X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কে হচ্ছেন নওগাঁ-৬ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার কাণ্ডারী!

আব্দুর রউফ পাভেল, নওগাঁ
০২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:০০আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:২৭

 

নওগাঁ-৬ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন যারা

সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের মৃত্যুতে শূন্য হয়ে গেছে নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসন। রাণীনগর ও আত্রাই এই দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ (সংসদীয় আসন-৫১) আসনে এখন চলছে  উপনির্বাচনের প্রস্তুতি। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে যাচ্ছে। দলীয় প্রার্থী বাছাই চলছে বিভিন্ন দলে। তবে  সরকারি দলেরই সংসদ সদস্য প্রয়াত হওয়ায় আসনটি ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ যেমন আছে, তেমনই এ দলেই প্রার্থীদের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার তোড়জোড় সবচেয়ে বেশি।

প্রায়  একযুগ এই আসনের এমপি পদে দায়িত্ব পালনের পর গত ২৭ জুলাই  ইসরাফিল আলম মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য হয়। ইতোমধ্যে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। অনেকেই শুরু করেছেন আগাম নির্বাচনি গণসংযোগ, পথসভা ও মিটিং। মনোনয়ন পেতে শীর্ষ নেতাদের মন ভেজাতে অনেকেই শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপ। তবে শেষ অবধি কে উঠবেন নৌকায় তা মাঠের ভোটে নিশ্চিত হতে পারেননি কেউ-ই।

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে এক সময় রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল জেলার রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা। সেই সময় এই জনপদে সর্বহারারা দিনে-দুপুরে মানুষকে জবাই করতো। সর্বহারার অধ্যায় শেষ হতে না হতেই উত্থান হয় আরেক দল চরমপন্থী জামাআতুল মোজাহেদিন বাংলাদেশের (জেএমবি)। চরমপন্থী রাজনৈতিক দলটির শীর্ষ নেতা ‘বাংলা ভাই’ ছিল এই এলাকার আরেক ত্রাস। দীর্ঘদিন চলে তাদের নিমর্ম সন্ত্রাসী তাণ্ডব। তারাও চালিয়েছিল ইচ্ছেমতো শাসন। যখন তখন যাকে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে ইচ্ছেমতো বিচার তো ছিলই, তারা মানুষদের গোয়ালের গরু রাখেনি, ধানের গোলায় ধান রাখেনি। শুরু করেছিল লুটপাটের রাজত্ব। তবে ২০০৫ সালে বাংলা ভাইসহ জেএমবি’র শীর্ষনেতারা ধরা পরার পর তাদের ফাঁসি হলে এই এলাকায় স্বস্তি ফিরতে শুরু করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এই এলাকার রাজনীতিতে পালাবদল শুরু হয়। এর আগে বাংলা ভাই ও সর্বহারার রাজনীতির সময়ে এই এলাকা ছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পরে বিএনপির একচ্ছত্র আধিপত্যের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ সেখানে কথা বলতে শুরু করে। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের দখলে।

জানা গেছে, ১৯৯১ ও ৯৬ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান। ২০০১ সালে প্রার্থী বদল করেও লাভ হয়নি আওয়ামী লীগের। সেবার এ আসনে ইসরাফিল আলমকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিলেও তাকে পরাজিত করে টানা তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হন আলমগীর কবীর। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষের দিকে আলমগীর কবির এলডিপিতে যোগ দেন। একই বছরে এলডিপি থেকে পদত্যাগও করেন। তবে বিএনপির টিকিট আর পাওয়া হয়নি তার। রাজনৈতিক এই ভুলের মাশুল দিতে হয় তাকে।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন ইসরাফিল আলম। তার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরকে পরাজিত করে আবারও বিজয়ী হন ইসরাফিল আলম। মূলত এ আসনটি চারবার বিএনপির অধীনে থাকলেও ২০০৮ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে।

