X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় ঢাকার বাইরেও অনলাইন কোরবানির পশুর হাটে সাড়া

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
২০ জুলাই ২০২০, ১০:০০আপডেট : ২০ জুলাই ২০২০, ১৬:২২

সিরাজগঞ্জে ১৩ জুলাই চালু হয়েছে পশুর হাট অ্যাপ।

কোরবানির ঈদের বাকি নেই আর দুই সপ্তাহও। ফলে দেশজুড়ে কোরবানিদাতাদের মধ্যে পশু কেনার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে কোরবানির পশুর হাটে যেতে ভয় পাচ্ছেন অনেকেই। স্বাভাবিক সময়ের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী সচেতন বেশিরভাগ মানুষেরই মনে হচ্ছে এসব হাটে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা ভীষণ কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে করোনার সংক্রমণ এড়ানো যাবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এমন পরিস্থিতি মাথায় রেখে রাজধানীর পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনের উদ্যোগে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য অনেক জেলা প্রশাসন নিজ উদ্যোগে তৈরি করেছে ওয়েবসাইট ও অ্যাপ। অনেক জায়গায় ওয়েবসাইট তৈরি সম্ভব না হওয়ায় দেশে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পেজ খোলা হয়েছে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আছে ব্যক্তিগত উদ্যোগও। যতটা শঙ্কা ছিল খামারিদের সাড়া তার চেয়েও বেশি। প্রশাসন ও খামারিদের প্রত্যাশা, ঈদের আগে প্রতিদিনই এসব ওয়েব পোর্টাল, অ্যাপ ও ফেসবুক শপের পরিচিতি বাড়বে।

নরসংদীতে শনিবার অনলাইন হাটের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন।

দেশে বেশ কিছু জেলায় গতকাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের অনলাইন কোরবানির পশুর হাট। কোথাও কোথাও এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে আরও আগে। এজন্য ওয়েবসাইট ও অ্যাপগুলো আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর এগুলো কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, সে বিষয়ে খামারি ও ব্যবহারকারীদের প্রায়োগিক কলাকৌশল দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে গতকাল নরসিংদী, সিরাজগঞ্জ, চাঁদপুর, চুয়াডাঙ্গাসহ কয়েকটি জেলায় কোরবানির পশুর হাটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে জেলা প্রশাসন। নরসিংদীতে জুম কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘অনলাইন বিকিকিনি: নরসিংদীর কোরবানির হাট’ নামক ওয়েবসাইট এবং ‘অনলাইন নরসিংদীর কোরবানির হাট’ নামক মোবাইল অ্যাপের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে উদ্বোধন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত জুম কনফারেন্স সভায় সভাপতিত্ব করেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন।

নরসিংদীর কোরবানির হাট উদ্বোধন করেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

সভায় জানানো হয়, গত বছর নরসিংদী জেলাজুড়ে ৬২টি কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হলেও এবছর ছয় উপজেলায় তা কমিয়ে ২১টি হাট বসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এসব কোরবানির হাটে পশু বিক্রির পাশাপাশি ক্রেতারা ঘরে বসে অনলাইনে এই ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে পশু কিনতে পারবেন। মূলত স্বাস্থ্যবিধি না মেনে পশুর হাটে ক্রেতাদের ভিড় জমানো নিরুৎসাহিত করতেই এই ডিজিটাল হাটের আয়োজন।

ওই সাইট ও অ্যাপসে খামারির নাম, পশুর ছবি, আকার, রঙ, ওজন, উচ্চতা, দাঁত, জাত, দাম, বয়স এবং মুঠোফোন নম্বর দেওয়া থাকবে। এছাড়া এসব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে থাকছে উপজেলাভিত্তিক কসাইদের নামের তালিকা। ঈদের তিনদিন আগে ওই কসাইদের করোনা পরীক্ষা করানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। ক্রেতাদের সুবিধার্থে এমন ২৬টি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এসব ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপসে।

সিরাজগঞ্জে পশুর অ্যাপটি উদ্বোধন করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক।

