ডাবল মার্ডার মামলার অন্যতম আসামি যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের বিরুদ্ধে এক কোটি ২৬ লাখ টাকার একটি প্রাডো গাড়ি আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন রেলওয়ের ঠিকাদার মোহাম্মদ শাহ আলম। এ ঘটনায় গত ২৬ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ওই ঠিকাদার। জিডিতে শাহ আলম অভিযোগ করেন, কয়েকদিন ব্যবহারের জন্য তিনি গাড়িটি বাবরকে দেন। এখন গাড়িটি ফেরত চাইতে চাওয়ায় বাবর ও তার লোকজন তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।
বিদেশে থাকায় এ বিষয়ে হেলাল আকবর বাবরের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার অনুসারী মুনিরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে জিডিতে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মুনিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওই গাড়িটি বাবর ভাই তার কাছ থেকে সাড়ে ৪৮ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন।’
সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম ফজলুর রহমান ফারুকী জিডি দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘গত ২৬ আগস্ট শাহ আলম নামের একজন নিজেকে রেলওয়ের ঠিকাদার পরিচয় দিয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেন। জিডিতে যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর বাবর ও তার অনুসারীরা তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ আনেন। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
জিডিতে ওই ঠিকাদার উল্লেখ করেন, ‘ব্যবসায়িক কারণে হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। সে সুবাধে আর্থিক লেনদেন হয় এবং আমার ব্যবহারের একটি গাড়ি কয়েক দিনের জন্য নেন বাবর। পরবর্তীতে দেশের বাহিরে চলে যান। বর্তমানে তিনি দুবাই অবস্থান করছেন। আমি পাওনা টাকা ও গাড়ি ফেরত চাইলে তিনি বিভিন্ন রকম হুমকি দিতে থাকেন। গত ৩-৪ দিন ধরে কয়েকটি ফেসবুক আইডি থেকে আমাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ, বানোয়াট, ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভিন্ন পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। যার মাধ্যমে আমাকে মানহানি ও সামাজিকভাবে হেয় করা হয়েছে। এছাড়া হেলাল আকবর বাবরের অনুসারিরা মানহানিকর সংবাদ প্রচার করছে, যা প্রচলিত আইন পরিপন্থী। তাছাড়া আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে আমি মনে করি।’
জিডিতে যাদের ফেসবুক আইডি’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন—হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, মাহবুবুল করিম, জে এইচ হামিদ হোসেন, লিটন চৌধুরী রিংকু, আনোয়ার পলাশ, জোবায়ের আলম আশিক, মনিরুল ইসলাম, সাইদ আল জাবির, মো. সাইফুল ইসলাম রাজ ও সাহিল মিহির ইমন।
এ সর্ম্পকে জানতে চাইলে মুনিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গাড়িটি বাবর ভাই শাহ আলমের কাছ থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে কিনে নিয়েছেন। ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায় শাহ আলম গাড়িটি বাবর ভাইয়ের কাছে বিক্রি করেন। গাড়ি বিক্রির দলিল আমাদের কাছে আছে। আমাদের বিরুদ্ধে তাকে হুমকি দেওয়ার যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি ভিত্তিহীন। আমরা তাকে কোনও ধরনের হুমকি দিইনি।’
মুনিরুল ইসলামের কাছে পাওয়া দলিলের মাধ্যমে জানা যায়, ‘চট্টমেট্রো-গ -১১-২০৪১ রেজিস্ট্রেশনের টয়োটা ল্যান্ড ক্রজার প্রাডো গাড়িটি ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি হেলাল আকবর বাবর কিনেছেন।’ দলিলে উল্লেখ করা হয়, ‘টিআরজে ১৫০-০০১৫৩০০ চেসিস নম্বর এবং ২টি আর-১০১২৭৫৩ ইঞ্জিন নম্বরের গাড়িটি বিক্রির প্রস্তাব করিলে হেলাল আকবর বাবর কিনতে সম্মত হন। পরে উভয়ের পরস্পর আলাপ আলোচনায় গাড়িটির দাম ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেন। ওই টাকা পরিশোধ করলে শাহ আলম যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর বাবরকে গাড়িটি বুঝিয়ে দেন। পরবর্তীতে ওই গাড়ির মালিকানায় শাহ আলমের কোনও স্বত্ব নাই।’
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার মোহাম্মদ শাহ আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।