X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে চলছে রাজশাহীর আমের বাজার

দুলাল আবদুল্লাহ, রাজশাহী
১৫ জুন ২০২০, ১২:০৬আপডেট : ১৫ জুন ২০২০, ১৪:৫০

আম করোনাভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউন, আম দেরিতে পরিপক্ক হওয়া, রমজান মাস ও ঈদের জন্য ক্রেতা সমাগম কম থাকায় গত বছরের তুলনায় এবার প্রথম এক মাসে আমের বেচাকেনা কম হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে আমের ক্ষতিও হয়েছে বড় ধরনের। এরপরও থেমে নেই রাজশাহী অঞ্চলের আমের বাজার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর আমের ভালো দাম পাচ্ছেন তারা। করোনার কারণে হাটে ক্রেতার উপস্থিতি কম হলেও এবার অনলাইনে আমের অর্ডার বেশি। এভাবে বেচাকেনা চললে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আম

রাজশাহীতে ১৫ মে গাছ থেকে আম নামানো শুরু হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস ও রোজার কারণে ঈদের আগে ও পরে প্রায় ক্রেতাশূন্য ছিল বাজার। পরিবহন সংকট, অন্য জেলা থেকে ক্রেতারা না আসার কারণে আমের বাজারজাতকরণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন চাষিরা। কিন্তু লকডাউন উঠে যাওয়ার পর এই শঙ্কা কাটছে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসছেন পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা। এছাড়া প্রথমবারের মতো ট্রেনে ও ডাক পরিবহনে বিনামূল্যে আম সরবরাহের সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে এখন জমজমাট হয়ে উঠেছে রাজশাহীর আমের বাজার।

তবে বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব মানছেন না ক্রেতা ও বিক্রেতারা। এতে করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আম

আবাদ ও লক্ষ্যমাত্রা

কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজশাহী অঞ্চলের ৮১ হাজার ১৬ হেক্টর জমিতে ৮ লাখ ৩৫ হাজার ৫০২ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ১০ হাজার ৯৪৭ মেট্রিক টন, নওগাঁ জেলায় ২৪ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে ২৯ হাজার ৭৩ মেট্রিক টন, নাটোর জেলায় ৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে ৭৭ হাজার ৩০৫ মেট্রিক টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। রাজশাহীর আম বাজার

প্রতি বছর আম মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। আম বাগান পরিচর্যা, সংগ্রহ ও পরিবহন, বিক্রিসহ অন্যান্য ধরনের কাজে যুক্ত হন তারা। সারাবছরে তাদের আয়ের অন্যতম মৌসুম এটি।

এ অঞ্চলের আমের মধ্যে ফজলি, হিমসাগর (খিরসাপাত), গোপালভোগ, মহনভোগ, ল্যাংড়া বিখ্যাত। এছাড়া বৌ-ভোলানি, রাণিপছন্দ, জামাই খুশি, বৃন্দাবন, তুতাপরি, লখনা, বোম্বাই, দাউদ ভোগ, সিন্দুরি, আম্রপালি, আশ্বিনা, ব্যানানা, মল্লিকা, ক্ষুদি খিরসাপাত, কালীভোগসহ শতাধিক জাতের আম রয়েছে। রাজশাহীর আম বাজার

তবে এবার মৌসুম শুরুর আগেই ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে ক্ষতির শিকার হন আমচাষিরা। কৃষি বিভাগের হিসাবে, রাজশাহী অঞ্চলে ৪ হাজার ৭২৯ হেক্টর জমিতে ৫৬ হাজার ৩৮৫ মেট্রিক টন আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। চাষিরা চাইছেন, ভালো দামে বিক্রি করে আম্পানের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে।

গাছ থেকে আম পাড়ার সময়

প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে থেকে গুটি আম, ২০ মে থেকে গোপালভোগ ও লক্ষণভোগ, ২৫ মে থেকে লখনা, ২৮ মে থেকে হিমসাগর, ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৩ জুন থেকে আম্রপালি, ১৫ জুন থেকে ফজলি, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১০ জুলাই থেকে বারি-৪ আম নামানোর নির্দেশনা ছিল। তবে রাজশাহীতে সময় নির্ধারণ করা হলেও অন্য তিন জেলায় এবার আম গাছ থেকে নামানোর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি।

আমের বাজার দর

রবিবার (১৪ জুন) রাজশাহীর বানেশ্বর আমের হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার মণ আম এই হাটের ভ্যান গাড়িতে সাজানো। আমচাষী ও ব্যবসায়ীরা দাম হাঁকাচ্ছেন। আর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারি আসায় দাম বাড়তে শুরু করেছে। হাইওয়ে রোড থেকে হাটের বণিক সমিতির অফিসের গোটা মাঠে ভ্যান ভর্তি আম। সঙ্গে কাচারি মাঠেও খুচরা ব্যবসায়ীরা বসেছেন।    রাজশাহীর আম বাজার

গত সপ্তাহের ব্যবধানে এখন দাম বেড়েছে আমের। সব জাতের আমের দাম প্রতি মণে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এখন ২০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে জানা যায়, ভালো জাতের গোপালভোগ প্রায় শেষ। আর হিমসাগর মাঝামাঝি পর্যায়ে চলছে। একইসঙ্গে মৌমুসের শুরুর চেয়ে এখন বাইরের অনেক পাইকার বেশি আসছেন। হাট থেকে আম নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, রাজশাহীর বৃহত্তম আমের হাট বানেশ্বরে জুনের শুরুতে গোপালভোগ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছিল ১৯০০ থেকে ২২০০ পর্যন্ত। সেই গোপালভোগ জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে মণপ্রতি ২৬০০ থেকে ২৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তবে এখন আর বড় চালান পাওয়া যাচ্ছে না, আম শেষ হয়ে গেছে প্রায়।

বানেশ্বরে প্রতি মণ হিমসাগর ২৫০০ থেকে ৩২০০ টাকা, ল্যাংড়া ১৮০০ থেকে ২২০০, লক্ষণভোগ ৮০০ থেকে ১১০০, গুটি ৭০০ থেকে ১৬০০, রাণি পছন্দ ২০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রাজশাহীর আম বাজার

শালবাগান আমবাজারে হিমসাগর ২৮০০, ল্যাংড়া ২২০০টাকা, রাণিপছন্দ ২০০০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।  রাজশাহী শহরের শালবাগান এলাকার আম ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন জানান, হাটের চেয়ে রাজশাহী শহরে আমের দাম আরও কিছুটা বাড়তির দিকে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে সব জাতের আমই প্রায় ২০০ টাকা করে বেশি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। 

বানেশ্বর হাটের আম ব্যবসায়ী মোস্তাফা জানান, সবার চাহিদা থাকে গোপালভোগ ও হিমসাগর আমের। গোপাল এখন প্রায় শেষ। আর নতুন ভাবে ল্যাংড়ার আমদানি বেশি।

হাটের আম ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন জানান, এখন আমের চাহিদা অনেক বেশি বেড়েছে। তাই সব আম প্রতি মণে কয়েকশ টাকা বেশি। আর কিছু আম শেষ পর্যায়ে ও কিছু আম নতুন করে হাটে উঠেছে।

অনলাইনে বাড়ছে আমের বেচাকেনা

করোনার কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় হাটগুলোতে ক্রেতা কম। তবে সেই অভাব পূরণ করছে অনলাইন কেনাবেচা। গ্রাহকের উপস্থিতি না থাকলেও তেমন অনলাইন অর্ডারের কারণে বেড়েছে কর্মতৎপরতা। এখন একটি ফোন কলেই একজন ক্রেতা সরাসরি দেখে অর্ডার করছেন। এতে শঙ্কার মাঝেই হাসি ফুটেছে বাগানি ও ব্যবসায়ীদের মুখে। আম যাচ্ছে পার্সেলে

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শামসুল হক জানান, গত মৌসুমে ৪-৫জন ব্যক্তি অনলাইনে ব্যবসা করছিলেন। কিন্তু এবার ৩৫ থেকে ৪০ জন্য ব্যক্তি অনলাইনে আমের ব্যবসা করছেন।

রাজশাহীর সরকার ফল ভান্ডারের তানভির আলম আনভির সরকার বলেন, ‘সরাসরি আম আম কিনছেন এমন ক্রেতার সংখ্যা কম। আমরা অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের আম তুলে ধরছি। এভাবে আমরা প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি। নিজস্ব কুরিয়ারের মাধ্যমে ফরমালিনমুক্ত আম পাঠাচ্ছি। এছাড়া রাজশাহীর মধ্যে আমরা হোম ডেলিভারিও দিচ্ছি।’

অনলাইন পোর্টাল, ফেসবুক পেজ ও ফেসবুক-ম্যাসেঞ্জারের বিভিন্ন গ্রুপে প্রচারণা চালিয়ে অর্ডার নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অনলাইনে অর্ডার, বিকাশে পেমেন্ট আর কুরিয়ারে পণ্য পৌঁছে দেওয়া অনেকের কাছেই নতুন হওয়ায় সম্ভাবনার পাশাপাশি সমস্যার কথাও বলছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এই সমস্যাগুলোর সমাধানে কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের সাহায্য করছেন বলে জানান তারা। আম যাচ্ছে পার্সেলে

রাজশাহী আম বাজার ফেসবুক পেজের মালিক আব্দুল জলিল বলেন, ‘অনলাইনে অর্ডার নিয়ে আমরা ৫ বছর থেকে ব্যবসা করে আসছি। অনলাইনে এখন প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। অনলাইন মার্কেটে নতুন গ্রাহকদের নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। যারা প্রথম শুরু করে তারা এই সমস্যাই পড়ে থাকে। তবে কিছু কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান এটার সমাধানও করে দিয়েছে। তবে স্থায়ী গ্রাহকদের নিয়ে তেমন সমস্যা হয় না।’

খরচ কমাবে ‘স্পেশাল ম্যাঙ্গো ট্রেন’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, জুনের প্রথম সপ্তাহের পরই গাছ থেকে ১২-১৫ শতাংশ আম নামানো হয়েছে। আর প্রত্যেক দিন ২৫ থেকে ৩০ মেট্রিক টন আম ট্র্যাক, ডাক পরিবহন, কুরিয়ার সার্ভিস ও ঢাকার বিভিন্ন কোচে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। প্রথম দিকে ক্রেতা না থাকলেও এখন অন্য জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আসায় আমের ব্যবসা জমে উঠেছে। আম যাচ্ছে পার্সেলে

সরকারিভাবেও আমচাষিদের সহায়তা করতে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গত ৫ জুন থেকে চালু হয়েছে স্পেশাল ম্যাঙ্গো ট্রেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কেজিপ্রতি এক টাকা ৩০ পয়সা আর রাজশাহী থেকে কেজিপ্রতি এক টাকা ১৭ পয়সা দরে আম ব্যবসায়ী ও চাষিরা প্রতিদিন ২৪০ মেট্রিক টন আম ঢাকায় পৌঁছাতে পারবেন। এছাড়া গত ২ জুন থেকে ডাক বিভাগের একটি ট্রাকে করে সর্বোচ্চ পাঁচ টন আম প্রতিদিন বিনা ভাড়ায় ঢাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে যেতে পারছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক আমচাষিরা।

পশ্চিমাঞ্চল রেলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ফুয়াদ হোসেন বলেন,  ‘এ পর্যন্ত ৬৫ ক্যারেটের মতো বুকিং হয়েছে। এক এক ক্যারেটে ২০ থেকে ২৫ কেজি আম রয়েছে। প্রক্রিয়াটি নতুন বলে এখনো সেভাবে আমরা চাষিদের কাছ থেকে সাড়া পাইনি। চেষ্টা করছি বিভিন্ন হাটে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রচার-প্রচারণা চালাতে। এছাড়া ব্যানার ফেস্টুনও করা হয়েছে। আশা করছি দুয়েক দিনের মধ্যে কৃষকদের ভালো সাড়া পাব।’ ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন

তিনি বলেন, ‘ট্রেনে ভাড়া কম নেওয়া হচ্ছে। আবার ক্যারেটপ্রতি কুলিদের ফিও ২৭ টাকা থেকে কমিয়ে ১০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।’

ডাক বিভাগের গাড়িতে ঢাকা আম পাঠিয়েছেন, চারঘাট উপজেলার বুদিরহাট এলাকার আমচাষি নজরুল ইসলাম ও পান্নাপাড়া এলাকার বুলবুল ইসলাম। তারা জানান, সরকারের এমন উদ্যোগে সাধারণ আমচাষি ও কৃষকদের অনেক উপকার হচ্ছে। আম পরিবহনের বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে না তাদের। ফলে কোনও খরচ ছাড়ায় ঢাকায় আম পৌঁছে যাচ্ছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, ‘বিনা ভাড়ায় ট্রাকে আম পরিবহনের মূল উদ্দেশ্য সরাসরি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সহায়তা করা। প্রতিদিন ট্রাকে আম যাচ্ছে। চেষ্টা করছি ট্রাক সংখ্যা বাড়ানোর।’

কুরিয়ারে আম পরিবহনে দরে বিস্তর ফারাক

রাজশাহী থেকে ঢাকায় আম পরিবহনে দরে বিস্তর ফারাক লক্ষ্য করা গেছে। কুরিয়ার ও পার্সেল সার্ভিসগুলোতে আম পরিবহনে বিভিন্ন দর। যদিও পরিবহন করা গাড়িগুলো একই পথে একই খরচে যাবে। তার ওপরে কেজিতে ১৩ টাকা কমবেশি। ঢাকায় আম পাঠানোয় এমন খরচে ভোগান্তি আর বেকায়দায় পড়েছে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ।

কুরিয়ার ও পার্সেল সার্ভিস নিয়ে ভুক্তভোগিদের অভিযোগ পরিবহন খরচ একই হলে সার্ভিস চার্জ এতো কমবেশি কেন? ভুক্তভোগীদের দাবি, কুরিয়ার ও পার্সেল সার্ভিসগুলো মনগড়া দর নির্ধারণ করেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে সার্ভিসদাতা প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। আম

অন্যদিকে, রাজশাহী থেকে ঢাকা ও ঢাকায় বাইরে সর্বোচ্চ দরে আম নিয়ে যাচ্ছে এসএ পরিবহন। এসএ পরিবহন রাজশাহী থেকে ঢাকায় আম পরিবহনে গ্রাহককে গুনতে হচ্ছে কেজি প্রতি ১৫ টাকা। এছাড়া ঢাকার বাইরে প্রতি কেজি ২০ টাকা। এসএ পরিবহন এর রাজশাহী ম্যানেজার লিটন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গতবারের মতো এবছর ঢাকায় আম যাচ্ছে না। গত শুক্রবার রাজশাহী থেকে ঢাকায় আম পার্সেল গেছে দুই টন।

আম পাঠানোর দরের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস। এর ম্যানেজার মাসুদ জানান, রাজশাহী থেকে ঢাকায় আম যাচ্ছে ১২ টাকা কেজি দরে। এছাড়া ঢাকার বাইরে ১৬ টাকা।

এদিকে, রাজশাহী থেকে ঢাকায় আম পাঠানোর দিক থেকে সর্বনিম্ন দর আহম্মেদ পার্সেল সার্ভিসে। এর ম্যানেজার করিম জানায়, তারা ঢাকায় আম পরিবহনের কেজি প্রতি সার্ভিস চার্জ নিচ্ছে ৭ টাকা। এছাড়া ঢাকার বাইরে ১০ টাকা।

ঢাকায় আম পাঠাতে আসা সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জানান, বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসে বিভিন্ন দর। কোনও কুরিয়ার সার্ভিস ঢাকায় প্রতিকেজি ৭ টাকায় নিয়ে যাচ্ছে। কেউ বা ১৬ টাকা। পরিবহন খরচের এমন হেরফেরে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। 

রাজশাহী এগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটির আহ্বায়ক মো. আনোয়ারুল হক জানান, ট্রেনে আম পাঠালে অর্ধেক খরচ কমে যাচ্ছে। কুরিয়ার ও পার্সেল সার্ভিসগুলোতে আর দর কষাকশি করতে হবে না। ট্রেনে আম ঢাকায় পরিবহন সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। তারা জেলা প্রশাসককে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, করোনার কারণে সার্ভিস চার্জ বাড়াবে না। কিন্তু তারা সার্ভিস চার্জ বাড়িয়েছে।

বিদেশে যাচ্ছে না আম

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আম গত মৌসুমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, নরওয়ে, পর্তুগাল, ফ্রান্স, রাশিয়া রফতানি করা করা হয়েছিল। কিন্তু এ মৌসুমে করোনা ভাইরাসের কারণে বিদেশে যাচ্ছে না। চলতি মৌসুমে ৫০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানির কথা ছিল। তবে এই উপজলোর আম দেশের মধ্যে আগুরা সুপার সপসহ জনপ্রিয় সুপার সপে চালান দেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, হটেক্স ফাউন্ডেশন ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের যৌথ আয়োজনে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মাধ্যমে এ আম রফতানির কাজ শুরু করা হয়েছিল। আম রফতানির জন্য ৫০ জন বাগান মালিককে উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করে সনদপত্র দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চাষিরা কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাগানে উৎপাদিত ও ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত আম উৎপাদন করেন।

কলিগ্রামের আমচাষি (লিড ফার্মার) আশরাফুদৌলা, আড়পাড়া গ্রামের মহসীন আলী বলেন, ইতোমধ্যে আম ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রফতানি শুরু হয়েছে। তবে করোনার কারণে দেশের বাইরে আম না যাওয়ায় কিছুটা ক্ষতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে। আম

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, উপজেলায় ৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ বছর উৎপাদন ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ৬ থেকে ৭ মেট্রিক টন। এই উপজেলায় খাদ্য শস্যের পাশাপাশি অর্থকরি ফসল হিসেবে আম প্রধান। উপজেলার মাটি আম চাষের জন্য উপযোগী। চলতি মৌসুমে ৫০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানি করার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা রয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে কোনো কার্গো বিদেশে চলাচল না করায় রফতানি হচ্ছে না।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, গত চারবছর থেকে দেশের বাইরে আম যেতো বাঘার আম। কিন্তু এবছর করোনা ভাইরাসের কারণে বিদেশে আম রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না।

স্থায়ী সংরক্ষণের অভাব

গত ১৫ মে থেকে গাছ থেকে আম নামানো শুরু হয়েছে, জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে পচনশীল এই ফল বিক্রি হয়ে যাবে। এতে করে দ্রুত সময়ে আম বিক্রি করতে হয় চাষিদের। ফলে অনেকেই নায্য মূল্য পান না বলে দাবি করেন। চাষিরা দীর্ঘদিন ধরে উত্তরাঞ্চলে আম সংরক্ষণের জন্য হিমাগার ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে আসছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমাদের উত্তরাঞ্চলের কৃষিতে উৎপাদনের বিষয়টি তো আছেই, বিশেষ করে সংরক্ষণাগারের প্রতি আমাদের নজর দিতে হবে। যেমন,আমাদের আম পেড়েই সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করতে হয়। উৎপাদনশীলতার বিষয়ে কৃষি ক্ষেত্রে যে গবেষণা তা যথাযথভাবে হচ্ছে। যখন যে প্রক্রিয়ায় দরকার সে প্রক্রিয়ায় হচ্ছে। কিন্তু আমাদের সংরক্ষণাগার পর্যাপ্ত না থাকায় কৃষকদের ক্ষতি হয়। এ বিষয়ে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।’ আমবাহী ট্রেন

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি বলেন, ‘রাজশাহী কৃষিভিত্তিক এলাকা যেখানে সবসময় খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে। এজন্যে রাজশাহীকে কেন্দ্র করে কৃষি অর্থনৈতিক জোন অথবা ইপিজেড তৈরি করতে হবে। যেখানে কৃষকরা তাদের পণ্য সংরক্ষণ করতে পারবেন। এখানে আম, টমেটোর প্রসেসিং শিল্প কারখানাও প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের আমের প্রচুর ফলন হচ্ছে এবং নষ্টও হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিগুলো যেমন প্রাণ, একমি এখানে আসছে। কিন্ত এরা কৃষকদের সঠিক দামটা দিচ্ছে না। এরা সুযোগ নিচ্ছে। এখানে যদি ইপিজেড করা হয় তখন একটা প্রতিযোগিতা হলে কৃষকরা নায্য দাম পাবে।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ  অধিদফতরের উপ পরিচালক শামসুল হক জানান, ‘এখন পর্যান্ত ২০ শতাংশ আম গাছ থেকে নামানো হয়েছে। এবার গড়ে ৩৫ টাকা কেজি দরে ধরে ৭৩৫ কোটি টাকা আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু করোনা ও ঝড়ের কারণে ১৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা কমিয়ে ধরা হয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। তবে বাজারে আমের দাম বেশ ভালো। এভাবে বেচাবিক্রি চললে তা শেষ পর্যন্ত  লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

 

/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক