কুড়িগ্রামে পানির অভাবে আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না কৃষকরা। বৃষ্টির অভাবে সমতলে আবাদি জমি শুকিয়ে গেছে। জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেলেও বৃষ্টিপাত শুরু হয়নি।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে খুব সম্প্রতি এসব নদনদীর অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির পূর্বাভাস নেই।
জেলার সবকটি নদনদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা ছাড়া সব নদনদীর পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছে পাউবো। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে পাউবো জানায়, দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
পাউবো জানায়, সোমবার (২৫ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে। একই সময়ে এই নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার বেড়েছে। তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাড়ছে দুধকুমার নদের পানিও। তবে ধরলা নদীর পানি কিছুটা হ্রাস পেতে শুরু করেছে।
পাউবো বলছে, জেলার প্রধান প্রধান নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করলেও এখনও বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এসব নদনদী অববাহিকায় সাম্প্রতিক সময়ে বন্যার সম্ভাবনা নেই।
পাউবোর কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘জেলায় নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করলেও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনও শঙ্কা নেই। আমরা যে তথ্য পেয়েছি তাতে আগামী ১০ দিনের মধ্যে জেলায় বন্যার পূর্বাভাস নেই। নদনদীর পানি এভাবে হ্রাস বৃদ্ধি পেতে পারে।’
এদিকে, ভারী বৃষ্টির অভাবে আমন রোপণে বিড়ম্বনায় পড়েছেন জেলার অধিকাংশ এলাকার কৃষক। তারা বাধ্য হয়ে সেচ দিয়ে জমি চাষ করে আমন রোপণ শুরু করেছেন। লোডশেডিং আর ডিজেলের উচ্চ মূল্য কৃষকদের বিড়ম্বনা বাড়িয়ে দিয়েছে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙা ইউনিয়নের গজেরকুটি এলাকায় জমিতে সেচ দিয়ে আমন রোপণ শুরু করেছেন ওই এলাকার কুরুষাফেরুষা গ্রামের সুশীল চন্দ্র ও আব্দুস ছাত্তার। তারা নিজেদের সেচ পাম্প দিয়ে জমিতে পানি দিলেও বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে তাদের সেচ বিঘ্নিত হচ্ছে।
সুশীল ও ছাত্তার বলেন, ‘এমনি ঝড়ি (বৃষ্টি) নাই, ইয়ার উপড়া লোডশেডিং। জমি দুই হাত না ভিজতে কারেন্ট চলি যায়। কেমন করি আবাদ করি।’
একই এলাকায় শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে পানি সেচ দিচ্ছিলেন মন্টু বর্মন। এতে খরচ বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা তার।
মন্টু বর্মন বলেন, ‘এই মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে চাষাবাদ করার কথা। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নাই। এমন করি ডিজেল খরচ করি আবাদ করলে খরচ শামলে ওঠা মুশকিল হয়া যাইবে।’
তবে কৃষকদের জন্য কিছুটা স্বস্তির খবর দিচ্ছে স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সবুর বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে দেশের সব এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিপাতও হতে পারে। বৃষ্টিপাতের ফলে তাপপ্রবাহ প্রশমিত হয়ে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে।’