X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

খাগড়াছড়িতে কৃষিপণ্য পরিবহনে টোল আদায় করে তিন সংস্থা!

জসিম উদ্দিন মজুমদার, খাগড়াছড়ি
০১ জুলাই ২০২০, ১৮:৪১আপডেট : ০১ জুলাই ২০২০, ১৮:৫৪

খাগড়াছড়িতে ট্রাক থামিয়ে টোল আদায়। ( ফাইল ছবি)

খাগড়াছড়িতে কৃষিপণ্য পরিবহনের পর জেলা থেকে বের হওয়ার আগে টোল দিতে হয় তিন ধাপে। সমতলের জেলাগুলোতে কোথাও কোথাও পৌরসভা এ ধরনের ট্যাক্স বা টোল আদায় করে থাকলেও সেখানে প্রতি গাড়ি ফল ফসল পার করতে তিনবার তিন ধরনের টোল কর্তৃপক্ষের মুখোমুখি হতে হচ্ছে খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলার কৃষকদের।  পার্বত্য জেলায় পার্বত্য জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও বাজার ফান্ড (পার্বত্য জেলায় বাজার ব্যবস্থাপনা করার কাজে দায়িত্ব প্রাপ্ত) নামক তিনটি পৃথক সংস্থা এসব  টোল আদায় করছে। এর ফলে কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে, বাজারে প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছেন তারা।

দীর্ঘদিনের এই সমস্যাটির ওপর এবার নজর দিয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত টোল আদায়ের নামে কৃষকদের হয়রানি কমাতে কৃষকের পাশে দাঁড়ানোসহ সমস্যাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে। এছাড়াও পরিচালিত হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পৌরসভা ও জেলা পরিষদের বিভিন্ন টোল কেন্দ্রে সরাসরি অথবা ছদ্মবেশে গিয়ে কৃষকদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গত তিন-চার দিনে প্রায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট সমন্বয়ে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। কৃষকেরা ফোন করলেই ঘটনাস্থলে হাজির হবে পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট এবং মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাৎক্ষণিক নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সরকার কৃষকদের পাশে আছে। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখতে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। সরকারের আন্তরিকতা থাকার পরেও যদি কেউ কৃষকদের উৎপাদিত ফলমূল ও কাঁচামালের ওপর অতিরিক্ত ট্যাক্স-টোল আদায় করে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করে তা বরদাস্ত করা হবে না।

তিনি আরও বলেন, পৌরসভার স্থাপন করা জিরো মাইলের টোল কেন্দ্রটি পৌরসভার অধিক্ষেত্রের বর্হিভূত হওয়ায় তা সরিয়ে ইতোমধ্যেই তা পৌরসভার শেষ সীমানা তথা চেংগী ব্রিজের আগে স্থাপন করা হয়েছে।

পৌরসভা ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অতিরিক্ত ট্যাক্স-টোল আদায়ের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানোর কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সমতল জেলাতে শুধুমাত্র পৌরসভাকে ট্যাক্স-টোল দিতে হলেও পার্বত্য জেলায় পার্বত্য জেলা পরিষদসহ তিনটি পৃথক সংস্থাকে টোল দিতে হয় যা অগ্রহণযোগ্য। এ কারণে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই এ বিষয়ের উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি এবং এই বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা চেয়েছি।’

এছাড়া কৃষক ও ব্যবসায়ীদের খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রণাধীন রামগড় উপজেলার সোনাইপুল এবং মানিকছড়ি উপজেলার গাড়িটানা এলাকায় অতিরিক্ত এবং জোর পূর্বক টোল আদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কৃষক বা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করলেই সংশ্লিষ্ট থানা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনের এ প্রতিনিধির কথা হয় খাগড়াছড়ির প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষক দিবাকর চাকমা, বাবুশ্যি চৌধুরী ও অনিমেষ চাকমা রিংকুর সঙ্গে। এই কৃষকরা তাদের সমস্যা তুলে ধরে বলেন, খাগড়াছড়ি হতে বাইরের জেলাগুলোতে যাওয়া প্রতি ট্রাক ফলের গাড়িতে পৌরসভাকে তিন থেকে ৬ হাজার টাকা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদকে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা এবং বাজার ফান্ডকে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ট্যাক্স-টোল দিতে হয়। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংস্থাগুলো আদায়কৃত ট্যাক্স-টোলের বিপরীতে রশিদ দেয় না। প্রথমদিকে প্রশাসনসহ নানা কর্তৃপক্ষ আমাদের অভিযোগগুলো আমলে না নিলেও তারা বিভিন্নভাবে খোঁজ খবর নিয়ে এর সত্যতা পেয়েছেন। এখন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানাও করছেন। এতে  কৃষকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।

জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পার্বত্য জেলার কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। পৌরসভা ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদকে কৃষিপণ্যের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত টোল মওকুফ অথবা নামমাত্র টোল নির্ধারণ করে পণ্যের অবাধ পরিবহন নিশ্চিত করতে  খাগড়াছড়ি পৌরসভাকে চিঠি দিয়েছেন কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউছুফ।

ওই চিঠিতে মহাপরিচালক আরও উল্লেখ করেন, খাগড়াছড়ি পৌরসভা ফলমূলসহ কৃষিপণ্য পরিবহনে ট্রাক প্রতি ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত টোল আদায় করছে। এতে বিপণন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় একদিকে কৃষকেরা যেমন নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি ভোক্তারা বেশি দামে আমসহ কৃষিপণ্য ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে। পাশাপাশি অন্য জেলার ব্যবসায়ীরাও ফলমূল ও কৃষিপণ্য ক্রয়ে নিরুৎসাহিত হচ্ছে যা প্রকারান্তরে ফলচাষীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

চিঠির অনুলিপি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে দেওয়ার পাশাপাশি কৃষি মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিবদেরকেও দেওয়া হয়।

খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম, মাটিরাঙা পৌরসভার মেয়র শামছুল হক, রামগড় পৌরসভার মেয়র কাজী শাহজাহান রিপন এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর হতে চিঠি পেয়েছেন এবং পরিষদের সভায় আলোচনা শেষে করণীয় সম্পর্কে জানাবেন বলে জানান। 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কুবিতে উপাচার্য-ট্রেজারার-প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, ৩ দফতরে তালা
কুবিতে উপাচার্য-ট্রেজারার-প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, ৩ দফতরে তালা
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: সতর্ক ম্যাক্রোঁর
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: সতর্ক ম্যাক্রোঁর
রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে, শনিবারও ক্লাস চলবে
রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে, শনিবারও ক্লাস চলবে
অবৈধ ব্যবহারকারীদের ধরতে বাড়ি বাড়ি যাবে তিতাস
অবৈধ ব্যবহারকারীদের ধরতে বাড়ি বাড়ি যাবে তিতাস
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা