X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভরা মৌসুমে খালি মেঘনা-তেঁতুলিয়া পাড়ের ইলিশের আড়ত, মুখ শুকনো জেলেদের

আহাদ চৌধুরী তুহিন, ভোলা
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:০০আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:০০

ভোলার ইলিশা ঘাটের আড়তে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর ইলিশ মিরছে খুবই কম।

ভরা মৌসুমে খা খা করছে ভোলা জেলার মেঘনা পাড়ের ইলিশের আড়তগুলো। গতবছরও এসব আড়তে যে পরিমাণ নদীর ইলিশ উঠেছিল ও কেনাবেচায় দৌড়ঝাঁপ ছিল এবছর তার পুরোই বিপরীত চিত্র। ইলিশা থেকে মনপুরার কলাতলীমৎস্যঘাট সবখানেই এবার একই চিত্র।

দেশের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আহরিত হয় ভোলা জেলা থেকে। মূলত শ্রাবণ-ভাদ্র এই দুই মাস ইলিশের ভরা মৌসুম। এসময়ে সাগর থেকে নদীতে এসে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ে থাকে। তবে এবছর ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে প্রত্যাশার সিকি পরিমাণ ইলিশও মেলেনি। ভাদ্র পেরিয়ে আশ্বিনে এসেও একই অবস্থা। ট্রলার ভাড়া করে নদীতে ঘুরে মাছ না পেয়ে জেলেদের পেরেশানি অন্যদিকে, ব্যবসা না থাকায় আড়তদারদেরও দিন কাটছে হতাশায়। আবার সাগরে ধুমছে ধরা পড়া ইলিশ চট্টগ্রাম ও ঢাকার মোকামে দাম কম, নদীর ইলিশের দাম বেশি হলেও চাহিদা অনুযায়ী মোকামেও মিলছে না দাম। এ কারণেও অস্বস্তিতে আছেন জেলে ও আড়তদাররা। যে পরিমাণ মাছ ধরা পড়ছে তা দিয়ে জেলেদের ধার দেনা পরিশোধ তো দূরের কথা, সংসার চালাতে গিয়েও তারা চরম বিপাকে রয়েছে।

যদিও মৎস্যবিভাগ এখন আশা দেখাচ্ছে জেলেদের। শ্রাবণ-ভাদ্রে না মিললেও এই আশ্বিনে জেলেদের জাল নদীর ইলিশে ফুলে উঠবে এমন আশার বাণী শুনিয়েই যাচ্ছেন জেলার মৎস্য কর্মকর্তা। এবছর ভোলা জেলায় ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে রেখেছে এক লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এবছর নজরদারি ঠিকমতো সম্ভব না হওয়ায় নিষিদ্ধ সময়ে এই নদীগুলো এবং বরিশাল বিভাগের অন্য নদীগুলোতে প্রচুর জাটকা আহরণ হয়েছে জেলেদের পক্ষ থেকেই পরস্পরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে।

অল্প যেটুকু ইলিশ উঠছে তাই নিয়ে আড়তে পাইকারদের কাড়াকাড়ি।

ভোলার ইলিশা মৎস্যঘাটে গিয়ে দেখা যায়, গুটি কয়েক আড়তদারের ‘তহবিলের’ সামনে কয়েকজন জেলে ও পাইকারি ক্রেতাদের ভিড়। জেলেরা নদী থেকে মাছ ধরে ঝুড়িতে করে আড়তদারদের গদিতে নিয়ে আসছেন। কিন্তু মাছের পরিমাণ খুবই কম। কিছু কিছু ঝুড়িতে দেখা যায় ইলিশ মাছের সাইজ এক কেজি থেকে সোয়া কেজি ওজনের। কিছুক্ষণের মধ্যেই এসব বড় মাছের ডাক ওঠে এক হালি ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ১শ’ টাকা। মণের হিসাবে এর দাম ৪০ হাজার থেকে ৪১ হাজার টাকা। যদিও মণ হিসাবে বিক্রি হতে দেখা যায় না।

জেলেরা জানান, গত বছর এই সময় মৎস্যঘাটে জমজমাট বেচাকেনা হয়েছে। কিন্তু এবছর ভরা মৌসুমে সেই চিত্র আর নেই।

ভোলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানের মতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমনটা হচ্ছে। তার মতে, শ্রাবণ-ভাদ্রে দেখা না মিললেও চলতি আশ্বিন মাসে ভোলার মেঘনা তেঁতুলিয়ায় কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়া যেতে পারে।

মাছ বিক্রি করতে আসা জেলে সিরাজ উদ্দিন জানান, গত ৩ দিন আগে তারা ৭ জন জেলে ও মাঝি-মাল্লাসহ মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। গত দু’দিনে তারা যে পরিমাণ মাছ পেয়েছেন তা বিক্রি করে মিলেছে মাত্র ২২ হাজার টাকা। অথচ তাদের ট্রলারের তেল ও খাওয়া দাওয়াসহ প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ট্রলারের ভাগ, জালের ভাগসহ মহাজনকে দিয়ে তাদের ভাগে জনপ্রতি ৪/৫শ’ টাকার বেশি থাকবে না। অথচ গত বছর এই সময়ে দৈনিক নদীতে মাছ ধরে বিক্রি শেষে ২/৩ হাজার টাকা একাই পেতেন। তার মতো ইউসুফ, মিলন মাঝিসহ বেশিরভাগ জেলেরই প্রায় একই অবস্থা। নদীতে ইলিশ মাছ না পেয়ে তারা চরম হতাশায় রয়েছে।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন ভরা মৌসুমে নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরবেন। এই সময় মাছ পেয়ে তাদের সারা বছরের ধার দেনা পরিশোধ করে কেউ ঘর তুলবেন। আবার কেউ বা নিজেই ছোট নৌকা আর জাল কিনে নদীতে যাবেন। টানাটানির সংসারের পরিবারের প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটাবেন। মনে মনে এমন স্বপ্ন বুনলেও নদীতে জাল পেতে ভরপুর ইলিশ না পাওয়ায় চরম সংকট আর অভাব অনটনের মধ্যে তাদের দিন কাটছে। জেলেরা বলছে, নদীতে অসংখ্য ডুবো চর রয়েছে। তার ওপর প্রভাবশালীদের অবৈধ খুটা জাল, মশারি জাল, বিন্দি জাল পেতে রাখা হয়। এসব কারণে ইলিশের বিচরণ বা আসার পথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই ভরা মৌসুমে সাগর মোহনায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। যে কারণে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর জেলেরা তাদের জালে চাহিদা মতো ইলিশ পাচ্ছেন না।

অথচ চট্টগ্রামের আড়তে আসছে এরচেয়েও বেশি পরিমাণে সাগরের ইলিশ।

ইলিশা মৎস্য ঘাটের আড়তদার ইমন জানান, ‘তাদের এইঘাটে গত বছর এই সময় প্রতিদিন ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ মণ ইলিশ মাছ ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। কিন্তু, এবছর এখন প্রতিদিন ৮০/৯০ মণ ইলিশ তারা ক্রয় করে ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় বড় মোকামে পাঠাচ্ছেন।

আড়তদার সাহাবুদ্দিন জানান, ভোলার নদীতে জেলেরা চাহিদা মতো ইলিশ না পাওয়াম ভরা মৌসুমে ভোলায় তারা বেশি দামে মাছ ক্রয় করছেন। কিন্তু, সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় বড় মাছের আড়তে ইলিশের দাম কমে গেছে। তাই ভোলায় তারা বেশি দামে মাছ কিনরেও মোকামে কম দাম হওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ভোলায় ১ কেজি ওজনের ইলিশের হালি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় কিনতে হয়। কিন্তু, মোকামে বিক্রি করতে গেলে ৩ হাজার ৫ শত থেকে ৭ শত টাকায় বিক্রি করতে হয়।

মনপুরার কলাতলীর মৎস্যঘাটের আড়তদার মনির হাওলাদার জানান, তাদের এলাকার মেঘনা নদীতে ইলিশ কম ধরা পড়ায় তাদের আড়তে ইলিশ কম। তাই দাম বেশি।

এ ব্যাপারে ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম জানান, ‘ইলিশের প্রধান মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। সমুদ্রে ব্যাপকভাবে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। অচিরেই মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ আসবে এবং জেলেদের জালে ধরা পড়বে।

এখন মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ কম পাওয়ার কারণ সে বিষয়ে তিনি সুস্পষ্ট কোনও উত্তর দেননি। তবে তিনি বলেন,গত বছর ভোলায় ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু, ইলিশ আহরিত হয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন।

 

 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মানব ও সুপারি পাচারের অভিযোগে ভারতে শুল্ক কর্মকর্তা গ্রেফতার 
মানব ও সুপারি পাচারের অভিযোগে ভারতে শুল্ক কর্মকর্তা গ্রেফতার 
ভুয়া পরিচয়ে ভারতে বসবাস বাংলাদেশির, ৪ বছরের কারাদণ্ড
ভুয়া পরিচয়ে ভারতে বসবাস বাংলাদেশির, ৪ বছরের কারাদণ্ড
৫ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবস্থাপক নিখোঁজ, পূবালী ব্যাংকের ৮ কর্মকর্তাকে বদলি
৫ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবস্থাপক নিখোঁজ, পূবালী ব্যাংকের ৮ কর্মকর্তাকে বদলি
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
সর্বাধিক পঠিত
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি