X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টির অপেক্ষায় কৃষক

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী
১৭ আগস্ট ২০২২, ১৭:৪৩আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২২, ১৮:০৪

শ্রাবণ পেরিয়ে ভাদ্র মাসেও বৃষ্টির দেখা নেই, খরায় শুকিয়ে ফেটে গেছে আবাদি জমি। এমন প্রতিকূল আবহাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নীলফামারীর জেলার চাষিরা। একদিকে পাট পচানোর পর্যাপ্ত পানি নেই, অন্যদিকে আমন ধানের চাষ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। বৃষ্টির পানির বিকল্প এখন সেচযন্ত্রই তাদের একমাত্র ভরসা। 

বুধবার (১৭ আগস্ট) সরেজমিন দেখা যায়, পানির অভাবে পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পাট চাষিরা। জমির পাশে পড়ে থেকে শুকিয়ে খড়ি হয়ে যাচ্ছে পাট গাছ। এছাড়া আমন ধান রোপণের শেষ মৌসুমে পানির অভাবে কাজ করতে পারছেন না চাষিরা। রোপিত ধানের চারা জমিতে শুকিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকেই পানির অভাবে পারছেন না নতুন চারা রোপণ করতে। অনেকেই মেশিন চালিয়ে অথবা বিদ্যুৎচালিত পাম্প ব্যবহার করে চেষ্টা করছেন আমন চারা বাঁচানোর।

সদরের মিলন পল্লির পাট চাষি দুলাল হোসেন (৪৮) বলেন, এবার আমি দেড়বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছি। ১৫ দিন আগে পাট কেটেছি, কিন্তু পানির জন্য পচাতে পারছি না। রোদে শুকিয়ে খড়ি হয়ে গেছে। এখন আশা ছেড়ে দিয়েছি। ইচ্ছা ছিল ওই জমিতে ধান লাগাবো। বৃষ্টির অভাবে ধানও লাগাতে পারছি না, পাটও পচাতে পারছি না। এ অবস্থায় কৃষকের মরণ ছাড়া গতি নাই।

পাট চাষ করে লোকসানের শঙ্কায় থাকা কচুকাটা ইউনিয়নের দুহুলী গ্রামের মতিয়ার রহমান (৪২) বলেন, চলতি মৌসুমে এক একর জমিতে পাট চাষ করেছি। হাল, বীজ, সার ও শ্রমিক বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৫০০ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের ফলনও হয়েছিল বাম্পার। দাম ভালো পেলে খরচ বাদে ৩৮ হাজার ৫০০ টাকার ওপরে লাভ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাট কাটার পর খাল, বিল ডোবা, নালায় পানি না থাকায় জাগ দিতে পারছি না। 

সেচযন্ত্রের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে কৃষকদের জেলার ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের সুন্দরখাতা গ্রামের কৃষক তমিজ উদ্দিন (৬০) বলেন, তিস্তা বেষ্টিত এলাকায় কখনও বন্যা, কখনও খরা। ফলে সারা বছর দুর্যোগ লেগেই থাকে। খাল-বিলে পানি না থাকায় পাট পচানো যাচ্ছে না। স্যালো দিয়ে পুকুর ভরাট করে পাটের জাগ দিতে হচ্ছে। এতে খরচ হবে বেশি, পাটের রঙও হবে খারাপ। লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকাই ফিরবে কিনা তাই নিয়ে এখন দুশ্চিন্তা।  

অন্যদিকে বৃষ্টি না হওয়ায় আমন চাষেও বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের। উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের বাহালীপাড়া গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী (৪৫) বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়ে আমন ধান রোপণ করেছি। পাশাপাশি লাগানো চারা বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। এজন্য আমার বাড়তি খরচ হচ্ছে।’ পাঁচ বিঘা জমির মধ্যে সেচ দিয়ে তিন বিঘার চারা লাগানোর কাজ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত বাকি আছে দুই বিঘা।

একই ইউনিয়নের চড়চড়াবাড়ি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম (৪২) বলেন, ‘জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। উপায় না প্যায়া স্যালো মিশিন দিয়া পানি দেইছি।’

তিনি আরও জানান, দাওয়ার (আকাশের) পানিতে তার ছয় বিঘা জমির মধ্যে দুই বিঘাতে চারা লাগিয়েছেন। সময় মতো বৃষ্টি না হলে অবশিষ্ট জমিতে সেচ দিয়ে চারা লাগাবেন। এজন্য প্রতিবার সেচের জন্য একবিঘা জমিতে ৩০০ টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি বছরে আট হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। অন্যদিকে ছয় হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। 

 কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আরও জানায়, জেলায় এবার আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ১০০ হেক্টর। এখন পর্যন্ত এক লাখ ১১ হাজার ১৯০ হেক্টরে চারা রোপণ করা হয়েছে।

অবশ্য বৃষ্টিপাতের বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের সহকারী কর্মকর্তা লোকমান হাকিম। তিনি বলেন, আগস্ট মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত জেলায় গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৭৩.৭ মিলিমিটার। এবার বৃষ্টি তুলনামূলক গত বছরের চেয়ে অনেক কম। তবে এই আবহাওয়া বেশি দিন থাকবে না। শিগগিরই প্রচুর বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, জেলায় পাটের ফলন ভালো হলেও পানির অভাবে তা জাগ দিতে পারছেন না কৃষকরা। সেচপাম্প ব্যবহার করে পাট জাগ দিতে তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পানির অভাবে আমন ধানের চাষেও কৃষকরা বেগ পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।  

/টিটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
কৃষকের পাকা ধান কেটে ঘরে তুলে দিলো ছাত্রলীগ
বাড়তি ফসল মিষ্টিকুমড়ায় কৃষকের মুখে হাসি
হিলিতে প্রথমবার কিনোয়া ও চিয়া সিড চাষ, নতুন সম্ভাবনা
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে কিংবদন্তির ছেলে
বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ে দলে কিংবদন্তির ছেলে
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে  ইসরায়েল?
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে ইসরায়েল?
রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে স্মরণ
রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে স্মরণ
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা