০ লাখ টাকা দিতেও রাজি হয়েছিল পরিবার এবং ১ জুন টাকা দেওয়ার সময় নির্ধারিত হয়েছিল।

সোহেল রানা জানান, গত বৃহস্পতিবার (২৮ মে) রাতে রকি তাকে ফোন দেয়। একইসঙ্গে ঘটনাস্থলের গুগল ম্যাপের ছবিও পাঠায়। ফোনে রকি অপরহণকারীদের সঙ্গে জিম্মিদের মারামারির ঘটনা জানিয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাতে বলে। এরপর শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে অপহরণকারীদের হাতে জিম্মি হওয়া আহত মাগুরার তরিকুলের মাধ্যমে রকির মৃত্যু সংবাদ পান বলেও জানান সোহেল।

রকির মরদেহ ফিরিয়ে আনতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নিহত রকির বড় ভাই সোহেল।

আরও খবর: 

লিবিয়ায় নিহত ২৩ বাংলাদেশির পরিচয় জানা গেছে 

 

 

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
হৃদয় বিদারক সেই ঘটনার ১১ বছর
হৃদয় বিদারক সেই ঘটনার ১১ বছর
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে প্রাণ গেলো একজনের, আহত ১০
এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে প্রাণ গেলো একজনের, আহত ১০
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক