X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

৪ বছর ধরে শিকলবন্দি এমদাদুল

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা
১০ মে ২০২২, ২৩:০৬আপডেট : ১০ মে ২০২২, ২৩:১৭

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে চার বছরের বেশি সময় ধরে হাত-পায়ে লোহার শিকল নিয়ে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন এমদাদুল হক। ৩৩ বছর বয়সী এমদাদুল হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারান। পরিবারের লোকজন ছাড়াও আশপাশের মানুষদের মারধর করতেন। অনেক সময় বাড়িঘরে ঢিল ছোড়াসহ সামনে যা পেতেন তাই ভাঙচুর করতেন। এসব ঘটনায় বাধ্য হয়ে মা তমর্জিনা বেগম তাকে শিকলবন্দি করে আটকে রাখেন। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও টাকার অভাবে তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে এমদাদুল বন্দি জীবন কাটালেও মেলেনি সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনও সহযোগিতা।     

এমদাদুলে বাড়ি সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের কিশামত বড়বাড়ি গ্রামে। বাবা রিয়িজুল হকের মৃত্যুর পর মা তমর্জিনা বেগমের কাছেই বড় হন তিনি। ছোট থেকে মেধাবী এমদাদুল স্কুলের বারান্দাতেও পা রেখেছিলেন। তবে পঞ্চম শ্রেণির পর তার আর লেখাপড়া হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, ছয় ভাইয়ের মধ্যে এমদাদুল সবার ছোট। তার ভাইয়েরা দিনমজুর এবং কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। বিয়ের পর সবাই আলাদা সংসার করছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে বাড়ির একটি টিনশেড ঘরে এমদাদুলকে নিয়ে মা তমর্জিনা বেগমের বসবাস। নিজের বাড়ি ভিটার কয়েক শতাংশ জমি ছাড়া কিছুই নেই তাদের। অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পান তা দিয়ে কোনরকমে ছেলের মুখে খাবার তুলে দেন তিনি। গত পাঁচ বছর আগে এমদাদুলের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন যেতেই হঠাৎ তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হলেও সুস্থ হননি। এরপর দিনে দিনে অস্বাভাবিক আচরণ বাড়তে থাকে। কখনও মানুষকে মারধর করতেন, কখনও সামনে যা পেতেন তাই ভাঙচুর করতেন। এ কারণে বাধ্য হয়েই তার হাত-পায়ে শিকল দিয়ে আটকে রাখা হয়।

কথা হয় এমদাদুলের মা তমর্জিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অভাবের কারণে লেখাপড়া করতে না পেরে এমদাদুল কৃষি কাজ করতো। বিয়ের পর হঠাৎ সে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এ কারণে তার সংসার হয়নি। তাকে সুস্থ করতে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করিয়েও লাভ হয়নি। চিকিৎসকরা জানান, এমদাদুল মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে। বর্তমানে অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোরকমে তার মুখে দুই বেলা খাবার তুলে দিচ্ছি। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না। শিকলবন্দি জীবন কাটালেও কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি। এমনকি মেলেনি কোনও সরকারি সহযোগিতাও।’

প্রতিবেশী শাহ আলম, আইয়ুব আলী ও মমিন মিয়াসহ কয়েকজন জানান, চার বছরের বেশি সময় ধরে শিকলবন্দি এমদাদুলকে দেখাশোনা করছেন তার মা। টাকার অভাবে দরিদ্র পরিবারের পক্ষে তাকে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি।

তারা আরও জানান, উন্নত চিকিৎসা পেলে এমদাদুল হয়তো সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন। কোনও হৃদয়বান ব্যক্তি কিংবা সরকারি-বেসকরারি কোনও প্রতিষ্ঠান তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিলে হয়তো সুস্থ হতেন এমদাদুল। একইসঙ্গে তাকে পুনর্বাসন করতে তার জন্য একটি ঘর এবং প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় নিয়ে আসতে সরকারের প্রতি দাবি জানান স্থানীয়রা।   

সাদুল্লাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মানিক রায় বলেন, ‘ইতোমধ্যে এমদাদুলকে প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ জরিপের আওতায় আনা হয়েছে। শিগগিরই তার হাতে পরিচয়পত্র তুলে দেওয়াসহ ভাতা কর্মসূচিতে আনা হবে।’ এছাড়া তাকে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতার পাশাপাশি পরিবারকেও সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

/আরকে/টিটি/
সম্পর্কিত
২৭ বছর পর বাড়ি ফিরলেন শাহীদা, পূরণ হয়নি যে আশা
পেনশনের টাকা নিয়ে গেছে একমাত্র ছেলে, বৃদ্ধাশ্রমে চোখের জলে ঈদ কাটলো নিঃস্ব মায়ের
স্বজন ছাড়াই ঈদ কাটবে আশ্রয়কেন্দ্রের শিশুদের
সর্বশেষ খবর
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া