গাজীপুরের শ্রীপুরে আটক ব্যক্তিদের উদ্ধারের সময় পুলিশের ওপর হামলা, অস্ত্র ও গুলি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে অভিযান চালিয়ে তিন ঘণ্টা পর অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের নোয়াগাঁও এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আটকের ঘটনায় কুমিল্লার দ্বেবিদ্বার উপজেলার নবিয়াবাদ গ্রামের মৃত আয়েত আলী মুন্সির ছেলে আবুল হোসেন বাদী হয়ে তাদের নামে মামলা দায়ের করেন।
এ সময় পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক, একজন কনস্টেবল, একজন আনসার সদস্যসহ ৭ জন আহত হন। আহতরা হলেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম-২, কনস্টেবল খোরশেদ আলম ও আনসার সুকুমার রায়।
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে আহত আবুল হোসেন রনি, ফয়সাল আহমেদ, আবুল কালাম ও অমর বেপারি। তারা কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার, হোমনা ও লক্ষীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার বাসিন্দা। তারা বিদেশে লোক পাঠানো প্রতিষ্ঠান ঢাকার ‘রাখা ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি’তে চাকরি করেন। আহতদেরকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন-শ্রীপুরের রাজাবাড়ী ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের মেয়ে রৌশনী (৪০), নাজমুল হকের স্ত্রী মনীষা মনি (২৫), গাজীপুর সদর উপজেলার নয়নপুর (দিঘলা) গ্রামের আফসার উদ্দিনের ছেলে ফরহাদ (১৮), নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার লাহোড়া গ্রামের জাফর মোল্লার ছেলে তাজুল ইসলাম (২৪) ও ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ গ্রামের সোলায়মানের ছেলে আব্দুর রহমান (২০)।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন ও উদ্ধারকৃতদের দেওয়া ভাষ্যমতে, উদ্ধারকৃত আবুল হোসেন রনি বিদেশে লোক পাঠিয়ে থাকেন। নোয়াগাঁও গ্রামের ওই পরিবারের দুজনকে দুবাই পাঠানোর কথা বলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুই লাখ টাকা নেন। করোনার কারণে বিদেশে পাঠাতে না পারায় রৌশনীর পরিবার তাদের টাকা ফেরত চান। আবুল হোসেন রনি কিছু টাকা ফেরতও দেন। আরও লোক পাঠানোর কথা বলে খবর পাঠিয়ে তাদেরকে কুমিল্লা থেকে শ্রীপুরের নোয়াগাঁও গ্রামের রৌশনীর স্বামী মৃত আব্দুর রহমানের বাড়িতে আসতে বলেন।
গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লা থেকে আবুল হোসেন রনি ও মালেক নামে দু’জন নোয়াগাঁও রৌশনীর স্বামী মৃত আব্দুর রহমানের বাড়িতে আসেন। পরে তাদেরকে ওই বাড়িতে আটকিয়ে মারধর করে বাড়ি থেকে আরও টাকা নিয়ে আসার জন্য বলেন। তারা ফোনে যোগাযোগ করলে বিষয়টি মীমামংসার জন্য কুমিল্লা থেকে তাদের আরও তিনজন শুক্রবার শ্রীপুরের রাজাবাড়ী ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে আসেন। তাদেরকেও আটকিয়ে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্য থেকে মালেক নামে একজন পালিয়ে রক্ষা পান। আটককৃতদের মধ্য থেকে একজন কৌশলে ৯৯৯ নাইনে ফোন করে পুলিশকে খবর দেন।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের একটি দল তাদের উদ্ধার করতে যায়। এ সময় পুলিশ দেখে রৌশনীর বাড়ির লোকজন ক্ষিপ্ত হয়। পরে তারা পুলিশ সদস্যদেরও মারধর করে একটি শটগান ও ৮ রাউন্ড গুলিভর্তি একটি ম্যাগজিন ছিনিয়ে নেন। পরে শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেনসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন। ওই রাত দেড়টার দিকে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র-গুলি, তিন পুলিশ সদস্য ও আটককৃত চারজনকে উদ্ধার করা হয়।
ওসি জানান, এ ঘটনায় গ্রেফতার ৫ জন, চিহ্নিত ২৪ জন ও অজ্ঞাতনামা কমপক্ষে ১৫ জনসহ ৪০ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আহত উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম ওই মামলার বাদী। আটক করে রাখার ঘটনায় উদ্ধারকৃত আবুল হোসেন রনি গং আরেকটি পৃথক মামলা করেছেন।
