কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় পাঁচ মাসের সন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যার চার দিন পেরিয়ে গেলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। নিহতের পরিবার এ ঘটনায় উকিল বাবা (বিয়ের অভিভাবক) জাকির হোসেন জফিয়ালকে জড়িত বলে সন্দেহ করছে। তবে জাকির কোথায় তা জানে না পুলিশ। জাকিরের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন থেকে পলাতক রয়েছেন জাকির।
এদিকে, মঙ্গলবার (২৪ মে) দুপুর থেকে উপজেলায় খবর ছড়িয়ে পড়ে র্যাব-১৪-এর একটি টিম জাকিরকে আটক করেছে। তাকে নিয়ে মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে র্যাব। এ সময় জাকিরের মাথায় হেলমেট ও হাতকড়া ছিল। তবে র্যাবের কোনও কর্মকর্তা এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তারা জাকিরকে আটক করেছে কিনা তাও নিশ্চিত করেনি।
এর আগে শনিবার উপজেলার সদর ইউপির নতুন বন্দর গ্রামে পাঁচ মাসের শিশুসন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন মা হাফছা আক্তার হারেনা (২৭) ও শিশুসন্তান হাবিব। হাফছার বাড়ি রৌমারী সদর ইউনিয়নের নতুন বন্দর এলাকায়। তিনি ওই গ্রামের আব্দুর রশীদের মেয়ে। তার স্বামীর বাড়ি উপজেলার শৌলমারী ইউপির ওকড়াকান্দা গ্রামে। স্বামীর নাম শাহের আলী। এ ঘটনায় হাফছার বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে রৌমারী থানায় মামলা করেন।
জাকিরের শ্যালক সেলিম জানান, তারাও লোক মুখে জাকিরের আটকের খবর শুনেছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে তারা নিশ্চিত হতে পারেননি।
জাকিরের খোঁজ জনেতে চাইলে স্ত্রীর বরাতে সেলিম বলেন, ঘটনার দিন হাফছাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন জাকির। এরপর বাড়িতে খাবার খেয়ে হাফছাকে গাড়িতে তুলে দেন। শুক্রবার রাতে নিজ বাড়িতেই ছিলেন তিনি। শনিবার সকাল থেকে পলাতক। তার কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকার সন্দেহের বিষয়ে সেলিম বলেন, কেমন করে বলবো? তার ঘরে স্ত্রী ও দুই সন্তান আছে। হাফছাকে অনেক স্নেহ করতেন। তাকে হত্যা করতে পারে কিনা কেমন করে বলবো? এ নিয়ে আমরা পারিবারিকভাবে বিপর্যস্ত।
এ হত্যাকাণ্ডে জাকির ও নিহতের স্বামীর সংশ্লিষ্টতা আছে বলে সন্দেহ করছে হাফছার পরিবার।
হাফছার বড় ভাই হাসেনুর রহমান বলেন, জাকির সেদিন আমার বোনকে বাড়ি থেকে নিয়ে গেছেন। পরে আমাদের কাছে বোনকে ফিরিয়ে দেননি। জাকির আর হাফছার স্বামী শাহের আলী এ ঘটনায় জড়িত বলে আমাদের সন্দেহ।
ওই দুজনের নামে মামলা না দিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করলেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে হাসেনুর বলেন, আমরা মামলার কিছু বুঝি না। পুলিশকে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছি। পুলিশ কাকে আসামি করেছে, আমরা জানি না।
হাফছা ও তার সন্তান হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও স্বামী কিংবা শ্বশুর বাড়ির কেউ দাফনে অংশ নেননি বলে জানান হাসেনুর। জাকির আর শাহের আলী কোথায় সেটাও তাদের জানা নেই।
রৌমারী থানার ওসি মোন্তাছের বিল্লাহ বলেন, বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী মামলা হয়েছে। জাকিরের অবস্থান কিংবা র্যাবের হাতে আটক হওয়ার সম্পর্কে ওসি বলেন, তার অবস্থান এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। র্যাব তাকে আটক করেছে কিনা সে খবরও জানা নেই।
র্যাব জামালপুর ১৪ ব্যাটালিয়নের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গত শুক্রবার বিকাল থেকেই জাকিরের ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। র্যাব তার অবস্থান মোটামুটি নিশ্চিত হতে পেরেছে। হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা আটকের পর জানা যাবে।
র্যাব জাকিরকে আটক করেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা গেছে। অনৈতিক কিছু বিষয়সহ অনেকগুলো কারণ আছে। কেন, কে, কীভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বুধবারের মধ্যে সবকিছু নিশ্চিত হওয়া যাবে। বুধবার বেলা ১১টার দিকে রৌমারী উপজেলা পরিষদ চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে সবকিছু জানাবে র্যাব।
আরও পড়ুন: ৫ মাসের সন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যা