এবড়ো-খেবড়ো হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার তিনটি অভ্যন্তরীণ সড়ক। ফলে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিত্যদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজার হাজার কৃষক, জরুরি সেবাগ্রহীতাসহ এলাকাবাসী।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মানিকছড়ির তিনটহরী-যোগ্যাছোলা সড়কের পুরো ৭ কিলোমিটার, মানিকছড়ি-বাটনাতলী সড়কের ৬ কিলোমিটার এবং মানিকছড়ি-কালাপানি সড়কের ৫ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং ও পিচ উঠে গিয়ে শতশত গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে সিলকোট উঠে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। স্থায়ী ও ব্রেইলি ব্রিজগুলোর কোনও কোনটা এখানে সেখানে ভেঙে গেছে, ফলে চলাচল করতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বেশ কয়েক বছর ধরে সংস্কার হচ্ছে না এসব আন্তঃসড়ক। এ কারণেই উপজেলার গুরুত্বপূর্ন তিন আন্তঃসড়কে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। চলমান বর্ষা মৌসুমে এসব সড়কে চলাচলকারীদের দুর্ভোগ চরমে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে কৃষক ও জরুরী সেবা গ্রহণকারীরা।
তিনটহরী এলাকার কৃষক আবদুল করিম বলেন, তাদের সড়কটি ভাঙা হওয়ায় উৎপাদিত কাঁচা শাক-সবজি, ফল-ফলাদি ও কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন তারা। তাদের গ্রাম হতে লাখ লাখ টাকার সবজি চট্টগ্রাম, ফেনী ও ঢাকায় যাচ্ছে। আগে যোগ্যাছোলা হতে তিনটহরী আসতে সিএনজি বা মাহেন্দ্র গাড়িগুলো যেখানে ১০০/১৫০ টাকায় যেতো এখন ৩০০/৩৫০ টাকার নিচে যেতে চায় না। আগে পাইকারেরা এলাকায় এসে তাদের উৎপাদিত সামগ্রী কিনে নিলেও এবছর পরিবহন খরচ বেশি পড়ায় তারা (পাইকারেরা) আসেনি। রাস্তা ঠিক না থাকায় একদিকে যেমন কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি, তেমনই সময় নষ্ট হয়। অনেক সময় উৎপাদিত সামগ্রী বাজারজাত করতে না পারায় তা জমিতেই নষ্ট হয়ে যায়।
আরেক কৃষক মনির হোসেন বলেন, তার বড় আম বাগান আছে। গত বছর প্রায় ৩ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন এবং পাইকারেরা তা বাগান হতে নিয়ে গেছে। এবার সড়ক ভাঙা থাকায় কেউ আসেনি। ফলে অনেকটা কম দামে স্থানীয়দের কাছে আম বিক্রি করতে হচ্ছে। এ কারণে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বাটনাতলী এলাকার আবদুর রহমান বলেন, রাস্তা খারাপ হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। বিশেষ করে চলমান সময়ে কমপক্ষে এক কোটি টাকার আম-কাঁঠাল বিক্রি করতো ২০ গ্রামের শতাধিক কৃষক। কিন্তু রাস্তা ভাঙা থাকার কারণে চলতি বছর পরিবহন খরচ খুব বেশি পড়ায় লোকসানে পড়েছেন কৃষকেরা। এখন ফল নিয়ে মানিকছড়ি উপজেলা সদরে যাওয়া যেমন মুশকিল, তেমনি মূমুর্ষু রোগী ও গর্ভবতীদের হাসপাতালে নেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য।
কালাপানি এলাকার সিএনজি চালক দুলাল হোসেন বলেন ভাঙা সড়কে চালাতে গিয়ে প্রায়ই গাড়ি নষ্ট হচ্ছে, বিভিন্ন মেশিনারিজ ভাঙছে, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় তাদের অনেকে গাড়ি গ্যারেজে রেখে বাড়িতে অলস সময় কাটাচ্ছে।
রাস্তার দুর্দশার জন্য অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ট্রাক্টর এবং গাছের গাড়ি চলাচলকে দায়ী করে তিনি বলেন, প্রভাবশালীরা এসব ব্যবসায় জড়িত বিধায় কেউ তাদের বিরূদ্ধে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। গরিব এলাকাবাসীর কথা বিবেচনা করে রাস্তাগুলো দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
বাটনাতলী ইউপি চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম মোহন বলেন, সংস্কারের অভাবে রাস্তায় যেমন খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে তেমনি মানিকছড়ি-বাটনাতলী সড়কের ৪টি ব্রিজ ভাঙা। এসব সড়কে জনগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। প্রায় সময় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। সম্পদহানির পাশাপাশি অনেক এলাকাবাসীকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। তিনি দ্রুত সড়কটি সংস্কার করে যান চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানান।
তিনটহরী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিনটহরী-যোগ্যছোলা সড়ক ব্যবহার করে দুই ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। রাস্তাটি চলাচলের অনুপয়োগী হওয়ায় প্রতিনিয়ত তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় এলাকার হাজার মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় নিয়ে সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
উপজেলার ৩টি আন্তঃসড়কের বেহাল দশার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো.আবদুল খালেক জানান, প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চেয়ে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে এবং এগুলো অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদন পেলেই রাস্তাগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হবে।
মানিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ইতোমধ্যে তিনটহরী-যোগ্যাছোলা আধাপাকা সড়কটি পাকা করণের বরাদ্দ অনুমোদন হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে মানিকছড়ি-বাটনাতলী ও মানিকছড়ি-ছদুরখীল-কালাপানি সড়ক সংস্কার প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবনা অনুমোদনক্রমে বরাদ্দ আসলেই সংস্কার কাজ শুরু হবে। তিনি এলাকাবাসীদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার অনুরোধ জানান।