X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

দীর্ঘ হচ্ছে বাস্তুহারাদের তালিকা, নেই পুনর্বাসনের উদ্যোগ

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:২২আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:২২

নদী ভাঙনে বাস্তুহারা হচ্ছে লোকজন



ঘুম থেকে জেগে বিছানা ছাড়ার আগেই বসত ভিটার মাটি নদীগর্ভে পড়ার শব্দে ছোটাছুটি শুরু হয় সালেহা বেগমের। ঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে নিতে তিনটি ঘর আর হাঁস-মুরগি ভেসে যায় ধরলার স্রোতে। সর্বস্ব হারিয়ে বিধবা সালেহা এখন আশ্রয়ের জন্য অন্যের জমি খুঁজছেন। সালেহার মতো প্রতিনিয়ত নদী ভাঙনে বাস্তুহারা হচ্ছেন কুড়িগ্রামের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার আর ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার শত শত পরিবার। কয়েক মাস ধরে চলমান নদী ভাঙনে কয়েক হাজার পরিবার সর্বস্বান্ত হলেও তাদের পুনর্বাসনে এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনও সহায়তা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবার ও সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের।

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্রে জানা গেছে, জেলার ছয় উপজেলায় (সদর, রৌমারী, রাজীবপুর, চিলমারী, উলিপুর ও নাগেশ্বরী) নদী ভাঙনে ভিটেহারা প্রায় ৪ হাজার ৫৬টি পরিবারের তালিকা করে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হলেও এখনও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তবে পাঠানো তালিকায় বেশিরভাগই বিগত বছরে নদী ভাঙনের শিকার। চলতি বছর ভাঙন চলমান থাকায় এবং নতুন নতুন এলাকা ভাঙন কবলিত হওয়ায় পরবর্তীতে আবারও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা পাঠানো হবে।

নদী ভাঙনে বাস্তুহারা হচ্ছে লোকজন
জেলার সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নে ধরলার ভাঙনে বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে জগমনের চর এলাকার বাসিন্দা সালেহা বেগমসহ ওই এলাকার ১৫টি পরিবার গৃহহারা হয়েছেন। ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকিতে রয়েছে আরও অর্ধশত পরিবার। 
ভাঙনে ভিটেহারা জগমনের চরের বাসিন্দা ছক্কুর আলী বলেন, ‘মোর ছয়টা ঘর নদীত ভাঙি গেইছে, এলা বাঁধত ঘর তুলবার নাগছি। কী করমো, পরিবার নিয়া বাঁচি থাকাতো নাগবে। কাইয়ো এখনা সাহায্যও করে না। ’

নদী ভাঙন অব্যাহত
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান জানান, গত দুই দিন থেকে তার এলাকায় ধরলার ভাঙনে অনেক পরিবার ভিটে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ এখনও অনেক পরিবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও ভাঙন প্রতিরোধ কিংবা ভিটেহারা মানুষদের পুনর্বাসনে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
জেলার নদ-নদী অববাহিকা অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়তে শুরু করায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। জেলার সদর উপজেলায় ধরলা, নাগেশ্বরীতে দুধকুমার, রৌমারী ও রাজীবপুরে ব্রহ্মপুত্র এবং উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলায় তিস্তার ভাঙনে ফসলি জমি হারানোর পাশাপাশি বসতভিটা হারাচ্ছেন নদী অববাহিকার বাসিন্দারা। গত কয়েক সপ্তাহে তিস্তার ভাঙনে উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া, বজরা ও থেতরাই ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙনে পাকা সড়ক, ফসলি জমি ও মসজিদসহ ভিটেমাটি হারিয়েছেন শতাধিক পরিবার। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে আরও শতাধিক পরিবারসহ সড়ক ও ফসলি জমি। 

নদী ভাঙন অব্যাহত
বজরা ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো জানায়, পরপর দুই দফা ভাঙনে ইউনিয়নের ৬,৭ ও ৯ নং ওয়ার্ডের শতাধিক পরিবার ভিটে হারিয়ে বাস্তুহারা হয়েছে। অনেকে স্থানীয়টি বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে তাদের পুনর্বাসনে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অব্যাহত ভাঙনে বসতভিটা, মসজিদ, পাকা সড়ক ও ফসলি জমিসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনও কিছুই বাদ যাচ্ছে না।
বজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আমিন জানান, তার ইউনিয়নে তিস্তা সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। চলতি ভাঙনে ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের চর বজরা পূর্বপাড়া হাঁস খাওয়া ব্রিজ সংলগ্ন প্রায় ২৫টি পরিবার গৃহহারা হয়েছে। ওই এলাকায় চর বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরও অনেক বসতি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

নদী ভাঙন অব্যাহত
চেয়ারম্যান বলেন, ‘মাস খানেক আগে তিস্তার ভাঙনে ৯ নং ওয়ার্ডের চর বজরায় শতাধিক পরিবার ভিটে হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে এখন স্থানীয়টি বাঁধে আশ্রয় নিয়ে আছে। গত দুই দিনে তিস্তার ভাঙনে আরও ২৫টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। দু’দফা ভাঙনের শিকার হলেও ভুক্তভোগীদের কিছু ত্রাণের চাল দেওয়া ছাড়া পুনর্বাসনে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি ভাঙন প্রতিরোধে কয়েকটি জিও ব্যাগ ফেলা ছাড়া কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’ 
এদিকে দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতায় জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নে অন্তত অর্ধশত পরিবার বাস্তুহারা হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ওই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বারেক মিয়া, মামুন ও আল মদিনা জানান, কয়েকদিন ধরে দুধকুমার নদের ভাঙন প্রবণতা বেড়েছে। গত এক মাসে তাদের গ্রামে অন্তত ১৩টি পরিবার গৃহহারা হয়েছে। নদের পূর্বপারে বামনডাঙা আবাসন এলাকায় ভাঙনে গৃহহারা অনেক পরিবার পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি করে দিনানিপাত করছে। 

নদী ভাঙন অব্যাহত
রায়গঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্যাহ আল ওয়ালিদ জানান, নদী ভাঙনে এলাকার অবস্থা সংকটাপন্ন। চলতি ভাঙনে ইউনিয়নে অন্তত ১৭-২০টি পরিবার একেবারে বাস্তুহারা হয়েছে। এরা কেউ সড়কে আবার কেউ অপরের জমিতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে। এসব পরিবারকে খাদ্য সহায়তা ছাড়া তাদের পুনর্বাসনে কোনও সহায়তা করা সম্ভব হয়নি। তবে উপজেলা প্রশাসনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘ভাঙন কবলিত এলাকায় খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। প্রতি ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর ভুক্তভোগীদের খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

নদী ভাঙন অব্যাহত
বাস্তুহারাদের পুনর্বাসন প্রশ্নে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমরা চলতি মাসে গৃহহারাদের তালিকা করে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়েছি। আশা করছি খুব শিগগিরই বরাদ্দ পাওয়া যাবে। বরাদ্দ পেলে সংশ্লিষ্টদের গৃহ নির্মাণ ও পুনর্বাসনে সহায়তা করা হবে।’

 

/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ধাক্কা মেরে ফেলে চাপা দিলো কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলচালক নিহত
ধাক্কা মেরে ফেলে চাপা দিলো কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলচালক নিহত
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!