X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

শনিবার থেকে গাজীপুরে কোরবানির পশুর অনলাইন হাট

রায়হানুল ইসলাম আকন্দ, গাজীপুর
১৬ জুলাই ২০২০, ২১:০৩আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২০, ২১:২৪

গাজীপুরের একটি খামারে কোরবানি উপলক্ষে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে।

করোনা মহামারির এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার দিকে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের কঠোর মনোযোগ। আসন্ন কোরবানির ঈদে পশুর হাটেও তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু ক্রয়-বিক্রয়ে নজরদারি চলবে। এরপরেও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ও করোনার প্রকোপ বাড়া নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ কমাতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শনিবার থেকে চালু হচ্ছে অনলাইন কোরবানির হাট। এজন্য ওয়েবসাইটের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে, চলছে খামারিদের সঙ্গে যোগাযোগ। অনলাইন গরুর হাটে যেসব পশু ওঠানো হবে সেগুলো রাখার জন্য টঙ্গী ও জয়দেবপুরে দুটি স্থানও নির্ধারণ করেছে জেলা প্রশাসন। এই দুটি স্থানে জেলার বিভিন্ন এলাকা ও বাইরে থেকে যেসব ব্যাপারী, খামারি বা পাইকার গরু নিয়ে আসবেন তাদের থাকা-খাওয়া ও গরু রাখার বিশেষ ব্যবস্থাও করা হয়েছে। প্রশাসনের প্রত্যাশা, গাজীপুরের সচেতন মানুষ এবার করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে অনলাইনেই কোরবানির পশু কিনবেন। তবে খামারিরা আছেন প্রকৃত দাম পাবেন কিনা এবং অনলাইনে ক্রেতা মিলবে কিনা সে চিন্তায়।  

জানা গেছে, গাজীপুর জেলা প্রশাসন থেকে সম্প্রতি জেলার পাঁচটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও ডেইরি মালিক সমিতির নেতাদের ঈদুল আজহা উপলক্ষে গরুর হাট বসানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে অনলাইনে হাট করে কোরবানির পশু বিক্রির বিষয়ে প্রশাসন আগ্রহী। করোনা মহামারির এই সময়ে অনলাইনে গরু বিক্রি হলে ক্রেতা সাধারণের উপস্থিতি অনেকাংশেই কমে যাবে বলে আশা করছেন জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের আশা, হাটটি চালু হলে খামারিরা নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে স্বেচ্ছায় এ হাটে আসবেন। তবে এই হাটে পশুর আকার ও ওজন দেখে দাম নির্ধারণে প্রশাসনের পরিকল্পনা থাকায় ইচ্ছামতো দাম হাঁকার সুযোগ মিলবে কিনা সে বিষয়ে খামারিরা চিন্তিত।

গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দীপক রঞ্জন রায় বলেন, জেলায় মোট খামারির সংখ্যা ৬ হাজার ৮৬৮ জন। তাদের খামারিরা ঈদুল আজহা উপলক্ষে ইতোমধ্যেই গবাদি পশু বিক্রির  উপযোগী করে তুলছেন। এর মধ্যে গরু ৬১ হাজার ১৫০টি, মহিষ ৪০ হাজার ৬৩৫টি এবং ছাগল ও ভেড়া রয়েছে ২০ হাজার ৯১৫টি। এসব গবাদি পশু অনলাইন হাটে আনার প্রচেষ্টা থাকবে তাদের।

গাজীপুর সদর উপজেলার দরগাচালা গ্রামের খামারি খবির হোসেন জানান, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে তিনি ৪৫টি গবাদি পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। ক্রেতারা তার খামারে আসবে কিনা বা ক্রেতাদের কাছে কিভাবে কোরবানির পশুর তথ্য পৌঁছানো যায় তা নিয়ে এখনও শঙ্কিত তিনি।  তিনি বলেন, ক্রেতা পাওয়া তো বটেই করোনা মহামারির এ সময়ে পশুর যথাযথ মূল্য পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছি।

খামারিদের পালন করা এসব গরু মিলবে জেলা প্রশাসনের অনলাইন হাটে।




সদর উপজেলার বানিয়ারচালা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রতি ঈদুল আজহা উপলক্ষে তিনি ৩৫ থেকে ৪০টি গরু কোরবানির উদ্দেশে মোটাতাজাকরণ করে থাকেন। এবার তার খামারে প্রস্তুত করা হয়েছে ৩৫টি গরু। অন্যান্য সময় হাট-বাজারে গরু নিয়ে যেতেন। এবছর এখনও গরুর হাট বসতে শুরু করেনি। এ অবস্থায় কী করবেন তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। ইতোমধ্যে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তার গবাদি পশুর তালিকাও নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী এলাকার গ্রীন এগ্রো পার্কের ব্যবস্থাপক সুমন পাটোয়ারী বলেন, এবার তারা গরু ক্রেতাদের জন্য খামারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রেখেছেন। কেউ গরু পছন্দ করার জন্য সময় নিয়ে থেকে-খেয়ে গরু ক্রয় করতে পারবেন। এছাড়া অনলাইনে গরু বিক্রিরও উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমে পশুর ছবি আপলোড করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এবার তারা ১শ’ ২০টি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রেখেছেন। এর মধ্যে একটি মহিষ রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গবাদিপশুর ওজন পরিমাপ, মূল্য নির্ধারণ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও পেয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনলাইনে পশু বিক্রির প্রচারণারও ব্যবস্থা করা হয়েছে খামারিদের জন্য।

শ্রীপুরের ভাই ভাই ডেইরি নামের একটি খামারের পরিচালক আবু সাঈদ জানান, তিনি প্রতি বছর শতাধিক গরু ঈদুল আজহাকে টার্গেট করে মোটাতাজাকরণ করেন। এবারও তার প্রায় ৭০টি গবাদি পশু (গরু) বিক্রির উপযোগী করে তুলেছেন। তার মতে, পশুর বাজারের স্থান যেমন সীমাবদ্ধ থাকে, তেমনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। অন্তত পক্ষে এখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় এবার কোনও পশুই বাজারে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত তার। তবে অনলাইন বাজার পেলে বিষয়টি ভেবে দেখবেন তিনি।

হাট ইজারাদাররা জানান, গাজীপুরের গবাদি পশুর হাটগুলোয় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পরিবহনযোগে পাইকাররা গবাদি পশু বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। এজন্যই করোনা সংক্রমণের একটি ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। অনলাইনে বিক্রির যে উদ্যোগ জেলা প্রশাসন নিয়েছেন এ বিষয়ে তারা জানান, অনলাইনে পশু বিক্রির উদ্যোগের সফলতা নিয়েও তারা চিন্তিত।

গাজীপুর জেলা প্রশাসনের ইচ্ছা, গরুর আকার ও ওজন দেখে দাম নির্ধারণের, তবে খামারিরা এতে ইচ্ছেমতো দাম হাঁকার সুযোগ পাবেন না।

গাজীপুর জেলা মার্কেটিং বিভাগ ও সিটি করপোরেশন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, জেলায় চার শতাধিক বাজার রয়েছে। পাঁচটি উপজেলায় রয়েছে প্রায় অর্ধশত স্থায়ী বাজার। এসব বাজারে সপ্তাহে একদিন করে গবাদি পশুর হাট বসে। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গাজীপুর ও টঙ্গীতে বিশেষ ১০টি অস্থায়ী হাট বসবে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হাট ইজারার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, এবার করোনা সংক্রমণের কারণে ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে লক্ষ্য রেখে খোলা জায়গায় হাট স্থাপন করতে হবে। অন্যথায় স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে না।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা নুরুজ্জামান মৃধা জানান, করোনার কারণে এবার ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সংক্রমণরোধে তাই ঈদুল আজহায় বাজারের সংখ্যাও কমিয়ে আনা হয়েছে। অস্থায়ী বাজারগুলো এখনও শুরু হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে বাজার পরিচালনা করা হয়, সেজন্য ইজারাদারদের শর্ত দেওয়া হবে। এছাড়া সিটি করপোরেশন থেকে নজরদারিও করা হবে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, অন্যান্য বছরের মতো গবাদি পশুর বাজার জমবে কিনা তা নিয়ে বিক্রেতাদের শঙ্কার খবর আমাদের কাছে রয়েছে। এ অবস্থা মোকাবিলা করতে আমরা অনলাইন প্লাটফরমে পশু বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আগামী শনিবার থেকে এই কর্মসূচি শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। গবাদি পশুর খামারিদের যেসব সংগঠন রয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, অনলাইনে বিক্রির জন্য প্লাটফরম রেডি আছে। এতে পশুর ওজন অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে, যেন ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ প্রতারিত না হয়।

জেলা প্রশাসক বলেন, করোনার সংক্রমণরোধে স্থানীয় বাজারগুলোয় নজরদারি করতে এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। যেসব বাজারে পশু বিক্রি হবে, তারা অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজার পরিচালনা করবেন। অন্যথায় সেসব বাজার বন্ধ করে দেওয়া হবে।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বিমানবন্দরে বাস, প্রকৌশলী নিহত
থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বিমানবন্দরে বাস, প্রকৌশলী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