বিভিন্ন সরকারি-আধা সরকারি, ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান ও সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রংপুর কার্যালয়ে দেওয়া লিখিত অভিযোগ নিয়ে বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও সেটি অনুসন্ধানের জন্য প্রধান কার্যালয়ে না পাঠিয়ে অভিযুক্তদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে পত্রটি গায়েব করে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের টেন্ডার জালিয়াতি ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে কোটি টাকার মালামাল পৌনে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি সংক্রান্ত প্রকাশিত খবরের কাটিংসহ পুরো অভিযোগের কপির সন্ধান করতে গিয়ে এ ঘটনা ধরা পড়ে। এ নিয়ে দুদক কার্যালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে বেরিয়ে আসছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সম্প্রতি রংপুর নগরীর স্টেশন রোডে অবস্থিত দুদকের সমন্বিত কার্যালয়ে গিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের টেন্ডার জালিয়াতির ঘটনায় দেওয়া অভিযোগপত্রটি পাওয়া যায়নি। এ সময় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি সংক্রান্ত আরও কিছু অভিযোগপত্র পাওয়া যায়নি।
পরে দুদকের রংপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমানকে বিষয়টি জানানো হয়। সেই সঙ্গে দুদকের রংপুর কার্যালয়ে গত তিন মাসে কতগুলো অভিযোগ এসেছে এবং এরমধ্যে কয়টি অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়। আবু হেনা আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমি রংপুর কার্যালয়ে যোগদান করার পর মাত্র চার দিন অফিস করেছি।’
এ সময় তিনি অফিসের সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের অভিযোগগুলো নিয়ে আসতে বললে শুধু রংপুর সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কয়েক দিন আগে দেওয়া অভিযোগপত্রটি নিয়ে আসেন। বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিনিধি জানতে চান অন্য অভিযোগগুলো কোথায়? তার কোনও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিষয়ে দৈনিক গড়ে ৩-৪টি অভিযোগ আসে রংপুর দুদক কার্যালয়ে। এগুলো নিয়ম অনুযায়ী রেজিস্টারে এন্ট্রি করে তিন সদস্যবিশিষ্ট বাছাই কমিটিকে দিয়ে যাচাই-বাছাই করার পর অনুসন্ধানের প্রয়োজন মনে করলে দুদক চেয়ারম্যানের দফতরে পাঠায়। কিন্তু রংপুর দুদক কার্যালয়ে অভিযোগ এলে এখানে থাকা কয়েকজন কর্মকর্তা অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে অভিযোগপত্রটি গায়েব করে ফেলেন। শুধু তাই নয়, অনেক সরকারি দফতরের বিরুদ্ধে পাওয়া লিখিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরও দুদক চেয়ারম্যানের দফতরে অনুসন্ধানের জন্য পাঠানো হয় না।
সার্বিক বিষয়ে আবু হেনা আশিকুর রহমান বলেন, ‘কারও কোনও অভিযোগ থাকলে সরাসরি চেয়ারম্যানের কাছেই দেওয়া ভালো।’ তবে তার কার্যালয়ে দেওয়া অভিযোগগুলো সম্পর্কে তিনি সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। এমনকি সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগটির বিষয়েও কিছু জানেন না তিনি।