X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিথ্যা মামলায় সন্তান জেলে আছে বলে অভিযোগ পিতার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
২৫ নভেম্বর ২০২০, ১৮:০২আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২০, ১৮:০৩

 

মিথ্যা মামলায় সন্তান জেলে আছে বলে অভিযোগ পিতার

কেডিএস গ্রুপের আক্রোশের শিকার হয়ে মিথ্যা মামলায় আমেরিকার পাসপোর্টধারী একজন জেল খাটছে বলে অভিযোগ পরিবারের। সন্তানকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পিতা মোয়াজ্জেম হোসেন খান। তার অভিযোগ, কেডিএস গ্রুপ তার ছেলে মুনির হোসনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নাজেহাল করছে। গত এক বছরে মুনিরের বিরুদ্ধে কেডিএস গ্রুপ ২৬টি মামলা দায়ের করেছে।

বুধবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ জানায় পরিবার।

লিখিত বক্তব্যে এই পিতা বলেন, তার ছেলে ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে ব্যাংক অব আমেরিকা ফ্লোরিডায় সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চাকরি করে। ২০০৭ সালে মুনির হোসেন তার স্কুল বন্ধু কেডিএস গ্রুপের কেওয়াই স্টিলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমানের অনুরোধে দেশে এসে কেওয়াই স্টিল মিলের নির্বাহী পরিচালক হিসাবে যোগদান করে। অল্প সময়ে কোম্পানির উন্নতির কারণে মুনির হোসেন খাঁনকে নির্বাহী পরিচালকের পদ থেকে পেইড ডাইরেক্টর করা হয়। এরপর তার প্রচেষ্টায় এই প্রতিষ্ঠান দেশের একটি শীর্ষ স্থানীয় টিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে (মুরগি মার্কা ঢেউটিন) পরিণত হয়। ২০০৭ সালে মুনির যখন কেডিএস গ্রুপের এই কোম্পানিতে যোগ দেয়, তখন এর মূলধন ছিল অল্প টাকা। ২০১৮ সালে তা বিশাল অঙ্কে দাঁড়ায়। কোম্পানিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারণে মুনির হোসেনের সাফল্যের কথা স্টিল জগতে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলার কথা উল্লেখ করে মোয়াজ্জেম হোসেন খান বলেন, ২০১৮ সালের জুন থেকে কেডিএস গ্রুপের চাকরি ছাড়ার পর প্রায় দেড় বছর বেকার থাকে মুনির। সবাই তাকে আমেরিকায় চলে গিয়ে সেখানে স্থায়ী হওয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু মুনির দেশে থেকে যায়। ২০১৯ সালে মুনির আরেকটি কোম্পানি অ্যাপোলো স্টিলের পরামর্শক হিসাবে যোগদান করে। কোম্পানিটি পরবর্তীতে মুনিরের নেতৃত্বে কেওয়াই স্টিলের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে। এতে তারা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। তাকে ওই কোম্পানি ছেড়ে দিতে বলা হয়। কাজ না হওয়ায় রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি অংশকে ব্যবহার করে২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর প্রথম চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানায় একটি গাড়ি চুরির মামলা করে মুনিরের নামে। মামলায় যেসময়টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেসময় মুনির ঢাকায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ছিলেন। ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ স্কুল থেকে সংগ্রহ করে আদালতে জমা দেওয়া হয়। তবুও এই মামলায় তাকে গ্রেফতার করে তিন বার রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এরপর একে একে আরও ২৫টি মামলা করা হয়। একটি মামলা থেকে জামিন নেওয়ার আগে আরেকটি মামলা হয়। আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় ৫টি, ঢাকার গুলশান থানায় একটি এবং চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেহ মোহাম্মদ নোমানের কোর্টে ১৯ মামলা করে কেডিএস গ্রুপ। সে এখন ২০টি মামলায় জামিনে আছে। গাড়ি চুরির মামলা ছাড়া বাকি সব মামলায় প্রায় একই রকমের অভিযোগ। প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ করার কথা বলা হয়েছে। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশের আমেরিকান দূতাবাস তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে পত্র দিয়েছে। মামলায় তার বিরুদ্ধে ফ্যাক্টরির জন্য কাঁচামাল আমদানির সময় রফতানিকারক থেকে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ আনা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। মুনিরকে ওইসব কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে একটি কাল্পনিক চুক্তিও তারা আদালতে উপস্থাপন করছে। কিন্তু মুনিরের পিতা হিসেবে আমি ওইসব কোম্পানিতে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি মুনির তাদের কোনও এজেন্ট নয়। তারা যে চুক্তিপত্র দেখাচ্ছে তা ভূয়া।

কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের দ্বিতীয় ছেলে ইয়াসিন রহমান টিটু উত্তরাধিকারসূত্রে কেওয়াই স্টিলের একজন মালিক। বর্তমানে তিনি জেলবন্দি থাকায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরেই নিয়মিত কেওয়াই স্টিলের ব্যবসায়ীক সভা করেন বলে অভিযোগ করেন মোয়াজ্জেম হোসেন খান।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল বিকালে প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট ইনচার্জ ইমরান হোসেন এবং জিএম আবদুল কালামসহ ১০ কর্মকর্তা নিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে বোর্ড মিটিং করেন ইয়াসিন রহমান টিটু। মিটিংটি জেল সুপারের কক্ষের পাশে কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে টিটু প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মারধর করে ও হুমকি দেয়। ঘটনাটি আমার ছেলে তার বন্ধু সেলিম রহমানকে ২০১৮ সালের ১০ মে একটি ইমেইল করে জানায়। এরপর আরও একাধিকবার সেলিম রহমান এবং খলিলুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে কথা বলার চেষ্টা করে। তবে তারা কোনও সাড়া দেননি।

তিনি আরও বলেন, তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের একজন সাবেক কর্মকর্তা এবং একজন ক্যাপ্টেন। বন্দর থেকে অবসর নিয়ে তিনি তার ছোট ছেলেকে নিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠান চালান। মুনির স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় এবং উচ্চবেতনে চাকরি করায় তাকে তাকে ব্যবসায় সম্পৃক্ত করেননি এবং তার কাছ থেকে কোনদিন একটা টাকাও নেননি। অথচ কেডিএস গ্রুপ হয়রানিমূলকভাবে মুনিরের বিরুদ্ধে যেসব মামলা করছে, সেসব মামলায় তাকে এবং তার ছোট ছেলের নামও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যুক্ত করে দিয়েছে।

মোয়াজ্জেম হোসেন খানের করা এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানে সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।

পরে এ বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার আহসানুল হক হেনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'উনার বিরুদ্ধে যেসব মামলা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে। তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।'

২০১০ সালের ঘটনার অভিযোগে এখন মামলা দায়ের করা হচ্ছে কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মামলা দায়ের করার নির্দিষ্ট কোনও সময় থাকে না। এখন তার বিরুদ্ধে মামলা করার উপযুক্ত সময় মনে হয়েছে, তাই এখন মামলা দায়ের করা হয়েছে। কারাগারে মারধর আর বোর্ড মিটিং করার বিষয়টি মিথ্যা। এ বিষয়ে আমরা সংবাদ সম্মেলন করে আপনাদের জানাবো'

 

 

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
সর্বাধিক পঠিত
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!