X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

১৯ বছরেও শেষ হয়নি শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলা

তুহিনুল হক তুহিন, সিলেট
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:০০আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:০০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সিলেটে নির্বাচনি জনসভার দিন হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি)। কিন্তু ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে জনসভাস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের পাশ্ববর্তী এলাকা ফাজিলচিশতে ডা.আরিফ আহমদ রিফার বাসায় বোমা তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরণে নিহত হয় দুই জঙ্গি। এরপর প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার মামলা করা হয়। আলোচিত এ মামলার ১৯ বছর পূর্ণ হলেও এখনও শেষ হয়নি মামলাটি। সিলেটের অপরাধ দমন বিশেষ ট্রাইবুন্যালে এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আলোচিত এই মামলায় ৪৭ সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। জননিরাপত্তা আদালতে মামলাটি ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারিতে আসে। এ মামলার অন্যতম আসামি জঙ্গি মুফতি হান্নান ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসি কার্যকর করা হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ৪ মার্চ হোটেল আল আকসার কর্মচারী সেলিম ঘটনার বিস্তর বর্ণনা দিয়ে আদালতে সাক্ষ্য দেন। এই মামলায় উল্লেখযোগ্য সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল (কোতোয়ালি থানার সাবেক এসআই) ও অভিযোগপত্র দাখিলকারী সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক সিলেট ক্যাম্পের সাবেক পুলিশ পরিদর্শক প্রণব কুমার রায়সহ ৪ জন। মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ এ বছরের ১০ নভেম্বর। ওইদিন আদালতে সাাক্ষ্য দেবেন মিজানুর রহমান ও সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. কামাল পারভেজসহ ৩ জন।

আদালত সূত্র আরও জানায়, ২০০১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সিলেটে নির্বাচনি জনসভার দিন হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল হুজি। ওই বছরেই আদালতে স্বীকারোকিমূলক জবানবন্দি দেয় ঘটনাস্থল থেকে জনতার হাতে আহত অবস্থায় আটক হওয়া হুজির সদস্য মাসুদ আহমেদ ওরফে শাকিল। ২০০৬ সালের ৫ অক্টোবর গ্রেফতারকৃত মাওলানা আবু সাঈদ সিলেট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা স্বীকার করে।

জবানবিন্দতে সাঈদ বলেন, ২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরের মধ্যে শেখ হাসিনার শাহজালাল মাজারে সরাসরি যাওয়ার কথা ছিল। পরে তারা খবর পান শেখ হাসিনা শাহ পরাণ মাজারে যাবেন। দুই মাজারে ওঁৎ পেতে থাকার পর তারা জানতে পারেন শেখ হাসিনা জনাসভা স্থলে সরাসরি চলে যাবেন। এরপর জঙ্গিরা জনসভা স্থলের অদূরে ফাজিশচিশত এলাকায় তাদের ভাড়া করা মেসে গিয়ে ওঠেন। ওই মেসে রাত ৮টার দিকে বোমাগুলো নাড়াচাড়া করার সময় বিস্ফোরণ হয়। ২০০১ সালের ২ অক্টোবর সিলেটের প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং একই বছরের ১১ অক্টোবর ঢাকায় জেইসিতে প্রায় একই তথ্য দেন শাকিল।

শাকিল বলেছিলেন,  ‘ব্যবসার ফাঁকে ফাঁকে তাবলিগ জামাতে যেতাম। ২০০০ সালে এহেতশাম নামের একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। তার মাধ্যমে পরিচয় হয় ডা. আরিফ আহমদ রিফার সঙ্গে। তিনি জানিয়েছিলেন সিলেটে তার এক বন্ধু ডাক্তার। নাম আরিফ আহমেদ রিফা। ডাক্তার সাহেব সিলেটে একটা হাসপাতাল ও সাভারে একটা কোল্ড স্টোরেজ করতে চান। এজন্য লোক দরকার। সেই পরিচয়ের সুবাধে ২০০১ সিলেটে আসি ও সুরমা ভ্যালি রেস্টহাউসে উঠি। রুমটি ডা. রিফার নামে বুক করা ছিল। সিলেটে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আবু সাঈদ ২০০৬ সালের ১৯ অক্টোবর সিলেটের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে তিনি ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ঢাকায় বসে করা হত্যা পরিকল্পনার বর্ণনা দেন।’

সূত্র জানায়, বোমা বিস্ফোরণ ও হত্যার ঘটনায় দু’টি মামলা করেন সিলেট কোতোয়ালি থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আল খায়ের মাতুব্বর। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার মাস দুয়েক আগে আবু আল খায়ের মাতুব্বর ডা. রিফার মানচুরিয়া কালার ল্যাবে অভিযান চালান। তখন তিনি ছিলেন সিলেট পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি। তার কাছে খবর ছিল, সেখানে বিপুল বিস্ফোরক মজুত ও সন্দেহজনক লোকজন ছিল। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার সময় সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন (ওসি) আবু আল খায়ের মাতুব্বর।

তিনি আবু ওবায়দা ও শাকিলকে ঘটনাস্থল থেকে জনতার সহায়তায় গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারের পর শাকিল ওই সময়ে স্বীকার করে, কয়েক মাস আগ থেকে তারা (জঙ্গিরা) সিলেটে অবস্থান নিচ্ছিল। সুরমা ভ্যালি হোটেলে শাকিল একাধিকবার স্বনামে-বেনামে ছিলেন বলে এই কর্মকর্তা জানান।

জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন বিশেষ ট্রাইবুন্যাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মফুর আলী বলেন, ‘সাক্ষীদের কারণে আলোচিত এই মামলাটি অনেকটা গতিহীন। আদালত থেকে সাক্ষীদের প্রতি সমন, ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হলেও তেমন কোন গতি নেই। যারা এসব কাজে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখবেন তারাই অনেক ক্ষেত্রে নীরব রয়েছেন। পুরনো মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হলে আদালতের কার্যক্রম আরও গতি পাবে।’

 

 

/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি