X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণ মামলা থেকে বিজিবি সদস্যের খালাস পাওয়ায় তোলপাড়  

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী
২৮ জুন ২০২২, ২১:০০আপডেট : ২৮ জুন ২০২২, ২১:০০

নীলফামারীর সৈয়দপুরে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় বিজিবি সদস্য আক্তারুজ্জামান (২৯) বেকসুর খালাস পাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় চলছে। কিশোরীর স্বজনদের দাবি তদন্তে গাফিলতির কারণে অভিযুক্ত বিজিবি সদস্য খালাস পেয়েছেন। ইতোমধ্যে ওই কিশোরী নিম্ন আদালতে সুবিচার না পেয়ে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে আপিল করেছে।

ভুক্তভোগী ওই কিশোরী নীলফামারী সৈয়দপুর উপজেলার এক ভ্যানচালকের সন্তান। অভিযুক্ত বিজিবি সদস্য আক্তারুজ্জামান উপজেলার লক্ষ্মণপুর বালাপাড়া গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে।
 
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধর্ষণের অভিযোগে ওই কিশোরীর মা বাদী হয়ে ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর সৈয়দপুর থানায় আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন (এফআইআর নম্বর-১৫, ৩২৮ ধারা, পেনাল কোড ১৮৬০, ৯(১) ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন)। এ ঘটনায় দুই জনকে আটক করলেও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তবে মামলার পর থেকে বিজিবি সদস্য আক্তারুজ্জামান পলাতক ছিলেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর বিকালে সৈয়দপুর শহরের সাজেদা ক্লিনিকে জন্ম নেওয়া বোনের নবজাতককে দেখানোর কথা বলে বিজিবি সদস্য আক্তারুজ্জামান প্রতিবেশী কিশোরীকে তার বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে মোটরসাইকেলে করে শহরে নিয়ে যান। সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কিশোরীর বড় বোন তার মাকে জানান, আক্তারুজ্জামানের বোন তাকে জানিয়েছেন (ফেসবুক মেসেঞ্জারে) কিশোরী আজ বাড়ি ফিরবে না। পরদিন সকাল ৮টায় আক্তারুজ্জামানের বোন ভুক্তভোগী কিশোরীর জন্য জামা নিতে তাদের বাড়িতে আসে। মাংসের ঝোল লাগায় আগের দিন পড়ে থাকা জামা ধুয়ে দেওয়া হয়েছে বলে আক্তারুজ্জামানের বোন কিশোরীর ঘর থেকে তার আরেকটি জামা নিয়ে যান। এরপর রাত ৯টার দিকে আক্তারুজ্জামান মোটরসাইকেলে করে ভুক্তভোগী কিশোরীকে তার বাড়িতে রেখে যান।

এজলাসে ঢুকে কিশোরী বললো, আমি ধর্ষণের শিকার বিচার চাই

‘বাড়িতে রেখে যাওয়ার পর মেয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। পরদিন ১১ নভেম্বর স্থানীয় হুজুরের কাছে মেয়েকে নিয়ে গিয়ে ঝাড়ফুঁক দেওয়া হয়। এতেও মেয়ে সুস্থ না হওয়ায় ১২ নভেম্বর সকালে নীলফামারীর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিনই মেয়েকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) স্থানান্তর করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নীলফামারীর ওই হাসপাতাল থেকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের ছাড়পত্রে যৌন নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেন চিকিৎসক।’ 

তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. সাহিদুর রহমান দীর্ঘ এক বছর তদন্ত শেষে আদালতে দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ধর্ষণের অভিযোগটি মিথ্যা বলে উল্লেখ করেন। প্রতিবেদনে মামলার প্রাপ্ত তথ্য, সাক্ষ্য-প্রমাণ, চিকিৎসকের মতামত, ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতার সার্বিক চিত্র তুলে ধরে বিজিবি সদস্য আকতারুজ্জামানের কোনও অপরাধের প্রমাণ মেলেনি বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা। পরে নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গত ১৭ মে আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। এরপরই ওই কিশোরী বিচার চেয়ে হাইকোর্টে আসেন। 

তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ওই কিশোরীর বাবা ও অভিযুক্ত বিজিবি সদস্য সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। তাদের মধ্যে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। এরই জেরে পরিকল্পিতভাবে ঘটনা সাজিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। কারণ মামলার আরজিতে ঘটনার স্থান বিজিবি সদস্যর বসতবাড়ি উল্লেখ করা হয়। তবে ওই সময় স্কুলছাত্রী ক্লিনিকে অবস্থান করছিল। যা মোবাইল রেকর্ড ও ক্লিনিকের জব্দকৃত সিসিটিভি ফুটেজে উঠে আসে। এছাড়া মামলায় মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নীলফামারী থেকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখানে পরীক্ষায় কোনও ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। 

ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে হাইকোর্টে কিশোরী, আপিল দায়ের

কিশোরীর মা বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই সময় আক্তারুজ্জামান আমাদের নানা ধরনের হুমকি দেয়। প্রতিবাদ করায় কিশোরীর বাবাকেও মারতে চায়। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতেও ভয়ভীতি দেখায়। আমার ধারণা সেদিন ক্লিনিকে মেয়েকে ধর্ষণ করেছিল আক্তারুজ্জামান। কিন্তু আমরা নিম্ন আদালতে বিচার না পেয়ে বাধ্য হয়ে হাইকোর্টে যাই।’

কিশোরীর চাচা জানান, পরিবারের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ক্লিনিকে ভাতিজিকে ধর্ষণ করেছে আক্তারুজ্জামান। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। বিজিবি সদস্য হওয়ায় বিচার পাবো কিনা জানি না।

সেদিনের ঘটনার বিষয়ে আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘সে আমার চাচাতো বোন। তাকে কোথাও নিয়ে যেতে কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই। সে যেতে চেয়েছিল তাই কাউকে না বলে ক্লিনিকে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে কোনও কিছুই ঘটেনি।’

একই দাবি জানিয়ে আক্তারুজ্জামানের বোন বলেন, ‘সে ক্লিনিকে রাতে আমার সঙ্গেই ছিল। পরদিন বিকাল ৩টার দিকে তাকে আমার ভাই ক্লিনিক থেকে নিয়ে গেছে। পরে জানতে পেরেছি, সেদিন তাকে রাত ৯টায় বাড়িতে পৌঁছানো হয়।’

এদিকে, নিম্ন আদালত অভিযুক্ত বিজিবি সদস্যকে খালাস দেওয়ায় গত ১৫ জুন সকালে ওই কিশোরী মাকে সঙ্গে নিয়ে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আসে। এ সময় ওই কিশোরী আদালতের এজলাস কক্ষের ডায়াসের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

আদালত জানতে চান, কে আপনারা? কি চান? জবাবে ওই কিশোরী নিজের নাম ও পরিচয় জানিয়ে সঙ্গে থাকা ব্যক্তিটি তার মা বলে আদালতকে জানায়।

কিশোরী আরও জানায়, ‘আমার বয়স ১৫ বছর। আমি ধর্ষণের শিকার। একজন বিজিবি সদস্য আমাকে ধর্ষণ করেছে। কিন্তু নীলফামারীর আদালত (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল) তাকে খালাস দিয়েছেন। আমরা গরিব মানুষ, টাকা-পয়সা নাই। আমরা আপনার কাছে বিচার চাই।’

এরপর আদালত ওই কিশোরীর কাছে জানতে চান, তার কাছে মামলা সংক্রান্ত কোনও কাগজপত্র আছে কিনা? তখন কিশোরী মামলার কাগজ আছে বলে আদালতকে জানায়। এ সময় আদালত সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের আইনজীবী বদরুন নাহারকে মামলাটির দেখভাল করতে বলেন। 

গত রবিবার (২৬ জুন) কিশোরীর পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী বদরুন নাহার আপিল দায়ের করেন।

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নির্মোহ মূল্যায়নের খোঁজে জাসদ
নির্মোহ মূল্যায়নের খোঁজে জাসদ
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী