X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

খামারিদের চোখে-মুখে বিষাদের ছায়া!

আশরাফুল ইসলাম, মেহেরপুর
২৮ জুলাই ২০২০, ১১:০০আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২০, ০৮:৩৫

গরুর হাট
কোরবানির ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। প্রতিবছর এমন সময়ে মেহেরপুরের পশুর হাটগুলো জমে ওঠে। কিন্তু এবার থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। প্রচুর গরু উঠলেও বাজারে নেই ক্রেতা বা ব্যাপারিদের তেমন আনাগোনা। কিছু পশু বিক্রি হলেও দাম পাচ্ছেন না খামারিরা। পশু পালনে খরচের টাকা উঠবে কিনা তা নিয়েই সংশয়ে আছেন তারা। এমতাবস্থায় খামারিদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে বিষাদের ছায়া।   

মেহেরপুরে তিনটি পশুর হাট। গোহাট দু’টির একটি মেহেরপুর শহরে আরেকটি গাংনীর বামুন্দিতে এবং বাড়াদিতে রয়েছে ছাগলের হাট। এসব হাটে পশুর সরবরাহ চোখে পড়ার মতো। কিন্তু বেচা-বিক্রি নেই বললেই চলে। এদিকে, করোনার মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জেলায় চালু করা হয়েছে অনলাইন পশুরহাট। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কোরবানির পশু বিক্রির চেষ্টা করছেন অনেক খামারি। কিন্তু সেখানেও ক্রেতাদের তেমন আগ্রহ নেই।

গরুর খামার

জানা যায়, মেহেরপুরে বর্তমানে বিক্রয়যোগ্য লক্ষাধিক গবাদি পশু আছে। ৩৭ হাজার গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। উৎপাদন খরচ বাড়লেও করোনার কারণে কমে গেছে ক্রেতা সমাগম ও গবাদি পশুর দাম। এ কারণে এবার শতকোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন খামারিরা। তাদের আশঙ্কা প্রতিটি গরু-মহিষে লোকসান হবে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে, তাও যদি বিক্রি করা যায়। জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা সরকারি প্রণোদনার দাবি জানাচ্ছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, জেলায় নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত মিলে খামার রয়েছে ৩০ হাজার ৯০৪টি। অনেকে ঋণ নিয়ে খামার গড়েছেন। ঋণ নিয়ে খামার গড়া যুবকরা এবার বেশি আতঙ্কগ্রস্ত। লোকসানের সম্মুখীন হলে তারা সোজা হয়ে দাঁড়ানোর শক্তি হারাবেন।

গরুর খামার

জেলা সদরের বেশ কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা গেছে, নেপালি, অস্ট্রেলিয়ান, ফ্রিজিয়ান, হরিয়ানাসহ নানা জাতের গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। দরিদ্র কৃষকের বাড়িতেও দুয়েকটি করে গরু। সচ্ছলদের খামারগুলো গরুতে ভরা। লাভজনক হওয়ায় বসতবাড়িতে গরু পালন করা প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক পরিবারের। সারা বছর গরু পালনের পর এখন এসেছে বিক্রির সময়। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের পরিচর্যা। গরু বিক্রির টাকায় মিটবে পরিবারের চাহিদা। বাড়তি অর্থ দিয়ে আবারও নতুন গরু কেনার আশা তাদের মধ্যে। কিন্তু পশুর বাজার ভালো না হওয়ায় হতাশা দেখা গেছে খামারিদের মাঝে। 
সৌদিফেরত সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের আফ্ফান হোসেন দেশে ফিরে গত বছর একটি গরুর খামার গড়ে তোলেন। বিদেশে উপার্জিত টাকায় খামারে উন্নত জাতের ১৫টি এঁড়ে ও ১২টি বকনা গরু কিনে লালন পালন করেন। এখন পুঁজি হারাবেন বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

গরুর খামার

গাংনীর গরুর খামারি এনামুল হক জানান, গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত গরু পালন হচ্ছে সমানে। গ্রামের একেকটি বাড়ি যেন একেকটি খামার। নারী-পুরুষ মিলে পরিচর্যা করেন গরুগুলো। নিজের সন্তানের মতোই আদর করে পশুগুলো পালন করা হয়। এগুলো যেন তাদের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। কিন্তু করোনার কারণে এবার লোকসান হবে এটা নিশ্চিত বলে মনে করছেন তারা। 

একটি বাড়ি একটি খামারের সদস্য সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের নার্গিস খাতুন। পল্লি সঞ্চয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিনি একটি গরু লালন পালন করেন। এখন গরুর চাহিদা না থাকায় ঋণ পরিশোধ নিয়ে তিনি আতঙ্কিত।

গরুর খামার

গরু পালনে নানা রঙের স্বপ্নের জাল বোনা সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের আম্বিয়া খাতুন জানান, তিনি গত কোরবানির পর ৪০ হাজার টাকায় একটি বাছুর গরু কেনেন। লালন পালনে খরচ গেছে ৩০ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে তার গরুটির দাম উঠেছে ৬০ হাজার টাকা। তিনি সরকারিভাবে তাদের মতো গরু পালনকারীদের জন্য প্রণোদনা দাবি করেন।

সদর উপজেলার শালিকা গ্রামের খামারি জিল্লুর রহমান জানান, তার খামারে ৫২টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। পশুপালনের খাদ্যসহ উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে ব্যয় বেড়েছে। করোনার কারণে অনলাইন হাট চালু হলেও সেখানেও ক্রেতাদের কোনও সাড়া মিলছে না। এবার অনেক খামারি পুঁজি হারিয়ে ফেলবেন। বন্ধ হবে অনেক খামার।      

গরুর খামার

গরুর ব্যাপারি নুরফান হোসেন বলেন, ‘গত কোরবানির ঈদেও আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরুর দাম করে বায়না করতাম। সেসব গরু ঈদের আগে ঢাকা, চিটাগাং-এর হাটে তুলতাম। এবার করোনার কারণে ক্রেতা পাওয়া যাবে না—এমন আশঙ্কায় বায়না করতে পারছি না।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, এবার মেহেরপুরে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত খামারি ও পারিবারিকভাবে গরু, মহিষ ও ছাগল মিলে এক লাখ এক হাজার ২০টি গবাদি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলার চাহিদা ৭০ হাজার পশু। খামারি ও প্রান্তিক চাষিরা একটা কোরবানির ঈদের পর আর একটা কোরবানির ঈদ আসা পর্যন্ত গবাদি পশুগুলোকে পরম মমতায় লালন পালন করে বিক্রি যোগ্য করে তোলেন। একেকটি গরু একেকটি পরিবারের বেঁচে থাকার স্বপ্ন।

জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান জানান, নিরাপত্তা বিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুহাট চলছে কিনা তা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ নিয়মিত তদারকি করছে। গোহাটে তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে ভেটেরেনারি ক্যাম্পও বসানো হয়েছে। যাতে খামারি ও গরু পালনকারীরা নিরাপদে তাদের গরু বিক্রি করতে পারেন। হাটে সমাগত লোকজন মাস্ক ব্যবহার করছে কিনা তাও দেখাশোনা করছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ। এ বছর বাইরের দেশ থেকে যাতে কোনও গরু দেশে না আসতে পারে, সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমান্তে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

/আইএ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কুকি চিনকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা: নুর
কুকি চিনকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা: নুর
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
সর্বাধিক পঠিত
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা   
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা