X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি বাড়িতে যা করছেন

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
১৬ নভেম্বর ২০২০, ০২:৫৪আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২০, ১৪:০৪

এক বছরের কারাদণ্ডের পরও প্রবেশনে মুক্তি পেয়ে বাড়িতে গাছ লাগাচ্ছেন হাসান।





সাতক্ষীরায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনের মামলায় এক বছর সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পাঁচ শর্তে প্রবেশনে মুক্তি পাওয়া আসামি মো. হাসানুজ্জামান হাসান সরদার আদালতের নির্দেশনা মেনে মাদকবিরোধী প্রচারভিযান ও বৃক্ষ রোপণ করছেন। বাড়িতে লাগিয়েছেন চারটি গাছ। একইসঙ্গে কুলগাছ পরিচর্যার পাশপাশি মাছ চাষে সময় কাটাচ্ছেন হাসানুজ্জামান। তিনি স্থানীয়দের নিয়ে মাদকবিরোধী প্রচারণা শেষে মানববন্ধনও করেছেন।
মো. হাসানুজ্জামান হাসান (৩০) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালি ইউনিয়নের ভাদড়া গ্রামের রজব আলী সরদারের ছেলে।
হাসানুজ্জামান বলেন, সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-২ এর বিচারক ইয়াসমিন নাহার আমাকে কারাগারে না পাঠিয়ে মায়ের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দিয়েছেন। আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা ওই বিচারকের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। আদালতের নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবো।
তিনি আরও বলেন, ‘একসময় অসৎ সঙ্গে মিশে অতি লোভে মাদক বহনের কাজে যুক্ত হয়ে পড়ি। কয়েকদিনের মধ্যে হাতে নাতে ফল পাই। ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে সাইকেলে করে ৩ কেজি গাঁজা চালান দেওয়ার সময় খানপুর এলাকায় র‌্যাব সদস্যরা আমাকে আটক করে। পরদিন র‌্যাব-৬ এর জেওসি আব্দুল্লাহ হেল ওয়ার্ছি বাদী হয়ে আমার নাম উল্লেখ করে মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ৩ মার্চ তিনি জামিনে মুক্তি পাই।’
হাসান বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই বছরের ২৪ ফেরুয়ারি তার নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর থেকে নিয়মিত আদালতে হাজিরার পাশাপাশি কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহের উদ্যোগ নেন তিনি। কুলচাষের জন্য এক বছর আগে পার্শ্ববর্তী বিলে তিন বিঘা জমি ইজারা নিয়ে সেখানে প্রায় ৬০০ কুল গাছ লাগান। কুল বাগানের কাছে ১০ কাঠা জমি ইজারা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছেন। বর্তমানে বাবা, মা, দু’মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচজনের সংসার তার।

মুক্তির অন্যতম শর্ত হচ্ছে প্রতি সপ্তাহে মাদকবিরোধী প্রচারণা চালাতে হবে। এর অংশ হিসেবে বাড়ির সামনে স্বজনদের নিয়ে মাদকবিরোধী মানববন্ধন করেন হাসান।


হাসানুজ্জামান হাসান আরও বলেন, গত ১০ নভেম্বর মঙ্গলবার রায়ের দিন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহার তাকে এক বছর কারাদণ্ড দেন। তবে প্রবেশন হিসেবে তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে পাঁচ শর্তে বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকার সুযোগ করে দেন। শর্তগুলো হলো, মাদকদ্রব্য সেবন না করা ও কোনও খারাপ সঙ্গীর সঙ্গে চলা যাবে না, প্রতি ছয় মাস অন্তর বাড়িতে ১০টি করে গাছ লাগাতে হবে, বাবা-মায়ের সেবা করতে হবে, সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন মাদকবিরোধী প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে এবং তিন মাস অন্তর আদালতে হাজিরা দিতে হবে। সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন অফিসার এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দেবেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি শনিবার সকাল থেকে স্থানীয়দের নিয়ে মাদকবিরোধী প্রচারনা শেষে মানববন্ধন করেছেন। একইসঙ্গে বাড়িতে চারটি গাছ লাগিয়েছেন।
হাসানুজ্জামান অবসর সময়ে অন্যের জমিতেও কাজ করেন। এছাড়া বাবা ও মাকে যথাযথভাবে সেবা যত্ন করে থাকেন। এতে তার দু’সন্তান, স্ত্রী ও বড় ভাই খুশি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে তারা আমাকে সব ধরনের সহযোগতিা করবেন। এর ব্যত্য়য় হলে তারা তাকে ফের আদালতে সোপর্দ করে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
হাসানের বাবা রজব আলী সরদার, মা আকলিমা খাতুন ও বড় ভাই হাবিবুর রহমান লাল্টু বলেন, প্রচলিত আইনে কারাগারেই থাকতে হতো হাসানকে। কিন্তু তার কারাদণ্ডের আদেশ ঘোষণার পরেও বিচারক যেভাবে হাসানকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ করে দিয়েছেন তা তারা চিরজীবন মনে রাখবেন। এজন্য তারা ওই বিচারকের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
হাসান আলীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম বাবু বলেন, বিচারক ইয়াসমিন নাহার প্রচলিত আইনের বাইরে গিয়ে প্রবেশনে হাসানকে পরিবারের মধ্যে থেকে কিছু শর্ত আরোপ করে যেভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। প্রবেশনের জন্য কোনও আবেদন না করার পরও জীবনের প্রথম অপরাধ হিসেবে তাকে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তিনিও বিচারক ইয়াসমিন নাহারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের প্রবেশন অফিসার সুমনা শারমিন বলেন, তিনি হাসানুজ্জামানের বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং তিন মাস পরপর আদালতে রিপোর্ট জমা দেবেন।

 

/টিএন/
সম্পর্কিত
ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর মোটরসাইকেল বহরে বোমা হামলা
ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
সর্বশেষ খবর
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক এমডিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক এমডিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বঙ্গোপসাগরে ডুবলো জাহাজ, ভাসছেন ১২ নাবিক
বঙ্গোপসাগরে ডুবলো জাহাজ, ভাসছেন ১২ নাবিক
মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির
মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির
ভারতের একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৬
ভারতের একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৬
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের