X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মা নদীতে বাড়ছে পানি

রাজশাহী প্রতিনিধি
২৮ জুন ২০২০, ২৩:৪৪আপডেট : ২৮ জুন ২০২০, ২৩:৫৫

 

বর্ষার শুরুতে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ছে। সঙ্গে দেখা দিয়েছে পাড় ভাঙনের আশঙ্কা





ধীরে ধীরে ফুলে ফেঁপে উঠছে পদ্মা। প্রতিদিনই বাড়ছে পানি। উজান থেকে আসছে স্রোত। ফলে ভাঙতে শুরু করেছে নদীগর্ভে জেগে ওঠা চর। ঢেউ এখন আছড়ে পড়ছে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধের তলায়। রবিবার (২৮ জুন) বেলা ৩টায় বিপদসীমার ৪ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটারের নিচেই ছিল পানি। এ নিয়ে আপাতত শঙ্কার কিছু নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলম জানান, বৃষ্টির কারণেই মূলত নদীতে পানির পরিমাণ বাড়ছে। বর্তমানে যেভাবে পানি বাড়ছে এটা অস্বাভাবিক নয়। অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত হলে বন্যার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরুরি কাজের পরিকল্পনা থাকে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক জানান, রবিবার (২৮ জুন) সকাল ৬টায় ১৩ দশমিক ০৯ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ১৩ দশমিক ৯৮ সেন্টিমিটার, বেলা ১২টায় ১৪ দশমিক ০৩ সেন্টিমিটার ও বেলা ৩ টায় ১৪ দশমিক ০৮ সেন্টিমিটার পানি রেকর্ড করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মূলত বৃষ্টির কারণেই পদ্মায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। সাধারণত অক্টোবর পর্যন্ত পানি বাড়তে থাকে। বিপদসীমা ধরা হয় ১৮ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার। গত বছর সেপ্টেম্বরে রাজশাহী পয়েন্টে পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিলো ১৮ দশমিক ১৯ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। এখন পানি বাড়াকে স্বাভাবিক প্রবাহ হিসেবেই দেখছেন তিনি। তবে জুলাই মাসের শুরুর দিকে পানির প্রবাহ দেখে বোঝা যাবে রাজশাহীতে বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে কি না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক আরও জানান, শনিবার সকালে ১৩ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পানির প্রবাহ ছিল। আর সন্ধ্যা ৬ টায় বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৮৭ সেন্টিমিটারে। তবে পানি নিয়ে এখনও উদ্বেগের কিছু নেই।
গত ১৮ বছরে রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে মাত্র দু’বার। এর মধ্যে ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা ৮ বছর রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। কেবল ২০০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৮৫ মিটার।
এরপর ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করেছিল। ওই বছর পদ্মার উচ্চতা দাঁড়িয়েছিল ১৮ দশমিক ৭০ মিটার। এরপর আর এই রেকর্ড ভাঙেনি।
রাজশাহী আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে, জুন মাসে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার। আর শনিবার (২৭ জুন) ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৫ মিলিমিটার। এছাড়া গতবছর রাজশাহীতে মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল ১২৪১ দশমিক ৭ মিলিমিটার।

পদ্মায় পানি বাড়ছে, পাড়ের ভাঙনও বাড়ছে
বাঘায় পদ্মার চরের পাকা রাস্তা নদীগর্ভে : চলাচলে দুর্ভোগ
রাজশাহীর বাঘায় চরের মধ্যে বানানো পাকা রাস্তা পদ্মা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে মানুষ চলাচলে দুর্ভোগে পড়েছে। চলতি বন্যায় চরের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের দাবি চরবাসীর।
জানা যায়, বাঘা উপজেলায় পদ্মার পাশ ঘেঁষা চকরাজাপুর ইউনিয়নের আজিজুল চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে কালিদাসখালীর বাবলু শিকদারের বাড়ি পর্যন্ত এলজিইডির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে প্রায় ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে এক কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়। পদ্মার চরের মধ্যে প্রথম এই রাস্তা পেয়ে চরবাসী খুশি ছিল। কিন্তু ৫ বছরের মধ্যেই বানানো এই রাস্তার পৌনে এক কিলোমিটার এরইমধ্যে পদ্মা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে মানুষ চলাচলে দুর্ভোগে পড়েছে। পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইয়নিয়নে ১৫টি চরে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস। এখানে নানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে মানুষ বসবাস করে। চরবাসীর দাবি, ৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হলে শিমুলতলাবাসীর সঙ্গে তারা পাকা রাস্তায় মিলিত হতে পারবে। ফলে দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হবে। ইতোমধ্যেই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সহযোগিতায় পদ্মার মধ্যে ৬টি চরে ২ হাজার ৪৮৬ জন গ্রাহকের জন্য ৫৩ পয়েন্ট ৮১১ কিলোমিটার বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে পোল (খুঁটি) নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে একনেকে পাস হলেও কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে চরবাসী আরও দাবি করেন, পদ্মার শুধু পাড় নির্মাণ করলেই হবে না, তার সঙ্গে পদ্মার মধ্যে বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি। তবেই চরের মানুষ ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে। আর পদ্মার মধ্যে বাঁধ দেওয়া না হলে দুই/এক বছরের মধ্যে ১৫টি চর বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, গত কয়েক বছরে কয়েকটি স্কুল, মসজিদ, হাজার হাজার একর আমবাগান, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলার চরকালিদাসখালী প্রাইমারি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পারভীন সুলতানা বলেন, পদ্মা ভাঙতে ভাঙতে আমাদের স্কুলের এখন মাত্র ৩০ মিটার দূরে অবস্থান করছে। যে কোনও সময়ে স্কুলটি পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এখনও সময় আছে, স্কুলটি রক্ষা করতে হলে বাঁধ নির্মাণ অতি প্রয়োজন। প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যেই পরিদর্শন করেছেন। এখন কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তা জানি না।
বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সার্বিক সহযোগিতায় এক কিলোমিটার রাস্তা পাকা করা হয়েছিল। কিন্তু বাঁধ নির্মাণ না করার কারণে রাস্তাটি ভাঙতে ভাঙতে এর কোয়ার্টার কিলোমিটার পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চরের মানুষ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সহযোগিতায় ব্রিজ ও বিদ্যুৎ পেতে যাচ্ছে। কিছু রাস্তাও পেয়েছিলাম। এখন একটাই দাবি ৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা আর বাঁধ নির্মাণের।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী রতন কুমার ফৌজদার বলেন, পদ্মার মধ্যে বাঁধ নির্মাণের কোনও পরিকল্পনা নেই। তবে পদ্মার পাড় নির্মাণের বিষয়টি একনেকে পাস হয়ে আছে। চলতি অর্থবছরের কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যেই খায়েরহাট মো. আবদুল হালিম মোল্লা মাস্টারের বাড়ির দক্ষিণ পাশে ৬০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এটাও চলতি অর্থ বছরের কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এখানে ব্রিজটি নির্মাণ করা হলেই রাস্তা পাকা করার কাজও পর্যায়ক্রমে শুরু করা হবে।

পদ্মা নদীূতে পানি বাড়ছে। অরক্ষিত হয়ে পড়ছেন নদীর পাড়ের বাসিন্দারা।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার রাওথার দত্তপাড়া গ্রামের আবদুস সালামের স্ত্রী মনোয়ারা ও জামালের স্ত্রী মজিফা জানান, আমাদের বাড়িটি নদী তীর থেকে মাত্র কয়েক ফুট দূরে অবস্থিত। ইতোমধ্যে বৃষ্টি ও উজানের পানিতে নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। নদীর তীর ব্লক দিয়ে পাকা বাঁধ না বাধলে হয়তো আমাদের বাড়ি রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে।
চারঘাট সীমানায় পদ্মার প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ তীরবর্তী এলাকা রয়েছে যার অধিকাংশ তীরবর্তী জায়গায় মানুষ বসবাস করে। এই তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৮ কিলোমিটার নদী তীরবর্তী এলাকা ব্লক দিয়ে পাকা বাঁধ দেওয়া আছে এবং বাকি তীরবর্তী এলাকা অরক্ষিত বা কাঁচাবাঁধ। কোনও কোনও সময় বাঁধে ভাঙন ধরলে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে সাময়িকভাবে কাঁচা বাঁধ রক্ষার জন্য চেষ্টা করা হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে বাঁধ রক্ষায় তা অকার্যকর।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা জানান, নদী তীরবর্তী মানুষদের রক্ষার্থে নকশার কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে বাঁধের কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা করেন। এই প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গনে ৮০০ মিটার ও রাওথায় ৭০০ মিটার পাকা বাঁধ তৈরি করা হবে।
নদীর বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সামিরা বলেন, আমি ইতোমধ্যে টাঙ্গন ও রাওথায় পদ্মা নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। কিছু কিছু জায়গায় কাচাঁ বাঁধে ফাটল দেখা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িকভাবে ফাটল বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে সকল স্থানে পাকা বাঁধ নেই খুব দ্রুত বাঁধ নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হবে যেন নদীতীরবর্তী আর কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়