X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাল যানজট ছিল না পথে আজ কী হবে?

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
৩১ জুলাই ২০২০, ০৪:২২আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২০, ০৬:৪৯

রাজধানীর রাস্তায় বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল। (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)





রাত পোহালেই কাল ঈদ। আজ শুক্রবারও তাই ঘরে ফেরার তাড়া থাকবে মানুষের। তবে বৃহস্পতিবারের মতো ঝঞ্ঝাটবিহীন মহাসড়ক আজও থাকবে তো?

বৃহস্পতিবার শেষ অফিস থাকলেও ঘরে ফেরার তাড়ার কারণে অনেকে নিয়েছেন ছুটি, অনেকে অফিসেই ব্যাগ মালপত্র নিয়ে হাজির। কোনোমতে হাজিরা দিয়ে দে ছুট। সরকার করোনা মহামারির কারণে কোরবানির ঈদে যাতে মানুষ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, চট্টগ্রামের মতো বড় শহর ছেড়ে গ্রামে না যায় সেজন্য দূরপাল্লার যাত্রীবাহী যানবাহন সীমিত করে রেখেছে। ট্রেনবহরেও ঈদ স্পেশাল সার্ভিস চালু হয়নি। পোশাক কারখানাগুলো ছুটি মোটে তিন দিনের। তারপরও করোনার ভয়কে মনের মধ্যে রেখে লোকাল বাস আর সীমিত দূরপাল্লার বাসকে আশ্রয় করে রাজধানী ও আশেপাশের শহরগুলো থেকে বাড়ির পথে বের হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা বলে কথা। তবে এটাও ঠিক, অন্য বছরগুলোর তুলনায় এ ভিড় অনেক কম।

লঞ্চগুলো এভাবেই ভরে গেছে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই। (ছবি: ফোকাস বাংলা)
বৃহস্পতিবার সড়কে যানবাহনের চেয়ে মানুষের সংখ্যা বেশি হলেও গত রোজার ঈদের মতো এবার পথে পথে পুলিশ তাদের বাধা দেয়নি। ফলে বড় বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, ট্রাক, মিনি ট্রাক, টেম্পো, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এমনকি ভ্যান-যে যেভাবে পারে ঘরের পথে রওনা হয়েছে। সড়কে বেশ চাপ থাকলেও যানজট ছিল না তেমন একটা। রাজধানীতে কোরবানির পশু নিয়ে আসা ট্রাকগুলো ফেরার সময় ভরে গেছে সাধারণ মানুষকে পথে পথে তুলে নিয়ে। অন্য পণ্যবাহী  ট্রাকগুলোও একইভাবে ভরে চলে গেছে বিভিন্ন রুটে। মহাসড়কে দাঁড়ানো প্রত্যক্ষদর্শীদের অনুমান, এবার বাসের চেয়ে ট্রাকেই গ্রামমুখী মানুষ গেছে বেশি।  যাত্রা এদিন মোটামুটি নিরাপদই হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-মাওয়া, গাজীপুর-টাঙ্গাইল সব মহাসড়কে যাত্রীর চাপ থাকলেও যানজট ও বড় দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এমনকি টাঙ্গাইল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে সিরাজগঞ্জের উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গগামী দুই মহাসড়কেই দেখা যায়নি কোনও যানজট। হাইওয়ে পুলিশসূত্র জানিয়েছে, পথে পথে পুলিশ প্রহরা থাকায় যানজট তৈরি হয়নি। এদিন আবহায়া ভালো থাকায় বৃষ্টিরও উপদ্রব ছিল না তেমন- মোটামুটি নিরাপদেই গন্তব্যে পৌঁছেছে মানুষ। তবে বাস ট্রাকঅলারা সুযোগ বুঝে অতীতের মতোই গলা কেটেছে সাধারণ যাত্রীদের। যে যেভাবে পেরেছে নিয়েছে ইচ্ছেমতো ভাড়া। নৌপথেও লঞ্চগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। সদরঘাট থেকে ছাড়া প্রতিটি লঞ্চের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। ভিড় ছিল না ফেরিঘাটগুলোতেও। এমন চিত্র হয়তো দেখা যাবে আজ শুক্রবারও।

লঞ্চের ভেতরে ছিল না স্বাস্থ্যবিধির কোনও নিয়মনীতি। অনেক যাত্রীই ছিলেন মাস্ক ছাড়া। (ছবি: ফোকাস বাংলা)
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বাসস্টেশনে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিকসহ নিম্নআয়ের মানুষ যে যেভাবে পারছে বাস-ট্রাকে করে নিজ নিজ গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন বাস স্টেশনে ভিড় জমিয়েছেন। আর এই সুযোগে পরিবহন মালিক ও চালকরা ভাড়া দ্বিগুণ তিনগুণ আদায় করে নিচ্ছে।
নগরের চাষাঢ়া পয়েন্টে শ্যামলী কাউন্টারে দেখা যায়, উত্তরবঙ্গগামী প্রতিটি সাধারণ বাসে যাত্রীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত।
নারায়ণগঞ্জ থেকে নীলফামারীগামী যাত্রী সাবিকুন্নাহার জানান, রোজার ঈদে বাড়ি যেতে পারিনি। তাই এবার বাবা মায়ের সাথে ঈদ করার জন্য বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু বাসস্টেশনে দেখি এসে দেখি দুইশ আড়াইশো টাকার ভাড়া ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে বাস কাউন্টারের লোকেরা।

নারায়ণগঞ্জের বাসস্ট্যান্ডে ঘরমুখো যাত্রীর ভিড়
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল, কাচপুর মদনপুর, মোগরাপাড়া, মেঘনাঘাটসহ সবগুলো বাস স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। বাসের জন্য অপেক্ষা করে জটলা পাকিয়ে ছিলেন যাত্রীরা। দূরপাল্লার কোনও বাস আসলেই যাত্রীরা বাসে ওঠার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। যাত্রীদের অভিযোগ এবারের ঈদে পরিবহন যাত্রী পরিবহনের জন্য বিশেষ ট্রেন বা বাস সার্ভিস না থাকার কারণে ঈদে ঘরমুখো মানুষকে সাধারণ পরিবহনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে বেশি। বাস-ট্রেনের স্পেশাল কোনও সার্ভিস না থাকার কারণে মহাসড়কে মানুষের ভিড় ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আর এই সুযোগ বুঝে পরিবহন শ্রমিকরা প্রতিটি যাত্রীর কাছ থেকে তিন থেকে চার গুণ করে ভাড়া আদায় করছেন।

যানবাহন না থাকলেও যাত্রী আসছেই। (ছবি: নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি)
শিমরাইল থেকে কুমিল্লাগামী যাত্রী আব্দুর রব মিয়া জানান, শিমরাইল মোড় থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত যেতে আগে ভাড়া গুনতে হতো ২২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। স্টার লাইন এর গাড়িতে শিমরাইল থেকে কুমিল্লা যাওয়ার জন্য ৪০০ টাকা টিকিট কিনেছি।

এব্যাপারে শিমরাইল মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট শরীফ হোসেন বলেন, দুপুরের পর থেকেই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। বিকেলের দিকে রাস্তা কিছুটা যানজট ছিল। তবে এখন যানজট নেই। রাস্তায় যাতে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করতে পারে সেজন্য মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশ কাজ করছে।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, ঈদ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার থেকেই ছুটি শুরু হয়ে গেছে গার্মেন্টস ও সরকারি অফিস আদালতসহ অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। যদিও গাজীপুরের বেশিরভাগ পোশাক কারখানা সরকারি নির্দেশনা মেনে এবার শুধু ঈদের তিন দিন ছুটি দিয়েছে।
তবে অনেকেই ঈদের ছুটির সঙ্গে দুই দিন বা একদিন ছুটি নিয়ে ছুটে চলেছেন আপন আপন ঠিকানায়। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে তাই বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সড়ক পথে সামাজিক দূরত্ব না মেনে করোনা ভাইরাসের ভয় মাথায় নিয়েই বাড়ি ফিরছেন।

আব্দুল্লাহপুর থেকে বিকেল সাড়ে ৫টায় ময়মনসিংহ যাওয়ার উদ্দেশে ২০০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকায় দিয়ে বাসে চড়েন রায়হানুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। দুই ঘণ্টার রাস্তা সাড়ে তিন ঘণ্টায় পাড়ি দিয়ে রাত ৯টায় বাড়ি পৌঁছেছেন তিনি।

মোটরসাইকেলে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা। (ছবি: ফোকাস বাংলা)
তিনি ফোনে জানিয়েছেন, শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা থেকে এমসি বাজার পর্যন্ত থেমে থেমে গাড়ি চলছে। তারপরেও গাড়ি সংকটের কারণে বাড়ি ফিরতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন যাত্রী সাধারণ। যাত্রীদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে বাসচালকদের বিরুদ্ধে।

টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর উপজেলার বাসিন্দা টঙ্গীর আর্শিয়া অ্যাপরেলস কারখানার সুইং অপারেটর সুজন মিয়া বলেন, রাস্তায় গাড়ি কম। ভাড়া বেশি। তারপরও তিনদিন ছুটির মধ্যেই কষ্ট করে হলেও বাসায় পৌঁছেছি। বাসে গাদাগাদি করে আমরা উঠেছি। করোনার কোনও ভয় কারও মধ্যে দেখি নাই। অনেকের মুখে মাস্ক ছিল, অনেকের মুখে ছিল না। সবাই বাড়ি যাচ্ছে এটাই আমাদের আনন্দ।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী গ্রামের আব্দুল জব্বার। গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকার লিজ ফ্যাশন কারখানায় ডিস্ট্রিবিউটরের চাকরি করেন। বিকেল ৫টায় কারখানা ছুটির পর হোস্টেল থেকে রাত ৮টায় বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন। বাড়ি পৌঁছানোর আগে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, পথে পথে যানবাহন কম। অনেকে ট্রাক ও পিকআপে করে নারী-পুরুষ একসাথে সামাজিক দূরত্ব না মেনে বাড়ি ফিরছে।

মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ আর এম আল মামুন জানান, এমসি বাজার এলাকায় বিকেল ৫টায় গার্মেন্টস ছুটি দেওয়ার কারনে কিছুটা যানজট ছিল। তবে, ঘরেফেরা যাত্রীদের তেমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। থেমে থেমে গাড়ি চলাচল করেছে।

ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ছিল এমনই ফাঁকা দিনভর।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলার দুই প্রান্তে দুই মহাসড়ক। একটি ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ও অন্যটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। দুই মহাসড়কে বৃহস্পতিবার ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের তেমন কোনও চাপ লক্ষ্য করা যায়নি। উভয় মহাসড়কে যান চলাচল একেবারে স্বাভাবিক।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের হাঁসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাসেদ জানান, যাত্রীবাহী যান চলাচল স্বাভাবিক। কোথাও কোনও যানজট নেই। এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি। তবে চলতি পথে দুই একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাসির উদ্দিন মজুমদার জানান, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কম। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ একেবারেই নেই।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে পারাপারে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ সময় লাগছে। পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া যেতে ফেরিগুলোকে স্রোতের প্রতিকূলে প্রায় তিন কিলোমিটার নৌপথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। এসব কারণে ফেরির ট্রিপ সংখ্যা কমে গেছে।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানিয়েছে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ছোটবড় মিলিয়ে ১৫টি ফেরি চলছে। এসব ফেরিগুলোকে স্রোতের প্রতিকূলে চলতে প্রচণ্ড বেগ পেতে হচ্ছে।
তবে ঈদের আগে প্রতিবছরই যাত্রী ও যানবাহনের বাড়তি চাপ থাকলেও এবার পাটুরিয়া ফেরিঘাটে অপেক্ষাকৃত যানবাহন ও যাত্রীর চাপ কম। অন্যান্য ঈদের আগে এ ঘাটে যেখানে আড়াই শতাধিক যাত্রীবাহী বাস নদী পারাপারের জন্য অপেক্ষায় থাকত, সেখানে এবার এর অর্ধেকেরও কম যানবাহন দূরপাল্লার ফেরিপারের জন্য অপেক্ষায় ছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে এই চিত্র ছিল পাটুরিয়া ফেরি ঘাট এলাকায়।

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ওঠার জন্য এভাবেই দীর্ঘসারি ছিল যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোর। এখানে যানবাহনগুলোর অপেক্ষার কারণ ছিল তীব্র স্রোতের কারণে ফেরিগুলোর সময়মতো লোড-আনলোডে সমস্যা। যানজট ছিল না।
এদিকে যানবাহনের মাত্রা কম থাকলেও পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত ও ফেরিসংকটের কারণে পারাপার কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে ঘাট এলাকায় আসার পর গাড়িগুলোর ফেরিতে উঠতে বেশ সময় লাগছে। মালবাহী যানবাহন পারাপার বন্ধ থাকলেও প্রতিটি যাত্রীবাহী বাসকে এক থেকে দুই ঘণ্টা করে ঘাট এলাকায় অপেক্ষা করতে হচ্ছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তিগত ছোটগাড়ির চাপ ছিল। এসব গাড়িকে পাটুরিয়া-উথলী সড়কের নবগ্রাম এলাকা থেকে ভেতরের বাইপাস সড়কে পাঠিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। এসব গাড়ি নবগ্রাম-নালী বাইপাস সড়ক হয়ে পাঁচ নম্বর ঘাটে যাচ্ছে। এরপর সব গাড়ি পাঁচ ও চার নম্বর ঘাট থেকে ফেরিতে উঠছে।




বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) খন্দকার মুহম্মদ তানভীর হোসেন বলেন, 'আমরা যে পরিমাণ যাত্রীর চাপ ধারণা করেছিলাম, সে পরিমাণ যাত্রী আসেনি। একে তো করোনা সংকট তার ওপর বন্যার পানি। মূলত এই কারণে এবার পাটুরিয়ায় যাত্রীদের চাপ এখন পর্যন্ত কম। তাছাড়া করোনা সংকটে অনেকেই বেকার হয়ে আগেই ঢাকা ছেড়েছেন।'



বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক কোনও সমস্যা না হলে যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে সমস্যা হবে না।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও ছিল না যানবাহনের চাপ।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ঈদযাত্রায় স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ সড়কে টাঙ্গাইল অংশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কোথাও যানজট দেখা যায়নি।

এবার উত্তরের বিভিন্ন জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে গেছে অধিকাংশ ঘরবাড়ি। এ কারণে অনেকে এবার গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে ঢাকাতেই ঈদ করবেন। এজন্য উত্তরের পথে গাড়ির চাপ কম বলে জানা গেছে। তবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই দূরপাল্লার বাসসহ ট্রাক-পিকআপে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী আয়ুবুর রহমান বলেন, ‘এখনও মহাসড়কের কোথাও যানজটের সৃষ্টি হয়নি। যানবাহন স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করছে। তবে সন্ধ্যায় গাড়ির চাপ কিছুটা বাড়তে পারে।’

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে যানজট নিরসনে গোড়াই থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে ছয় শতাধিক পুলিশ সদস্য তৎপর রয়েছেন। যানজটের পাশাপাশি চুরি-ছিনতাই প্রতিরোধেও কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা।’

সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে পুলিশের অবস্থান। যানবাহন চলাচল করে কোন ঝামেলা ছাড়াই।



সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিছুটা চাপ থাকলেও বৃহস্পতিবার দিনভর যানজট ছিল না সিরাজগঞ্জের ব্যস্ততম ঢাকা-হাটিকুমরুল-রাজশাহী ও পাবনা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কে। ঈদ এলেই ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চল অভিমুখে ওই দু’টি মহাসড়ক দিয়ে ঘরমুখো মানুষজনের চাপ বাড়ে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে প্রতিবছরই এমন চিত্র চোখে পড়ে। দুর্ভোগের রুট হিসেবে খ্যাত ওই দু’টি মহাসড়ক এবার এখনও স্বাভাবিক।




মাঝে মধ্যে থেমে থেমে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত যানজট চোখে পড়েনি। ট্রাকে চরে ঘরমুখো নিম্ন আয়ের মানুষদের বাড়ি ছুটতে দেখা গেলেও দুর্ঘটনা ঘটেনি। এদিকে, দুর্ভোগ এড়াতে বিপুল সংখ্যক জেলা ও হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছেন।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সকাল থেকে মহাসড়কে যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ থাকলেও কোনও যানজটের সৃষ্টি হয়নি। কড্ডা ট্রাফিক ফাঁড়ির এটিএসআই আব্দুর রশিদ বলেন, শুক্রবার থেকে হয়তো কিছুটা চাপ বাড়তে পারে। হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি নূরন্নবী প্রধানকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হাটিকুমরুল মোড়ে জ্যাম ও দুর্ঘটনা রোধে মাইকিং করে চালকদের সচেনতনতা করতে দেখা গেছে।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত এ মহাসড়ক স্বাভাবিক রয়েছে।

সড়কে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ থাকায় সিরাজগঞ্জের উত্তরবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গ হয়ে দক্ষিণবঙ্গগামী সড়কে কোনও জট ছিল না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, নির্বিঘ্নে ঈদ যাত্রায় সিরাজগঞ্জ জেলায় ১০২ কিলোমিটার মহাসড়কজুড়ে তিন শিফটে ২৫০ জন জেলা পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। ১৮টি পেট্রোল টিম, ছয়টি গাড়ি ও ১৩টি মোটরসাইকেল দল এবং তিনটি তদারকি দল প্রতি শিফটে মহাসড়কেই অবস্থান করছে। এবার আগে থেকেই তারা মাঠে রয়েছেন।

বগুড়া হাইওয়ে পুলিশ সুপার মো. শহিদ উল্লাহ বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) বলেন, সিরাজগঞ্জের দু’টি মহাসড়কসহ বগুড়া ও রংপুরের মহাসড়ক পর্যন্ত ৬৫০ জন পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। দু’দিন থেকে আমি নিজে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মোড়ে অবস্থান করছি। বুধবার সিরাজগঞ্জের দু’টি মহাসড়ক দিয়ে ৩৫ হাজার ৮’শ ৫৫টি যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু পারাপার হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে। সিরাজগঞ্জসহ বগুড়া ও রংপুরের মহাসড়কে যানবাহনের দুর্ঘটনা তাৎক্ষণিক নিয়ন্ত্রণে ৩টি অ্যাম্বুলেন্স ও ৪টি র্যাকার এবং হোন্ডা ট্রুপ ক্যারেড দল সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার পোশাককর্মীরা উত্তরের দিকে যাওয়ায় ট্রাকে চরে যাবার বিষয়টি ঠেকানো সম্ভব হয়নি। ঈদে কোনোভাবেই মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি বা কোরবানির পশুর ট্রাকে চাঁদাবাজি করতে দেওয়া হবে না।

তবে পথে কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনারও খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে নরসিংদীর শিবপুরে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী, কুমিল্লার হোমনায় একইভাবে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে প্রাইভেট কারে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিন জন নিহত হয়েছেন।  

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: ‘অপরাধ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে’
প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: ‘অপরাধ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে’
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো সেনাসহ ২৮৮ বিজিপি সদস্যকে
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো সেনাসহ ২৮৮ বিজিপি সদস্যকে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে বাইডেনের সই
ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে বাইডেনের সই
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা