স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বরগুনায় আবদুল্লাহ নামের ছয় বছরের এক শিশুকে পানিতে ডুবিয়ে মেরে বিষখালী নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুলা ভাইয়ের বিরুদ্ধে। একই পদ্ধতিতে আফসান নামের অপর এক দেড় বছরের শিশুকে হত্যার চেষ্টার সময় গ্রামবাসীর হাতে আটক হয় মোসলেম (২২)। এসময় দেড় বছর বয়সী আফসানকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) রাতে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ডালভাঙা এলাকায় ফারুক মোল্লার ইটভাটা সংলগ্ন বিষখালী নদীর তীরে এ ঘটনা ঘটে। মোসলেমকে আটক করে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে পুলিশকে খবর দেয় এলাকাকাসী। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। অভিযুক্ত মোসলেম সিরাজগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। তিনি ঢাকায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
ঘটনার পর আটক অবস্থায় শিশু শ্যালক আবদুল্লাহকে পানিতে চুবিয়ে মেরে বিষখালী নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা স্থানীয় এলাকাবাসীর কাছে স্বীকার করেছেন মোসলেম। শুক্রবার সকাল থেকে ঘটনাস্থলে ডুবুরিরা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে লাশের সন্ধান করছেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবদুর রহিম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, ডালভাঙা এলাকার নদী সংলগ্ম একটি দীঘিতে শিশু আফসানকে পানিতে চুবিয়ে হত্যার চেষ্টা করছিলো মোসলেম। বিষয়টি দেখতে পেয়ে তিনি দ্রুত সেখানে গিয়ে শিশুটিকে মোসলেমের কাছ থেকে উদ্ধার করেন। পরে স্থানীয়রা মোসলেমকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়।
নিহত শিশু আবদুল্লাহর বাবা ছগীর বলেন, তিন মাস আগে অসুস্থ হয়ে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়। এরপর আবদুল্লাহ (৬) ও আফসানকে (১৮ মাস) মেয়েরাই লালন-পালন করতো। সপ্তাহখানেক আগে জামাতা মোসলেম বরগুনায় বেড়াতে আসেন। এরপর বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) বিকালে ডালভাঙা এলাকায় নানা শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসে দুই ছেলে আবদুল্লাহ ও আফসানকে নিয়ে ঘুরতে বের হয় দুলাভাই মোসলেম। পরে সন্ধ্যার পরে জানতে পারি বড় ছেলে আবদুল্লাহকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যার পর মরদেহ বিষখালী নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে জামাতা মোসলেম। এছাড়াও ছোট ছেলে আফসানকে একই প্রক্রিয়ায় হত্যার সময় স্থানীয়রা তাকে হাতে নাতে আটক করে।
তিনি আরও বলেন, মোসলেম আমার বড় মেয়ের জামাতা। ঢাকায় থাকা অবস্থায় আমার মেয়ে ও নাতিকে ঠিকমতো ভরন-পোষণ দিতো না মোসলেম। তাই মাস খানেক আগে মেয়ে সন্তান নিয়ে বাড়িতে চলে আসে। এরপর মোসলেমও সপ্তাহখানে আগে এসে তার বাচ্চাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা মোসলেমের কাছে নাতিকে দিতে রাজি হইনি। এর জেরে আমার ছেলেকে নিয়ে হত্যা করেছে মোসলেম।
মোসলেম শিশু শ্যালক আবদুল্লাহকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমার ছেলেকে নিয়ে যেতে এসেছিলাম, কিন্তু আমার স্ত্রী ও শ্বশুর নিয়ে যেতে দেয়নি। এ কারণে ক্ষুদ্ধ হয়ে আমি শ্যালক আবদুল্লাহ ও আফসানকে হত্যার পরিকল্পনা করে বেড়াতে নিয়ে যাই। এরপর প্রথমে আবদুল্লাহকে দীঘিতে ফেলে ডুবিয়ে হত্যা করে লাশ বিষখালী নদীতে ভাসিয়ে দেই। এরপর আফসানকেও একই প্রক্রিয়ায় হত্যার চেষ্টা করি।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, নিহত শিশুর মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। মোসলেমকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন।
