বগুড়ায় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় ৯ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন ও আড়াই কোটির অধিক টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিকালে অভিযোগপত্র গ্রহণ শেষে বগুড়ার সিনিয়র স্পেশাল জজ এ কে এম মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ আদেশ জারি করেন। বুধবার দুপুরে ওই আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সরকারি কৌঁসুলি এস এম আবুল কালাম আজাদ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
দুদক ও আদালত সূত্র জানিয়েছে, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম মোহন বগুড়া শহরের বাদুড়তলা এলাকার মৃত দারোগা শাহ আলমের ছেলে। তার নিজ ও পোষ্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০১৯ সালে দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ করা হয়। তিনি ওই বছরের ১৮ আগস্ট বগুড়া কার্যালয়ে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। তদন্তে দায়-দেনা বাদে তার নিট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৩৬ লাখ ৫১ হাজার ৬১৪ টাকা। আর ব্যয়/খরচসহ তার নামে অর্জিত মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮ কোটি ৭৬ লাখ ৫০ হাজার ৯৯৩ টাকা। উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে মঞ্জুরুল আলম মোহনের মোট গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায়, নয় কোটি ৯৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৬ টাকা।
এ ক্ষেত্রে মোহন তার নিজ ও নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের নামে অবৈধ পন্থায় অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত আট কোটি ৮১ লাখ চার হাজার ৭৭ টাকা মূল্যমানের সম্পদ অর্জন করে তা নিজ ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
অনুসন্ধানের পর দুদক বগুড়া কার্যালয়ের সাবেক সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম গত ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি মোহনের বিরুদ্ধে নিজ কার্যালয়ে মামলা করেন। পরে সহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান ও সহকারী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম তদন্ত করেন। তদন্তকালে মঞ্জুরুল আলম মোহনের দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে দুই কোটি ৫৮ লাখ ৯১ হাজার ৩০৪ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন ঘোষণা প্রদান এবং নিজ ও পোষ্যদের নামে অবৈধ পন্থায় অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত আট কোটি ৮১ লাখ চার হাজার ৭৭ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের সত্যতা পাওয়া যায়।
এ পরিমাণ সম্পদ নিজ ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম গত ৭ জুলাই বগুড়ার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। এতে আসামি মঞ্জুরুল আলম মোহনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়।
দুদকের কৌঁসুলি এস এম আবুল কালাম আজাদ জানান, গত মঙ্গলবার ওই অভিযোগপত্র (চার্জশিট) গ্রহণের দিন ছিল। শুনানি শেষে আদালত আসামি মঞ্জুরুল আলম মোহনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। দুয়েকদিনের মধ্যে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হবে।