X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও আলুর বীজ নিয়ে শঙ্কা

দুলাল আবদুল্লাহ, রাজশাহী
০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ২১:১০আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ২১:১৪

রাজশাহী অঞ্চলে জমিতে আলু লাগানোর কাজ মাঝামাঝি পর্যায়ে রাজশাহী অঞ্চলে আলু আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এরই মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় ৫৩ শতাংশ আলু লাগানো শেষ হয়েছে। এ বছর আলুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বীজ আলুতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। চড়া দামে কিনতে হচ্ছে বীজ। এছাড়া রাজশাহী অঞ্চলে অধিকাংশ চাষি জমি লিজ নিয়ে আলুর আবাদ করেন। অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি দামে জমি লিজ নিতে হচ্ছে তাদের। এতে অন্যান্য বছরের তুলনায় আলু আবাদে উৎপাদন খরচ বাড়বে এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, এ বছর রাজশাহী কৃষি অঞ্চল নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৬৭৭ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৭৯ মেট্রিক টন আলু। এ অঞ্চলে গত বছর আলুচাষ হয়েছিল ৫৮ হাজার ৬৭৬ হেক্টর জমিতে। যেখানে উৎপাদন হয়েছিল ১৩ লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন। এবছর প্রায় এক হাজার হেক্টর কম জমিতে আলুর আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও গত বছরের উৎপাদনের চেয়ে ১৮ হাজার ৫২১ মেট্রিকটন কম ধরা হয়েছে। তবে এ বছর আলু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেশি থাকায় শেষ পর্যন্ত আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে কৃষি অফিস। রাজশাহী অঞ্চলে জমিতে আলু লাগানোর কাজ মাঝামাঝি পর্যায়ে

এছাড়া রাজশাহী জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যেখানে হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ২৬ টন। এ বছর রাজশাহী অঞ্চলে আলুবীজের চাহিদা ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন।

রাজশাহীতে আলুবীজের যে চাহিদা এর অধিকাংশই চাষিরা নিজেরাই উৎপাদন করেন। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বেশকিছু সংস্থা আলুবীজ উৎপাদন করে। এতে আলুবীজের তেমন কোনও সংকট হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজশাহী অঞ্চলে জমিতে আলু লাগানোর কাজ মাঝামাঝি পর্যায়ে

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) রাজশাহী অফিসের তথ্য মতে, বিএডিসি সারা বাংলাদেশে ৩৬ হাজার মেট্রিক টন আলু বীজ উৎপদান করে। এবছর রাজশাহীর জন্য সরকারিভাবে আলুবীজের বরাদ্দ এক হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন। এসব বীজ ডিলারদের মাধ্যমে চাষিদের কাছে পৌঁছে যায়।

আলুবীজের তিনটি গ্রেড আছে। এর মধ্যে ‘সি’ গ্রেড ৪৬ টাকা কেজি, ‘বি’ গ্রেড ৪৭ টাকা কেজি ও ‘এ’ গ্রেড আলু ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। 

চাষিরা বলছেন, এবছর আলুর দাম ভালো থাকায় অনেক নতুন চাষি আলুর আবাদ করছেন। আর এ বছর অন্যান্য বছরগুলোর চেয়ে আলু আবাদে খরচ বাড়বে। কেননা এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি দামে জমি লিজ নিতে হচ্ছে। বীজের দামও বেশি। এ বছর বাজারে আলুর দাম ভালো থাকায় কৃষক পর্যায়ে অনেকেই বীজ আলু খাওয়ার জন্য বিক্রি করেছেন। এর প্রভাবেই হয়তো বীজ আলুর দাম বেড়েছে। এছাড়া একটি সিন্ডিকেট চক্রও এর সুযোগ নিচ্ছে বলে মনে করছেন চাষিরা। রাজশাহী অঞ্চলে জমিতে আলু লাগানোর কাজ মাঝামাঝি পর্যায়ে

রাজশাহীর পবা উপজেলার আলু চাষী উজ্জ্বল হোসেন জানান, এ বছর তিনি প্রায় পাঁচ বিঘা মতো জমিতে আলু চাষ করবেন বলে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু আলুর দাম থাকায় অনেকেই আলু চাষে ঝুঁকেছে। তাই পরে তিনি আড়াই বিঘা মতো এবার আলু চাষ করছেন। এ বছর তার নিজেরই বীজ আলু ছিল। দাম ভালো পাওয়ায় তিনি অর্ধেক বীজ বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি ৫৮ টাকা কেজি দরে এই বীজ আলু বিক্রি করেছেন।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আলু চাষি শফিকুল ইসলাম ছানা জানান, চলতি মৌসুমে ৪০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে ২২ বিঘা জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে। ডিলারের কাছ থেকে বিএডিসির সরবরাহকৃত আলুবীজ কিনেছেন তিন মেট্রিক টন। এসিআই কোম্পানির কাছে থেকে নেওয়া হয়েছে ছয় মেট্রিকটন। আগে অর্ডার করার পরও বীজগুলো সংগ্রহ করতে বেগ পেতে হয়েছে তাকে। নতুন চাষিরা অনেকেই বীজ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন বলেও জানান তিনি। রাজশাহী অঞ্চলে জমিতে আলু লাগানোর কাজ মাঝামাঝি পর্যায়ে

বাঘা উপজেলার বিএডিসি ডিলারের উপজেলা প্রতিনিধি অধ্যক্ষ সামরুল হোসেন জানান, তার উপজেলার ১২ জন ডিলারের মধ্যে সবাই আলু বীজ পাননি। বীজ সংগ্রহের জন্য এক মাস আগে ডিলাররা টাকা জমা দিয়েছেন। এরপরও বীজ সংগ্রহ করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। এতে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বীজ সংকটের আশঙ্কা করছেন চাষিরা বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) রাজশাহী অফিসের উপপরিচালক (বীজ) আব্দুর রহমান জানান, এ বছর আলু বীজের চাহিদা বেশি। তবে বীজের সংকট আছে কিনা এ বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। 

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, রাজশাহী অঞ্চলে এখন পর্যন্ত অর্ধেকের বেশি আলু লাগানো শেষ হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে আলু লাগানো শেষ হয়ে যাবে। প্রাকৃতিক বড় কোনও দুর্যোগের মধ্যে না পড়লে এবছর আলু আবাদের যে লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে এর চেয়ে উৎপাদন বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, ‘বীজের চাহিদা এ বছর বেশি থাকলেও বীজের কোনও সংকট হবে না। কেননা এখন সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারিভাবে অনেকেই বীজ উৎপাদন করছেন। আর খরচের বিষয়টা একেক জায়গায় একেক রকম হয়ে থাকে।’

 

 

/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা