X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

চার নদীতে পানি বাড়ছেই, ডুবছে কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
২৮ জুন ২০২০, ২২:৫৮আপডেট : ২৮ জুন ২০২০, ২৩:৫১

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি উজানের ঢল ও বৃষ্টিপাতে কুড়িগ্রামে দুধকুমার, ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত তিন দিন ধরে দুধকুমার, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত থাকায় জেলার নদ-নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে দুধকুমার, ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নিম্নাঞ্চল। বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় অনেকে উঁচু স্থান ও নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদে আরও অন্তত দুই দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণকক্ষ জানায়, রবিবার (২৮ জুন) দুপুর তিনটায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং চিলমারী পয়েন্টে ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও তা এখনও বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

কুড়িগ্রামের বিভিন্ন নদীবর্তী গ্রামে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি

এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার সদর উপজেলার ধরলা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলসহ ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার হলোখানা, যাত্রাপুর, পাঁচগাছী, ভোগডাঙ্গা ও ঘোগাদহ ইউনিয়ন এবং নাগেশ্বরী, উলিপুর, চিলমারী ও রৌমারী উপজেলার বেশ কিছু ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করায় এসব এলাকার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বর্ষার শুরু থেকে ভাঙনে রুদ্র রূপ নেওয়া ব্রহ্মপুত্র নদ অববাহিকার বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। একইসঙ্গে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলায় হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

উলিপুর উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, উপজেলার হাতিয়া, থেতরাই, সাহেবের আলগা ও বেগমগঞ্জসহ ৮টি ইউনিয়ন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন। আক্রান্ত মানুষের সহায়তায় ৪৮ মেট্রিক টন চাল ও ছয় লক্ষাধিক টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রামে বাড়িঘর আর বসতি পানিতে আটকা, ডুবে গেছে মাঠের ফসল

এদিকে জেলার সদর উপজেলার ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে দিনযাপন করছেন।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, ব্রহ্মপুত্রে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তার ইউনিয়নের পোড়ারচর, ঝুনকারচর এবং চরকালির আলগার প্রায় এক হাজারেরও বেশি বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও বন্যার পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ওই ইউনিয়নের প্রায় ২১ হাজার মানুষ।

সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ময়নুল ইসলাম জানান, উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষদের সাহায্যার্থে ৩৬ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যা দুর্গত মানুষদের মাঝে বণ্টনের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়াও দুর্গত এলাকার মানুষদের বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ চলছে।

কুড়িগ্রামে বেশ কিছু স্কুল মাঠেও ঢুকে গেছে বন্যার পানি

এদিকে, ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে চিলমারী উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অষ্টমীচর ও নয়ারহাট ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকার বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে গৃহহারা হয়ে পড়ছেন একের পর এক পরিবার।

অন্যদিকে, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ, ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নসহ উলিপুরের থেতরাই ইউনিয়নের কয়েকশ’ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

নয়ারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হানিফা জানান, তার ইউনিয়নে বন্যার পানি প্রবেশ করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। আর ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ইউনিয়নের দুইশ’ বিঘার আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকটি ঘর বিলীন হওয়ার পাশাপাশি হুমকিতে রয়েছে পুরো আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

কুড়িগ্রামে দোকানের সামনে পানি, মাঠে পানি, রাস্তাও চেনার উপায় নাই

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, আগামী আরও দুই দিন ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার এক মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এতে জেলার সদর উপজেলাসহ উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার বেশ কিছু অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার তথ্যমতে, বন্যা মোকাবিলায় এ পর্যন্ত ৩শ’ ২ মেট্রিক টন চাল ও ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলার প্রশাসনের তরফে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।

 

/টিএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া