অনলাইনে কোরবানির পশু বেচাকেনা দেশে গত তিন-চার বছর ধরেই হচ্ছে। তবে এতদিন এসব ছিল কেবলই ব্যক্তিগত উদ্যোগ। মূলত রাজধানী কেন্দ্রিক এসব হাট ছিল সুনির্দিষ্ট কিছু খামারির। ঈদের মূল কোরবানির হাটে বলতে গেলে এর তেমন কোনও প্রভাবই ছিল না। তবে এবার করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইনে পশু বিক্রির প্ল্যাটফর্ম তৈরির বিষয়ে সরকারের মনোযোগ থাকায় এবার সারাদেশেই এর সাড়া পড়বে বলে সচেতনমহল আশাবাদী। আর তা করতে পারলে ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে, যা দেশকে ডিজিটাল দেশে রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।  

‘‘জনবহুল স্থান এড়িয়ে চলি, ‘পশুর হাট’ অ্যাপসে পশু ক্রয়-বিক্রয় করি’’-এমন প্রতিপাদ্য সামনে নিয়ে শনিবার আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে সিরাজগঞ্জে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার জন্য ‘ডিজিটাল পশুর হাট ক্রয়-বিক্রয় অ্যাপ’-এর উদ্বোধন করা হয়েছে। মোবাইল অ্যাপ সেবার মাধ্যমে দেশের সকল খামারির পশু কেনাবেচার সুবিধার জন্য এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে এর মাধ্যমে।

গত ১৩ জুলাই জুম কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অ্যাপটি উদ্বোধন করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। এসময় রাজশাহী  বিভাগীয় কমিশনার ও ৮ জেলার জেলা প্রশাসকগণ অনলাইন জুম অ্যাপসের মাধ্যমে সংযুক্ত হন। সিরাজগঞ্জ প্রান্তে তখন জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদসহ প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তারা ছিলেন।

পশুর হাট অ্যাপে চলছে খামারিদের গরু নিবন্ধন।

উদ্বোধন শেষে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘করোনাকালীন দেশের এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনও বিকল্প নেই। করোনার ফলে সারা বিশ্বে একদিকে যেমন অনেক মানুষ কাজ হারাচ্ছে, তেমনি তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর অনেক নতুন পেশা ও কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হচ্ছে। দেশের এ পরিস্থিতিতে অনলাইনে কোরবানি পশু বিক্রির সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় খামারিরা ন্যায্যমূল্যে তাদের গরু-ছাগল বিক্রি করতে পারবেন। মানুষ যাতে প্রতারিত না হয়, সেজন্য জেলা প্রশাসন, প্রাণিসম্পদ দফতর এবং পুলিশ বাহিনীর সমন্বয়ে পশু ক্রয়-বিক্রয়ের এ ডিজিটাল কার্যক্রম তদারকির জন্য পরামর্শও দেন তিনি। এছাড়া প্রযুক্তিনির্ভর এ সেবাকে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করতে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ডিজিটাল সেন্টারগুলোকে কাজে লাগানো এবং স্থানীয় পত্রিকায় বহুল প্রচার ও প্রচারণা চালানোর জন্য আহ্বান জানান তিনি।

জানা গেছে, পশু বিক্রির ক্ষেত্রে দরকারি সব সুবিধাকেই এই অ্যাপের মধ্যে যুক্ত করা হয়েছে। আর এই অ্যাপের উদ্ভাবক সিরাজগঞ্জ জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান। তিনি রবিবার (১৯ জুলাই) বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘পশুর হাট’ অ্যাপটি শুধু কোরবানির ঈদের জন্য করা হয়নি, এই অ্যাপটি এমনভাবে ডেভেলপ করা, যেন এটি সারা বছরই আমাদের দেশের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে, প্রান্তিক পর্যায়ের সকল খামারির (হাঁস, মুরগি, গরু-ছাগল, মাছ এমনকি সবজি চাষিসহ সকল শ্রেণির খামারির কথা মাথায় রেখে) জন্য অ্যাপটি ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বলেন, শুরুতে শুধু সিরাজগঞ্জ কেন্দ্রিক চিন্তা ভাবনা বা পরিকল্পনা করা হলেও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার মহোদয়ের নির্দেশে ৮টি জেলা নিয়ে পরে এর ব্যাপ্তি বা কর্মকাণ্ড শুরু করা হয়। গত ক’দিনে দেশের অন্যান্য জেলা থেকে এ অ্যাপে সংযুক্ত হতে অনেকে ইচ্ছা পোষণ করছেন।

ওই অনুষ্ঠানে বলা হয়, পশু ক্রয় বা বিক্রয় করার জন্য সব ধরনের তথ্য, নির্দেশিকা ও সহায়তা এ অ্যাপসটির মাধ্যমে পাবেন সব শ্রেণি পেশার মানুষ। খামারি জনগোষ্ঠীকে প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে স্মার্ট খামারি তৈরিতে ‘পশুর হাট’ অ্যাপটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। জেলা প্রশাসনের  তত্ত্বাবধানে যে কোনও জেলার পশু পালন কর্মকর্তাদের সহায়তায় প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে পশুর বিস্তারিত তথ্য সরাসরি দেওয়া হবে এই অ্যাপে। ফলে হাটে না গিয়েও নিজ নিজ এলাকার খামারিরা পশুর ছবি, ভিডিও, উচ্চতা, ওজন, বয়সসহ বিভিন্ন তথ্য দিয়ে অনলাইনে পশু বিক্রি করার সুযোগ পাবেন এর মাধ্যমে।

সরকারের ফুডফরনেশন ওয়েবসাইটের সহায়তায় চুয়াডাঙ্গায় চালু হয়েছে অনলাইন গরুর হাট

এভাবে বিভিন্ন জেলাতেই চলছে অ্যাপের মাধ্যমে গরুর হাট। চুয়াডাঙ্গা জেলায়  https://foodfornation.gov.bd/ নামে অনলাইন হাটে শুরু হয়েছে কোরবানির গরু বিক্রির কার্যক্রম। সরকারি এই ওয়েবসাইটটি সম্প্রতি চালু হয়েছে। জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অনলাইন গরুর হাটটি পরিচালিত হচ্ছে। 

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এটি মূলত স্টার্টআপ বাংলাদেশ ও একশপ এর যৌথ উদ্যোগ যা সরকারের ডিজিটাল হাট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি সারাবছরই চালু থাকে এবং সব ধরনের পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করা যায় এখানে। কোরবানি উপলক্ষে গরু বেচাকেনার জন্য এখানে একটি আলাদা ট্যাব যুক্ত করা হয়েছে। এই ট্যাবে ঢুকে হাটের দামি গরুগুলো তো সহজে চোখে পড়েই ক্রেতা তার বাজেট নির্দিষ্ট করে দিলেও চলে আসে সেই বাজেটে প্রদর্শিত গরুগুলো। একইভাবে ছাগল ভেড়া মোষ এজাতীয় পশুও এখানে খুঁজে বের করা যায় সহজেই। ফলে যেকোনও ক্রেতা একবার এই হাটে প্রবেশ করলে তার কাঙ্ক্ষিত মূল্যে কী ধরনের গরু আছে তা ঘরে বসেই দেখতে পারছেন।

জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, এ জেলার সব উপজেলাতেই অনলাইন গরুর হাটের ব্যাপারে অবহিত করানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে সকল ইউনিয়ন পরিষদ ও ৪টি পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারি ও গরু-মহিষ এবং ছাগলের তথ্য সংগ্রহ করে সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশের জন্য।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চালু করা অনলাইন পশুর হাটে গরুর দরদাম

চাঁদপুরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনলাইনে চালু হয়েছে কোরবানির পশুর হাট ‌'কোরবানির পশু যাবে বাড়ি’। করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি কমাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।  সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ঈদের আগে শেষ সপ্তাহে জমতে পারে এ অনলাইন হাট।

এসব অনলাইন হাটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ক্রেতাকে পশুর কাছে যেতে হবে না। তিনি অনলাইনে পশুটি সম্পর্কে সব তথ্য দেখে যাচাই করে বিক্রেতার সঙ্গে ওয়েবসাইট অ্যাপ ও ফোনের মাধ্যমে দরদাম করতে পারবেন। এরপর টাকা পাঠালে কোরবানির পশু আনতে হবে, পশু নিজেই খামারির লোকদের মাধ্যমে ঈদের আগের দিন পৌঁছে যাবে ক্রেতার বাড়ি।

ফলে এসব উদ্যোগ বেশ সাড়া ফেলেছে বলেই জানাচ্ছেন ওয়েবসাইট সংশ্লিষ্টরা।

হাকিমপুর প্রাণীসম্পদ অফিসের কোরবানির পশুহাট নিয়ে ফেসবুক পেজ

যেসব জেলা উপজেলা প্রশাসন ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেনি সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে খুলেছে অনলাইন শপ। হিলি উপজেলা প্রশাসনের এমন ফেসবুক পেজে বেশ সাড়া মিলেছে বলে জানিয়েছেন হাকিমপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সামাদ। এরই মধ্যে এই পেজ থেকে ১১টি কোরবানির পশু বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, আমাদের খানা জরিপে এবারে কোরবানির চাহিদা রয়েছে ৬ হাজার ৬৫০টি পশুর। এর বিপরীতে ৯ হাজার ১৮৮টি পশুর জোগান রয়েছে, যা আমাদের চাহিদার তুলনায় বেশি। তবে করোনাকালীন সময়ে খামারিদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা মার্কেটিং বা বিপণন। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কোরবানির পশু হাটে যাতে ক্রেতাদের না যেতে হয় সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা আমাদের দফতর থেকে একটি গ্রুপ পেজ খুলেছি। এতে খামারিদের বিক্রয়যোগ্য পশুর ছবি, ওজন অনুযায়ী মূল্য ও খামারিদের মোবাইল নম্বর আপলোড করা হচ্ছে। ক্রেতারা সংশ্লিষ্ট খামারিদের সঙ্গে কথা বলে বাড়িতে বসেই কোরবানির পশু ক্রয় করতে পারবেন। এতে করে আমরা মনে করি ক্রেতা-বিক্রেতা ঘরে বসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের পছন্দের পশুটি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন। এই কার্যক্রম চালুর পর থেকে স্থানীয়দের মাঝ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি আমরা।

হিলির অনলাইন পশুহাটে নিবন্ধিত গরু

তবে সব জেলা প্রশাসন এ উদ্যোগের সঙ্গে এখনও যেতে পারেনি। জানা গেছে, পরিকল্পনা থাকলেও যথাযথ প্রস্তুতির অভাবে এখনও চালু হয়নি গাজীপুর জেলা প্রশাসনের অনলাইন হাট। দু’একদিনের মধ্যে এই হাট চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। বিভাগীয় জেলা শহর হলেও ময়মনসিংহেও এখনও চালু হয়নি অনলাইন কোরবানির পশুর হাট। আর খাগড়াছড়িতে হাট চালু করার ক্ষেত্রে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন ও খাগড়াছড়ি বাজার ফান্ডের মধ্যে ঠেলাঠেলি চলছে। কে এই দায়িত্ব নেবে তার সুরাহা না হওয়ায় এই জেলায় অনলাইন হাট চালুর কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।

হাকিমপুরের প্রাণী সম্পদ দফতরের পেজটিতে গরুর পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে কোরবানির ছাগলও

তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগগুলোও এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। জেলা প্রশাসন যেখানে ভূমিকা রাখছে না সেখানে কিংবা জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলেও এর বাইরেও শিক্ষিত খামারিদের অনেকেই ফেসবুকে অনলাইন শপ ‍খুলে বিক্রি করছেন নিজেদের খামারের কোরবানির পশু। অনেকে জানিয়েছেন সাড়াও পাচ্ছেন বেশ। যেমন ময়মনসিংহের ফুলপুরের ভাইটকান্দি বাজারের ডেইরি খামারি জহিরুল হক বাসান। এবার কোরবানি ঈদে পশু বিক্রি করতে দেশি জাতের ৫০টি ষাঁড় মোটাতাজাকরণ শুরু করেন এই খামারি এক বছর আগে থেকে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে হাটে এসব পশু বিক্রি করা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। ফলে শিক্ষিত যুবক জহিরুল হক বাসান প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি বিকল্প বাজার হিসেবে নিজ উদ্যোগে ফেসবুককে বেছে নেন। ফেসবুকে ‘বিগ ব্যাং অ্যাগ্রো’ নামে অনলাইন শপ খুলেছেন তিনি। তার এই ওয়েব পেজে বিক্রি করার উপযোগী পশুর ছবি সিরিয়াল করে সাজিয়ে এগুলোর লাইভ ওজন এবং কাঙ্ক্ষিত মূল্য উল্লেখ করে পোস্ট করেছেন তিনি।

ময়মনসিংহে প্রশাসন কোরবানির পশুর হাটের উদ্যোগ না নিলেও খামারিরা নিজেরাই ফেসবুকে গড়ে তুলেছেন অনলাইন শপ। বিক্রিও হচ্ছে ভালো

খামারি জহিরুল হক বাসান জানান, অনলাইন শপের পশুর ছবি ও দাম দেখে শনিবার (১৮ জুলাই) এর মধ্যে ৩৫টি পশু বিক্রি হয়ে গেছে। বাকিগুলোর দরদাম চলছে। সেগুলোও দ্রুতই বিক্রি হয়ে যাবে বলে আশাবাদী তিনি। খামারি বাসান আরও জানান, বিক্রি হওয়া পশু ঈদের আগের দিন ক্রেতার বাড়িতে হোম ডেলিভারি দেওয়া হবে। হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা থাকায় ক্রেতারা বেশি আগ্রহী হয়েছে পশু কেনায়।

অবশ্য, নিয়মিত পশুর হাটগুলোর মতো অনলাইন কোরবানির পশুর হাটগুলোতেও বিক্রি এখনও ঢিলেঢালা। এ বিষয়ে অনলাইন কোরবানির পশুর হাটের সঙ্গে জড়িত একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,  ব্যাপক প্রচার না হওয়া, অনলাইনের বিষয়ে সাধারণ মানুষের জ্ঞান কম থাকা, কারিগরি ত্রুটি ইত্যাদি কারণে এই হাটের প্রচার এখনও কম জেলাগুলোতে। দীর্ঘদিনের অভ্যাসবশত হাটে গিয়েই গরু কেনার আগ্রহ ইত্যাদি কারণে কিছু মানুষ অনলাইন হাটে আগ্রহী হবে না এটাও স্বাভাবিক। তবে আমাদের উদ্যোগ চলমান রয়েছে।

ময়মনসিংহে অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির গরু

অনলাইনের কোরবানির হাট সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, আমাদের ধারণা, সমাজের সচেতন মানুষের একটি বড় অংশের সাড়া দেশজুড়ে এসব অনলাইন মার্কেট পাবে। ঈদের এখনও প্রায় দুই সপ্তাহ বাকি। এরমধ্যে অনেকেই এই হাট সম্পর্কে জানছেন। কিনুন না কিনুন নিজেরা দেখছেন এর লিংক পরিচিত অন্যদের কাছে শেয়ার করছেন এবং করবেন। এর মাধ্যমে আমরা আশাবাদী, এলাকার মানুষ নিজেরাই পরস্পরের কাছে এসব অনলাইন শপকে পরিচিত করে তুলবে। আর এদেশের মানুষের প্রচলিত অভ্যাস হচ্ছে শেষ তিন-চারদিনের মধ্যে কোরবানির পশু কেনা। ফলে যেহেতু সাড়া আছে, সম্ভাবনা এখনও আছে।

তিনি বলেন, এবার যদি কোরবানির পশুর বাজারের ৫ থেকে ১০ শতাংশও অনলাইনের মাধ্যমে কেনাকাটা হয় তাহলেও ভবিষ্যতে এই বাজারের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। 

/টিএন/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী