X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

আইন সংশোধনের পর এই প্রথম ধর্ষণ মামলায় পাঁচ জনের মৃত্যুদণ্ড

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
১৫ অক্টোবর ২০২০, ১৩:২৪আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২০, ২২:৪৯

আদালত

টাঙ্গাইলে অপহরণের পর সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিন এ রায় দেন। টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক তানভীর আহমেদ এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

সরকার আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করার পরপরই এই রায় দেওয়া হলো। তবে রায়টি হয়ছে পুরনো আইনেই।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো—জেলার মধুপুর উপজেলার চারালজানী গ্রামের বদন চন্দ্র মণি ঋষির ছেলে সঞ্জিত (২৮), একই উপজেলার গোলাবাড়ি গ্রামের শ্রী দিগেন চন্দ্র শীলের ছেলে গোপি চন্দ্র শীল (৩০), একই এলাকার সুনীল চন্দ্র শীলের ছেলে সাগর চন্দ্র শীল (৩৩), সুনীল মণি ঋষির ছেলে সুজন মণি ঋষি (২৮) ও মণিন্দ্র চন্দ্রের ছেলে রাজন চন্দ্র (২৬)। গ্রেফতারকৃত সঞ্জিত ও গোপি চন্দ্র শীল রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিল। অন্য আসামিরা জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) একেএম নাছিমুল আকতার জানান, ‘২০১২ সালে সাগর চন্দ্র শীলের সঙ্গে মোবাইলে পরিচয় হয় জেলার ভুঞাপুর উপজেলার ছাব্বিশা গ্রামের এক মাদ্রাসাছাত্রীর। ওই বছরের ১৫ জানুয়ারি ওই ছাত্রী সকালে বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে উপজেলার শালদাইর ব্রিজের কাছে পৌঁছালে সাগর কৌশলে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে এলেঙ্গা নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে নিয়ে মধুপুরের চারালজানী গ্রামে তার বন্ধু রাজনের বাড়িতে ওঠে। সেখানে তার চার বন্ধু ওই মেয়েটিকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। সাগর হিন্দু বলে তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে মেয়েটি। এ কারণে ওই রাতে মেয়েটিকে সাগর রাজনের বাড়িতে আটক রেখে ধর্ষণ করে। এরপর ১৭ জানুয়ারি রাতে তাকে বংশাই নদীর তীরে নিয়ে সেখানে তারা পাঁচ জনে মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ফেলে যায়। পরদিন ভোরে স্থানীয়দের সহায়তায় মেয়েটিকে স্বজনরা গিয়ে উদ্ধার করে।’

তিনি জানান, এ ঘটনায় ওই ছাত্রী বাদী হয়ে ভূঞাপুর থানায় ১৮ জানুয়ারি মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ সুজন মণি ঋষিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। ১৯ জানুয়ারি আসামি সুজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। সুজন তার জবানবন্দিতে সাগর, রাজন, সঞ্জিত ও গোপি চন্দ্র জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পুলিশ তদন্ত শেষে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। আজ এ মামলার রায় হলো।

রায়ের পর টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) একেএম নাছিমুল আকতার বলেন, ‘আগের আইনেই এ মামলার রায় হয়েছে। মূল আইনটি হয়েছে ২০০০ সালে, যেটি ২০০৩ সালে সংশোধন হয়েছে। পুরাতন আইনেই ৯-এর ৩ ধারায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। এই মামলাটি ৯-এর ৩ ধারার মামলা। আর আগের আইনেই বিচারক এ মামলার রায় দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুরাতন আইনের ৯-এর ৩ ধারাটা হলো কোনও সংঘবদ্ধ ব্যক্তি দ্বারা যদি নারী বা শিশু ধর্ষণের শিকার হয় এবং ধর্ষণের ফলে যদি তার মৃত্যু হয় অথবা সে যদি আহত ও তাকে যদি মেরে ফেলার জন্য চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেই সংঘবদ্ধ দলের প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ডের অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, সেই সঙ্গে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানার বিধান রয়েছে। এই মামলায় ভিকটিম একের অধিক ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাই বিচারক তাদের প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন।'

তিনি আরও বলেন, ‘৯-এর ১ ধারায় যে আইনটি ছিল সেটা নতুন করে এখন সংশোধন হয়েছে। ওই আইনে ছিল যাবজ্জীবন, এখন হয়েছে মৃত্যুদণ্ড।’

রাষ্ট্রপক্ষে এই মামলা পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) একেএম নাছিমুল আকতার। আর মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভিকটিমকে আইনি সহায়তা দেন।

আদালত পরিদর্শক তানভীর আহমেদ জানান, প্রত্যেক আসামিকে আদালত এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন। 


আরও পড়ুন- 

ধর্ষকদের পাশবিকতা থেকে নারীদের রক্ষা করতেই মৃত্যুদণ্ডের বিধান: প্রধানমন্ত্রী
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, অধ্যাদেশে রাষ্ট্রপতির সই

৬ মাসে শেষ করতে হবে ধর্ষণের বিচার, সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলে ধর্ষণ কমবে: আইনমন্ত্রী

ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নও এগিয়ে গেলো: প্রতিমন্ত্রী

ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ডে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উদ্বেগ

মৃত্যুদণ্ড নয়, ধর্ষণের বিরুদ্ধে গণজাগরণ চান শাহবাগের আন্দোলনকারীরা

মৃত্যুদণ্ড ‘সিম্পটমের উপশম’, সমাধান নয়

নারীর জন্য শীর্ষ ১০ অনিরাপদ দেশের যেগুলোতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে

/এফএস/এমএমজে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
দক্ষিণখানে ভবনের চার তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
দক্ষিণখানে ভবনের চার তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী