X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

এনআইডি জালিয়াতি করে গ্রাম পুলিশ নিয়োগ, দায় নিচ্ছে না কেউ

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
১৬ নভেম্বর ২০২০, ১৮:৩৬আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২০, ১৮:৪১

রাজারহাট ইউনিয়ন পরিষদ

ন্যাশনাল আইডিডেন্টিটি ডকুমেন্ট (এনআইডি) জালিয়াতি করে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার রাজারহাট ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশ পদে অপ্রাপ্তবয়স্ক এক কিশোরকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রংপুর এর উপ-পরিচালক বরাবর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই পরিষদের এক ইউপি সদস্য। ইউএনও নূরে তাসনিম অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করলেও বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে জানিয়ে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) গ্রাম পুলিশ বাহিনী গঠন, প্রশিক্ষণ, শৃঙ্খলা ও চাকরির শর্তাবলী সম্পর্কিত বিধিমালা ( সংশোধিত ২০১৭) অনুযায়ী গ্রাম পুলিশ নিয়োগে বাছাই কমিটির সভাপতি হবেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। এছাড়াও ওই কমিটিতে উপজেলা প্রকৌশলী, সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা (সদস্য-সচিব) থাকবেন।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, সম্প্রতি রাজারহাট ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডে গ্রাম পুলিশ (মহল্লাদার) পদ শূন্য হলে ওই পদে চলতি বছরের জুলাই মাসে গৌতম রায় নামে এক কিশোরকে নিয়োগ দেয় বাছাই কমিটি। কিন্তু, গৌতম রায় নামে ওই এলাকায় কোনও ব্যক্তি নেই।  স্থানীয় ২ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বাবু অভিযোগ করেছেন, নিয়োগ পাওয়া গৌতম রায় মূলত ওই ওয়ার্ডের নির্মল কুমার রায়ের ছেলে নিপ্পন কুমার রায় (১৭)।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজারহাট ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ প্রফুল্ল কুমার রায় মারা যাওয়ার পর তার নাতি নিপ্পন কুমার রায়কে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক। কিন্তু, নিপ্পন কুমারের ১৮ বছর বয়স পূর্ণ না হওয়ায় চেয়ারম্যান তাকে নাম ও জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে অষ্টম শ্রেণি পাসের সনদ এবং এনআইডি কার্ড তৈরি করে আবেদন করার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী নিপ্পন কুমারের নাম পরিবর্তন করে গৌতম রায় এবং জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে ১২ ডিসেম্বর ১৯৯৬ দেখিয়ে আবেদন করে। এ আবেদন পাওয়ার পর তাকে নিয়োগ দেয় কমিটি। যদিও এসএসসি পাসের সনদ অনুযায়ী তার নাম নিপ্পন কুমার রায় এবং জন্ম তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৩ সাল।

এ ব্যাপারে অভিযোগকারী ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বাবু বলেন,‘আমার ওয়ার্ডে গৌতম রায় নামে কোনও ব্যক্তি নেই। মূলত আমার ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা নির্মল কুমার রায়ের একমাত্র ছেলে নিপ্পন কুমার রায়কে গৌতম রায় পরিচয় দিয়ে গ্রাম পুলিশ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার নাম, পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও এনআইডি কার্ড জালিয়াতি করে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গৌতম রায় নামে যে এনআইডি কার্ড (১৯৯৬৪৯১৭৭৭৩৮৯৮৫৯৬) আবেদনপত্রের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে তা নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে সার্চ করলে কোনও তথ্য পাওয়া যাবে না।’

এই নিয়োগে মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেন হয়েছে অভিযোগ করে শহিদুল ইসলাম বাবু আরও বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান ও তৎকালীন ইউএনও মিলে জালিয়াতির মাধ্যমে এই নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন।’

নিজের নাম পরিবর্তন করে টাকার বিনিময়ে গৌতম কুমার নামে নিয়োগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত গ্রাম পুলিশ নিপ্পন কুমার রায়ও। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান এনামুল হকের পরামর্শে নাম পরিবর্তন করেছি। এখন এটাই সমস্যা হয়েছে। চেয়ারম্যান আর মেম্বারের দ্বন্দ্বে এখন আমাদের সমস্যা হচ্ছে।’ নিজেদের দরিদ্রতা ও অক্ষমতার কারণে মৃত দাদার পদে নিয়োগ নিয়েছেন বলেও জানান এই কিশোর।

নিপ্পন ও গৌতম একই ব্যক্তি এ কথা স্বীকার করলেও প্রার্থীর কাছে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাজারহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক। তিনি  বলেন, ‘এই নিয়োগ দিয়েছেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি নিয়োগ কমিটির সভাপতি ছিলেন। আমি কমিটির সদস্য মাত্র। যদি কোনও জালিয়াতি হয়ে থাকে তাহলে সে দায় আমার নয়, ইউএনও’র।’

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সনদ ও এনআইডি কার্ড জালিয়াতির বিষয়ে চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক বলেন, ‘ওই নিয়োগে এনআইডি কার্ড নেওয়া হয়নি। শুধু জন্ম নিবন্ধন সনদ ও অষ্টম শ্রেণি পাসের সার্টিফিকেট নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী সব কিছু ঠিক আছে।’

যদিও নিপ্পন কুমার রায়ের জন্ম নিবন্ধন সনদে তার জন্ম তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৩ সাল এবং তাতে চেয়ারম্যান এনামুল হকের স্বাক্ষরও রয়েছে।

রাজারহাট উপজেলার বর্তমান ইউএনও নূরে তাসনিম বলেন,‘ গ্রাম পুলিশ নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি তদন্তাধীন। অভিযোগের বিষয়গুলো তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।’

পূর্ববর্তী ইউএনও নিয়োগের জালিয়াতির দায় এড়াতে পারেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বর্তমান ইউএনও বলেন,‘এটা আসলে কাগজপত্র দেখতে হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কী কী পেপার্সের ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন, উনি নিজে হয়তো অতো জানতেন কিনা। এটা আসলে অনেক কিছু জানতে হবে। এতো তাড়াতাড়ি কমেন্টস করা যায় না।’

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দক্ষিণ চীনে বন্যা, সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এক লাখ মানুষকে
দক্ষিণ চীনে বন্যা, সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এক লাখ মানুষকে
‘অ্যাকটিভ অর্গানাইজেশন অ্যাওয়ার্ড’ পেলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়
‘অ্যাকটিভ অর্গানাইজেশন অ্যাওয়ার্ড’ পেলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়
সনদ বাণিজ্য: কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে
সনদ বাণিজ্য: কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে
পদ্মায় গোসল করতে নেমে ৩ মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু
পদ্মায় গোসল করতে নেমে ৩ মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা