নারায়ণগঞ্জের পৌর মেয়র আইভী রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে হিন্দু দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ শাখার উদ্যোগে প্রতীকী অনশন কমর্সূচি পালন করা হয়েছে। চাষাঢ়া শহীদ মিনারে দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। পরে অনশনকারীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি মহসিন মিয়া।
সভায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর কঠোর সমালোচনা করে বক্তরা বলেন, হিন্দু সম্পত্তি দখল করে কেউ পার পাবেন না। কারণ, আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। এই দলে ভূমিদস্যূদের কোনও জায়গা হবে না। বিশেষ করে হিন্দু সম্পত্তি দখলকারীদের কোনও অবস্থায় শেখ হাসিনার কাছে জায়গা হবে না।
বক্তারা আরও বলেন, জনগণের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়ে হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করে আবার তাদের কাছে গিয়ে ভোট চাইবেন, জনদরদী সাজবেন, এসব ভণ্ডামি নারায়ণগঞ্জে চলবে না। আগামী নির্বাচনের আগে জিওস পুকুরের জায়গার দখল ছেড়ে দিয়ে হিন্দুদের লক্ষীনারায়ণ আখড়ার জমি মন্দিরকে বুঝিয়ে দিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানান তারা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল বলেন, জিওস পুকুর লক্ষীনারায়ণ আখড়ার দেবোত্তর সম্পত্তি। এটি কোনোভাবেই কেউ বেচাকেনা করতে পারে না। জিওস পুকুর অবৈধ দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের মানুষের চোখে ধুলা দেওয়ার সময় শেষ। ভোটের সময় এলে মাথায় সিঁদুর দিয়ে হিন্দুদের কাছে যাবেন। আবার ভোটে জয়ী হয়ে হিন্দুদের দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করবেন তা হবে না। নারায়ণগঞ্জের মানুষ এসব ভণ্ডামি মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করে আওয়ামী লীগের বদনাম করবেন, এই দায়ভার দল বহন করবে না।
ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি চন্দন শীল বলেন, নারায়ণগঞ্জে শুধু হিন্দুর সম্পত্তি নয়, কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জমি যাতে কেউ দখল করে নিতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করছি।
তিনি বলেন, হিন্দু দেবোত্তর সম্পত্তি আইনগতভাবে বেচাকেনা করা যায় না। কিন্তু একটি চক্র এই জালিয়াতির মাধ্যমে দেবোত্তর সম্পত্তির কাগজ বানিয়ে দখল করে রেখেছে। এখন ভরাট করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তিনি সাবধান করে দিয়ে বলেন, দেবোত্তর সম্পত্তি লক্ষীনারায়ণ আখাড়ার কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় জনতার আদালতে মেয়র আইভীসহ তার পরিবারের সদস্যদের জবাব দিতে হবে।
কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি মহসিন মিয়া জানান, হিন্দুদের দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রি করা যায় না। কিন্তু একটি চক্র জালিয়াতির মাধ্যমে এই জমি দখল করে রেখেছে। যারা এটি দখল করে রেখেছেন, তারা অপরাধ করেছেন।
তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরসহ ধর্মীয় কোনও জায়গা যদি কেউ জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করে রাখে এবং কেউ যদি মামলা করেন, তা উদ্ধারের জন্য বিনা পয়সায় আইনি সহায়তা দেবো।
নারায়ণগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক কুমার সাহার সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন প্রবীর কুমার সাহা, লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব কমিটির সভাপতি সরোজ কুমার সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি নারায়ণগঞ্জ শাখার সভাপতি চন্দন শীল, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মহসিন মিয়া, নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আকরাম আলী শাহীন, বন্দর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি, দুলাল প্রধানসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন উপজেলার প্রতিনিধিরা।