X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বাসায় গিয়ে তরুণীকে মারধর করে ভিডিও প্রকাশ, গ্রেফতার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
৩০ আগস্ট ২০২০, ০৪:৪১আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২০, ০৫:০৩

গ্রেফতার তিনজনের একজন সাখাওয়াত।

চট্টগ্রামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এক তরুণীসহ তিন কিশোর- তরুণকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তুচ্ছ কারণে বিরোধের জের ধরে এক তরুণীর বাসায় ঢুকে তাকে মারধর করার পর সে ঘটনা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। মারধরের শিকার তরুণী মোহনা আক্তার ওরফে অধরা আহমেদের দায়ের করা মামলায় গত ২৮ আগস্ট গ্রেফতার করা হয়েছে এই তিনজনকে। ওই তরুণী ও তার দুই সঙ্গী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

ইপিজেড থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত ২৪ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানাধীন বন্দরটিলা এলাকার কসাই গলিতে ওই মারধরের ঘটনা ঘটে। ঘটনার শিকার তরুণীর অভিযোগ, তাকে বাসায় ঢুকে মারধর ও পোশাক টেনে ছিঁড়ে ফেলার সময় সে ঘটনা হামলাকারীদের কেউ মোবাইল ফোনে ধারণ করে পরে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে আবারও তার সম্মানহানি করে।

গ্রেফতার তরুণীর নাম তাহমিনা সিমি ওরফে সিমরান সিমি। তার সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া শাখাওয়াত নগরীর হালিশহর থানার নয়াবাজার এলাকার ও  তার বন্ধু মো. লামিম শাওনের বাড়ি বন্দর থানার ইস্ট কলোনি এলাকায়।

মামলাকারী তরুণীর দাবি, সদ্য কৈশোর পেরুনো তরুণ সাখাওয়াতের সঙ্গে সম্প্রতি পরিচিত হওয়ার পর সে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। এই প্রস্তাব নাকচ করার কারণে তার ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গ্রেফতার হওয়া সিমি নামের তরুণী আগে থেকেই ড্যামকেয়ার ধরনের চলাফেরা করতো ও কথাবার্তা বলতো।  এ কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিমি লেডি গ্যাং লিডার নামে পরিচিত।

ইপিজেড থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনলাইনের বিরোধের জের ধরে গত ২৪ আগস্ট মোহনা আক্তার প্রকাশ অধরা আহমেদ নামের এক তরুণীকে ৫/৬জন কিশোর-কিশোরী তার বাসায় গিয়ে মারধর করেন। মারধরের মধ্যে তারা সীামাবদ্ধ থাকেননি, ওই তরুণীকে ‘শিক্ষা দিতে’ মারধরের ঘটনা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল করে তারা। এ ঘটনায় মোহনা আক্তার (অধরা) নামের ওই নারী থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় শুক্রবার (২৮ আগস্ট) এক তরুণীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৪৩, ৪৪৭, ৩২৩, ৫০৬ ধারা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি দায়ের করা হয় বলে জানান ইপিজেড থানার ওসি। উৎপল বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মোহনা আক্তার মামলায় দণ্ডবিধির চারটি পৃথক ধারা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযোগ এনেছেন। মামলায় গ্রেফতার তিনজন ছাড়াও আরও ৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। অপর আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

মারধরের শিকার অধরা আহমেদের বাড়ি খুলনা জেলার বাগেরহাটে। এক ভাই ও মাকে নিয়ে তারা নগরীর বন্দরটিলা এলাকার কসাই গলিতে ভাড়া বাসায় থাকেন। ঘটনার সময় তার ভাই গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। তার মাও তখন বাসায় ছিলেন না।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে অধরা আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বেশ কিছু দিন আগে এক বন্ধুর মাধ্যমে শাখাওয়াতের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। কয়েকদিন কথাবার্তার পর একদিন সে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ায় সে আমাকে অশ্লীল এসএমএস দিত। এর প্রতিবাদ করায় সে ফেসবুকে আমাকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বাজে স্ট্যাটাস দিতে শুরু করে। এ নিয়ে তার সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়। ওই ঘটনার জের ধরেই গত ২৪ আগস্ট আমার বাসায় এসে শাখাওয়াত ও তার বান্ধবী সিমি আমাকে মারধর করে। এসময় আরও কয়েকজন ছিল তাদের সঙ্গে। পরে মারধরের ওই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়।

তিনি আরও দাবি করেন, ঘটনার দিন আমি বাসায় একা ছিলাম। হঠাৎ শাখাওয়াত কল করে আমাকে বাসার নিচে যেতে বলে। আমি নিচে না যাওয়ায় সে তার দুই বন্ধু, দুই বান্ধবীকে নিয়ে দোতলায় চলে আসে। এসেই সিমরান সিমি নামে তার এক বান্ধবী আমাকে মারধর শুরু করে। সিমি আর শাখাওয়াত মিলে আমার জামা ছিঁড়ে ফেলে। অন্যরা তাদের দুইজনকে সহযোগিতা করে।

এদিকে এ ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর অভিযুক্ত সিমরান সিমি গত ২৬ আগস্ট ফেসবুক লাইভে এসে এ বিষয়ে পাল্টা অভিযোগ তুলেন। সিমরান সিমি বলেন, ফেসবুকে ঝগড়ার জের ধরে অধরা আহমেদ তাদেরকে হুমকি দেন। এসব কারণে আমরা ওর বাসায় গিয়েছি। কেউ কারও বাসায় গিয়ে এমনি এমনিতে মারামারি করে না। অবশ্যই সে এমন কাজ করেছে যার কারণে আমরা যেতে বাধ্য হয়েছি।

সিমি আরও বলেন, আমরা এমন কোনও খারাপ কাজ করিনি। আমি বলবো না আমি নির্দোষ। ওর দোষ আছে, আমারও দোষ আছে। ওখানে আমরা দুইজন মেয়ে ছিলাম। আমরা মেয়েরা মেয়েরা মারামারি করেছি। খারাপ কিছু করিনি।

তিনি আরও বলেন, আপনারা ওর ব্যাকগ্রাউন্ড দেখবেন, আমাদের ব্যাকগ্রাউন্ডও দেখবেন। আপনারা এক পক্ষের হয়ে কথা বলবেন না। প্রকৃতপক্ষে কী ঘটনা ঘটেছে সেটি জেনে বিচার করবেন।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঋণ খেলাপের দায়ে স্ত্রী-ছেলেসহ স্টিল মিল মালিকের কারাদণ্ড
ঋণ খেলাপের দায়ে স্ত্রী-ছেলেসহ স্টিল মিল মালিকের কারাদণ্ড
ইরানি প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারে ‘দুর্ঘটনা’, মেলেনি সন্ধান
ইরানি প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারে ‘দুর্ঘটনা’, মেলেনি সন্ধান
তাপপ্রবাহে বিদ্যালয়ে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
তাপপ্রবাহে বিদ্যালয়ে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
কারখানার ছাদ থেকে পড়ে নারী পোশাকশ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ
কারখানার ছাদ থেকে পড়ে নারী পোশাকশ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ
সর্বাধিক পঠিত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