নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ দ্বিতীয় ধাপে কক্সবাজার থেকে আরও ১ হাজার ৮শত ৪ জন রোহিঙ্গা পৌঁছেছে। আজ মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) বেলা ১টায় নৌ-বাহিনীর ছয়টি জাহাজে করে ভাসানচরে পৌঁছান তারা।
এর আগে, সকাল ৯ টায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নৌবাহিনীর জেটি থেকে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় তাদের বহনকারী জাহাজগুলো।
কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে ২ বছর আগে তাদের একটি অংশকে নোয়াখালীর হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।
মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ২ ধাপে ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে আগেই ভাসানচরে রাখা হয়েছিল।
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৩ হাজার একর আয়তনের এই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে প্রায় ১ লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন জানান, দ্বিতীয় দফায় নৌবাহিনীর ছয়টি জাহাজে আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টায় নোয়াখালীর ভাসানচর এসে পৌঁছায় এক হাজার ৮ শত ৪ জন রোহিঙ্গা।
তিনি আরও জানান, ভাসানচরে আসা সকল রোহিঙ্গার প্রথমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। তারপর ওয়ার হাউজে নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের ব্রিফিং শেষে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ক্লাস্টারে বসবাসের জন্য তাদের পাঠানো হয়। আগামী এক সপ্তাহ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তাদেরকে খাবার সরবরাহ করা হবে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখানো ভিডিও ফুটেজ অনুযায়ী, ভাসানচরের দ্বিতীয় দফার দলটি আসার পর তাদের বিশ্রাম গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর সেখানে তাদের সামনেই প্রথম দফায় যাওয়া রোহিঙ্গারা ফুটবল খেলতে নামে। পাশাপাশি আরেকদল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের জন্য এখানে একটি ফুটবল মাঠ, দুটো ভলিবল মাঠ, সাংস্কৃতিকর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য রোহিঙ্গা শিল্পীদের পছন্দ অনুযায়ী বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি সরবরাহ করা হয়েছে। এখানে আসার পর তাদের সুকুমার বৃত্তির চর্চার সুযোগ পেয়ে রোহিঙ্গারা আপ্লুত। তারা জানান, ক্যাম্প থেকে যাতে না আসেন সেজন্য অনেকে অনেক রকম ভয় দেখিয়েছিল। কিন্তু, সে ভয়কে পাত্তা না দিয়ে আগে আসা আত্মীয় স্বজনের কথা শুনে স্বেচ্ছায় তারা এসেছেন। এখানে এসে জায়গাটি দেখে তাদের খুব ভালো লাগছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার শরনার্থী ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দলকে দেখার জন্য ভাসানচরে পাঠানো হয়। তারা ফেরার পর তাদের কথা শুনে একাংশ ভাসানচরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে এক হাজার ৬ শত ৪২ জন রোহিঙ্গা ভাসানচর যান।