X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমার বাচ্চা ছেলেকে এভাবে মারতে পারলো!’

দুলাল আব্দুল্লাহ, রাজশাহী
২৬ অক্টোবর ২০১৬, ০২:৫৫আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ০২:৫৭

স্কুলছাত্র মনিরুল ‘ধরেন, আমার ছেলে মোবাইল চুরি করেছে। তাই বলে তাকে দোকানের সঙ্গে ঝুলিয়ে তিন ভাই মিলে এভাবে নির্যাতন করবে! তাকে ধরে এনে আমাদের কাছে কিংবা স্থানীয় মুরব্বিদের কাছে তারা নালিশ করতে পারতো।’ মঙ্গলবার রাতে মুঠোফোনে বাংলাট্রিবিউনকে এসব বলছিলেন রাজশাহীর বাঘার নির্যাতিত শিশু মনিরুলের মা আবেদা বেগম।

সোমবার মোবাইল চুরি সন্দেহে মনিরুল ইসলাম (১৩) নামে এক স্কুলছাত্রকে দোকানের সঙ্গে ঝুলিয়ে মারধর করে তিন ভাই। ঘটনাটি ঘটে উপজেলার নারায়ণপুর বাজারের মনিকা সিনেমা হলের সামনে। অভিযুক্ত তিন ভাই হলেন, পুলিশ সদস্য জিল্লুর রহমান, সেনা সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন ও ব্যবসায়ী মহিবুল আলম। জিল্লুর রহমানকে এরই মধ্যে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মনিরুলের মা আবেদা বেগম মামলা করেছেন।

আবেদা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী ঢাকায় চাকরি করেন। বড় ছেলেও চাকরির জন্য ঢাকায় গেছেন। আর মেজো ছেলে মনিরুল মোবাইল চুরি করবে, আর সে টাকায় সংসার চালাবো- এটা কোনও মা করতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার এই ছেলেটার লেখাপড়ায় তেমন মন নেই। খালি ঘুরে বেড়ায়। তার মানে এই নয় যে, আমার ছেলে ওই লোকের (জিল্লুর রহমান) মোবাইল চুরি করেছে। অন্যের জিনিসের প্রতি আমার ছেলের লোভ নেই। আর ওরা তো অন্য গ্রামের। তাদের আমি ও আমার ছেলে আগে কখনও দেখিনি। তারা মোবাইল চুরি সন্দেহে আমার বাচ্চা ছেলেকে এভাবে মারতে পারলো!’ 

মঙ্গলবার বিকালে বাঘা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বাড়ি ফিরেছে মনিরুল। মোবাইল ফোনে সে বাংলা ট্রিবিউনকে বলে, ‘সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ব্যাডমিন্টন কোর্ট কাটতে নারায়ণপুর মাছ বাজারে বন্ধু শাওনকে ডাকতে গিয়েছিলাম। ওই সময় বাজারে জিল্লুর রহমানের মোবাইল ফোন হারিয়ে যায়। মোবাইল চোর সন্দেহে তিন ভাই আমাকে মোটরসাইকেলে তুলে মনিকা সিনেমা হলের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে মোবাইল ও ফ্ল্যাক্সিলোড ব্যবসায়ী আনারুলের দোকানের সামনে ধরে রাখে। এরপর দড়ি দিয়ে আমার দুই পা বেঁধে ফেলে এবং মুখের ওপর কিল-ঘুষি মারে। এরপর একটি বাঁশের টুকরা দিয়ে পেটায়। শেষমেশ পেটায় দোকানের সঙ্গে উল্টো করে ঝুলিয়ে।’ মনিরুল জানায়, এ ঘটনার দৃশ্য দাঁড়িয়ে মানুষজন দেখতে থাকে। কিন্তু নির্যাতনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রথমদিকে কেউ এগিয়ে আসার সাহস পায়নি। কিন্তু নির্যাতনের দৃশ্য সইতে না পেরে একত্রিত হয়ে বাজারের লোকজন নির্যাতনকারীদের ধাওয়া করে।

মনিরুল বলে, ‘প্রথমে আমাকে এক হাজার টাকা দিয়ে মোবাইল নেওয়ার কথা বলেন ওই লোকটি (পুলিশের বহিস্কৃত হাবিলদার হাফিজুর রহমান জিল্লুর)। কিন্তু আমি তাকে বলি, আপনার মোবাইল নেইনি। সে আমার কথা বিশ্বাস করেনি। আমি তাদের বিচার চাই।’   

অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ও মানবাধিকার কর্মী এহসানুল আমিন ইমন বলেন, ‘একটার পর একটা শিশু নির্যাতনের ঘটনার মূল কারণ হলো, অপরাধীদের শাস্তি না হওয়া। এছাড়া সমাজের এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে নিজেদের খুব বড় ভাবার প্রবণতা বেড়েছে। এ কারণে তারা অন্যায় করতে কোনও দ্বিধা করে না।’

বাঘা থানার ওসি আলী মাহমুদ বলেন, ‘আমরা এই মামলাটি খুব গুরুত্ব সহকারে দেখছি। অপরাধী যেই হোক, ছাড় দেওয়া হবে না।’

/এআরএল/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ধূসর ছবির ঝকঝকে প্রিন্ট!
ধূসর ছবির ঝকঝকে প্রিন্ট!
এবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
এবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
আমান উল্লাহ আমানকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিলেন আপিল বিভাগ
আমান উল্লাহ আমানকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিলেন আপিল বিভাগ
বুধবার থেকে ঢাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা সশরীরে
বুধবার থেকে ঢাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা সশরীরে
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?