ফলে ইসরাফিল আলমের মৃত্যুর পর এই আসনটি আসন্ন উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের নিজেদের দখলে রাখতে পারবে কিনা সে চ্যালেঞ্জটিও আছে এখানে। প্রার্থী বাছাই সে কারণে আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে।

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের আসন্ন উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করে মাঠে রয়েছেন প্রয়াত সংসদ সদস্যের স্ত্রী পারভীন সুলতানা বিউটি, সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহীন মনোয়ারা হক, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, রাণীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন হেলাল, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম, রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আসাদুজ্জামান নূরুল। এছাড়াও নওগাঁ জেলা যুবলীগের সভাপতি খোদাদাদ খাঁন পিটু, সাধারণ সম্পাদক বিমান কুমার রায় ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমনের নাম শোনা যাচ্ছে।

প্রয়াত সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের স্ত্রী পারভীন সুলতানা বিউটি বলেন, এই আসনে আমি মানুষের কাছে একটি পরিচিত মুখ। স্বামীর পাশাপাশি আমিও বিভিন্ন সময় এই দুই উপজেলার মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছি। যদি প্রধানমন্ত্রী আমাকে সুযোগ দেন তাহলে আমি ইসরাফিলের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করবো ইনশাল্লাহ।

সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহীন মনোয়ারা হক বলেন, আমি ১৯৯৬ সালে সংরক্ষিত আসনে প্রথম এমপি হওয়ার পর থেকে রাণীনগর ও আত্রাইবাসীর জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। তাই প্রধানমন্ত্রী আমার সবকিছু বিবেচনা করে যদি আমার এলাকার মানুষদের সেবা করার সুযোগ দেন তাহলে আমি নির্বাচনে অংশ্রগ্রহণ করবো।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী বলেন, আমি রাণীনগরের সন্তান। কর্ম আর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমাকে রাজশাহীতে বসবাস করতে হলেও আমার সবকিছুই আমার এলাকার মানুষের জন্য। গত সংসদ নির্বাচনেও আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। তাই দল যদি আমাকে মনোয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচন করবো এবং বিজয়ী হবো বলে শতভাগ আশাবাদী।

রাণীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, আমার বিশ্বাস নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এ আসন থেকে মনোনয়ন দেবেন। আমি শতভাগ আশাবাদী মনোনয়ন পাবো এবং বিজয়ী হবো ইনশাল্লাহ।

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের আগে অনেক অতিথি পাখি দেখা যায়। কিন্তু পরে আর খোঁজ থাকে না। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অবলম্বন করে এই অঞ্চলের মানুষদের সেবা করতে চাই, যদি প্রধানমন্ত্রী আমাকে সেই সুযোগটি দেন।

রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আসাদুজ্জামান নূরুল বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করেছি আর বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি, আগামীতেও করবো। রাণীনগরের সন্তান বলে সবসময় এই অঞ্চলের মানুষের সুখে-দুঃখে থাকার চেষ্টা করেছি। তাই আমার সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে যদি দল আমাকে নৌকা প্রতীক দেয় তাহলে নির্বাচন করবো। তা না হলে নৌকা যে পাবে তার হয়ে কাজ করবো।

এছাড়াও নওগাঁ জেলা যুবলীগের সভাপতি খোদাদাদ খাঁন পিটু, সাধারণ সম্পাদক বিমান কুমার রায় ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারাও প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুযোগ চেয়েছেন এবং  মনোনয়ন দিলে এলাকাবাসীর সুখে দুঃখে পাশে থাকার অঙ্গীকার করে প্রচারণা চালাচ্ছেন।  

রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন আমরা তার হয়েই কাজ করবো।

এদিকে এলাকার পাশাপাশি মনোনয়ন বোর্ডের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যোগাযোগ রাখছেন বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। তবে মনোনয়ন বোর্ডে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তার হয়ে সবাই কাজ করবেন এ অঙ্গীকারও করেছেন তারা।

/টিএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা