X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় দস্যুদের প্রাদুর্ভাবে হুমকিতে সুন্দরবন

মো. হেদায়েত হোসেন, খুলনা
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:৩৭আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:৩৭

সুন্দরবন করোনাভাইরাসের প্রভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষ আবারও সুন্দরবনের ওপর ঝুঁকে পড়তে শুরু করেছে। এ অবস্থার মধ্যে সুন্দরবনে দস্যুদের প্রাদুর্ভাব ফের বাড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বনবিভাগ হরিণ শিকারিসহ বেশ কিছু দস্যুকে গ্রেফতার করেছে। সুন্দরবন সরক্ষার জন্য সব ধরনের পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে ছয় মাস ধরে। কিন্তু সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার মানুষ জীবিকার তাগিদে বনে প্রবেশ করায় ঝুঁকিতে পড়ছে বন ও বনের প্রতিবেশ।

বিশ্ব ঐতিহ্য—এই বনে ভ্রমণ বন্ধ থাকার সুযোগে দুর্বৃত্তরা অবাধে হরিণসহ বন্যপশু হত্যা করছে। উজাড় হচ্ছে ‘কর্তননিষিদ্ধ’ মূল্যবান গাছ এবং বিষ দিয়ে মারা হচ্ছে হাজার হাজার টন মাছ। ফলে পরিবেশও বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। সরকার গত ১৯ মার্চ থেকে সুন্দরবনে পর্যটক সমাবেশ নিষিদ্ধ করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের নীল কমল, পাথকষ্টা, গেওয়াখালির অংশবিশেষ, নোটাবেকি, মান্দার বাড়ি, পুষ্পকাটিসহ বনের অন্য সব অভয়ারণ্য এলাকায় অসাধু জেলেরা মাছ শিকার করছে। সূত্র জানায়, নীলকমল অভয়ারণ্যের শিসখালী ও বালি নদীর আশপাশের এলাকা, চান্দাবুনি ও বুন্দো নদীসহ আশপাশের খালে মৎস্য বাবসায়ী জহির মেম্বর, আব্দুল মাজেল, মফিজুল, এছাক ও মালেকের জেলেরা বছরের প্রায় সময় মাছ শিকার করে থাকে। এছাড়া নোটাবেকি, পুষ্পকাটি অভয়ারণ্যের নান্দী ও জলঘাটাবন এলাকার নদী-খালে মৎস্য ব্যবসায়ী রজব আলী, কামরুল গাজী, মহিদুলসহ কয়রা ও শ্যমনগরের শতাধিক জেলে মাছ শিকার করছেন। সম্প্রতি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সুন্দরবনে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিষ মেশানো চিংড়ি, কয়েকটি নৌকা, জাল এবং দু’বোতল বিষসহ দু’জনকে গ্রেফতার করে।

জেলেরা জানান, গহীন বনের অভয়ারণ্য এলাকা থেকে মাছ ধরে নৌকায় লোকালয়ে পৌঁছাতে পথে-ঘাটে সবখানে ম্যানেজ করে চলতে  হয়। বড় অফিসারদের স্পিড বোটের সামনে পড়লে আর রেহাই পাওয়া যায় না। এছাড়া অভয়ারণ্যে মাছ শিকারের সুযোগ করে দেওয়ায় অভয়ারণ্য এলাকার বনরক্ষীরা জেলেদের নৌকাপ্রতি এক হাজার টাকা করে নেয়। এর বাইরেও ‌‘কর্তননিষিদ্ধ’ গাছ কেটে পাচার এবং হরিণসহ বন্যপ্রাণী হত্যার অভিযোগও রয়েছে।

উপকূলে জ্বালানি কাঠের তীব্র সংকট মোকাবিলায় প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সুন্দরবনের বিভিন্ন গাছের ফল। উপকূলের মানুষ সুন্দরবনের বিভিন্ন নদ-নদী দিয়ে ভেসে আসা ফল সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর পরিমাণে গাছ-গাছালি মারা যাচ্ছে। আবার লবণাক্ততার কারণে নতুন গাছ জন্মাচ্ছেও কম। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে হুমকির মুখে পড়ছে কৃষি বৈচিত্র্য। ফলে জ্বালানি সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।

খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবন লাগোয়া গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন থেকে ভেসে আসা ফলই এখন উপকূলের মানুষের জ্বালানি সংকট নিরসনের একমাত্র উপকরণ। এ জন্য নারী, পুরুষ, শিশু সবাই নদীতে জাল দিয়ে সংগ্রহ করে ভেসে আসা ফল। তারপর তা ঘরের চালে কিংবা রাস্তার ওপর রোদে শুকিয়ে বস্তাবন্দি করে সংগ্রহ করে মাসের পর মাস। পরে তা দিয়েই চলে রান্নাবান্না।

খুলনার কয়রা উপজেলার শেষ গ্রাম গোলখালীর বাসিন্দা করিম মোড়ল জানান, আইলার আগে গ্রামে বিভিন্ন রকম গাছপালা হতো। তা থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে আমাদের মা বোনরা রান্নাবান্না করতো। আইলার পরে আর তেমন গাছপালা হয় না। তারপর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল যা ছিল তাও শেষ করে দিয়ে গেছে। তাই জ্বালানি কাঠের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে।

পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. আবু সালেহ বলেন, ‘অভয়ারণ্য এলাকায় প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ। বনবিভাগের স্মার্ট পেট্রোলিং টিম নিয়মিত টহল করছে। অভয়ারণ্যেও নদী-খালে মাছ শিকার করা অসাধু জেলেদের পাকড়াও করতে অভিযান চলমান রয়েছে।’

‘ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোশিয়েশন অব সুন্দরবন’ (টিওএএস)-এর যুগ্ম-সম্পাদক মাযহারুল কচি বলেন, ‘করোনার সুযোগে অপরাধীরা উজাড় করে দিচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। শিকার করছে হরিণ।’

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. মঈনউদ্দিন বলেন, ‘সুন্দরবনের পরিবেশের স্বার্থে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই অবস্থার মধ্যে বনে অবৈধ প্রবেশ ঠেকাতে বনকর্মীরা সক্রিয় রয়েছেন।’

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, বন বিভাগের সদস্যরা সুন্দরবনে নিয়মিত টহল দেওয়ার সময় ১৫ সেপ্টেম্বর পক্ষীর চর এলাকা থেকে সাত জন হরিণ শিকারিকে আটক করে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হরিণ শিকারি চক্রের ওই সদস্যরা চোরা পথে সুন্দরবনে ঢুকে ফাঁদ পেতে হরিণ শিকারের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ট্রলার ও হরিণ শিকারের কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ ফাঁদ জব্দ করা হয়।

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, হিট অ্যালার্ট জারি
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, হিট অ্যালার্ট জারি
জিমি নেই, তারপরও খেলতে নামছে মোহামেডান
জিমি নেই, তারপরও খেলতে নামছে মোহামেডান
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!