X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

সবুজ মাল্টায় ভাগ্যবদল

হালিম আল রাজী, হিলি
০৯ অক্টোবর ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২২, ০৮:০০

সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। পরিবারে সচ্ছলতা আনার আশায় কয়েকটি গাছ লাগিয়ে সবুজ মাল্টার চাষাবাদ শুরু করেন। গত ছয় বছরে মাল্টা চাষে ভাগ্য বদলে গেছে জাকারিয়ার। এখন তিনি লাখপতি।

এএনএম জাকারিয়া দিনাজপুরের হিলির খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়নের খট্টা গ্রামের বাসিন্দা। ছয় বছর আগে বাড়ির পাশে ২০ শতক জমিতে কৃষি অফিসের পরামর্শে ৬০টি সবুজ মাল্টার গাছ দিয়ে বাগান করেন। সেখান থেকে লাভজনক ফল আসায় দুই বিঘা জমিতে মাল্টা ও কমলার বাগান করেছেন। এরই মধ্যে বাগানে তিন যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তার সফলতা দেখে মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এলাকার কৃষকরা।

জাকারিয়ার বাগানে কর্মরত শ্রমিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘জাকারিয়া ভাইয়ের মাল্টা বাগানে আমাদের তিন জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। বাগান দেখাশোনা, গাছের পরিচর্যা, ফল উঠানো ও বিক্রি সব কাজ আমরাই করি। দিনে ৪০০ টাকা মজুরি পাই। তা দিয়ে ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চালাই। এলাকায় আরও বাগান হলে অনেকের কর্মসংস্থান হবে।’

গত ছয় বছরে মাল্টা চাষে ভাগ্য বদলে গেছে জাকারিয়ার

বাগান দেখতে আসা স্থানীয় কৃষক আসলাম হোসেন বলেন, ‘এই জায়গাটি এতদিন খালি পড়েছিল। কোনও ফসল আবাদ হচ্ছিল না। কৃষি অফিস থেকে গাছ নিয়ে মাল্টার বাগান করেছেন জাকারিয়া। ভালোই ফলন দেখতে পাচ্ছি আমরা। আগে তার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না, বাগান করে এখন সচ্ছল।’

তিনি বলেন, ‘আমার অনেকখানি জায়গা পড়ে আছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবার মাল্টা বাগান করবো। এজন্য জাকারিয়া ভাইয়ের কাছ থেকে মাল্টা চাষের পরামর্শ নিচ্ছি। পাশাপাশি কৃষি অফিস থেকেও পরামর্শ নিচ্ছি।’  

মাল্টা চাষি এএনএম জাকারিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৬ সালে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বারি-১ জাতের ৬০টি মাল্টা গাছের চারা পাই। বাড়ির পাশে পতিত ২০ শতক জমিতে মাল্টার চারাগুলো লাগাই। ৬০টির মধ্যে ৩৬টি গাছ টিকেছে। দুই বছরের মাথায় এসব গাছে ফল আসতে শুরু করে। প্রথম বছর ফল বিক্রি না করে এলাকাবাসীর মাঝে বিলিয়ে দিই। ২০১৯ সালে গাছ থেকে ফল বিক্রি শুরু করি। ওই বছর ৩৫ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। পরের বছর আরও বেশি ফলন ধরেছে। ওই বছর প্রায় ৬০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। গত বছর প্রায় ৮০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। এ পর্যন্ত খরচ বাদ দিয়ে লাখ টাকা আয় হয়েছে।’

বাগানের কর্মীকে নিয়ে ফলন তুলছেন চাষি জাকারিয়া

তিনি বলেন, ‘আমার বাগানের মাল্টা বড় ও সুস্বাদু। এ বছর লাখ টাকা আয়ের আশা করছি। মাল্টা চাষে সফল হওয়ায় কৃষি অফিসের পরামর্শে আরেকটি বাগান করেছি। সেখানে মাল্টা ও কমলার ৪৮৫টি গাছ আছে। এর মধ্যে দার্জিলিং কমলার গাছ ১৫০টি, ৬০টি ভিয়েতনামের বারোমাসি মাল্টা গাছ, বাকিগুলো বারি-১ জাতের মাল্টা গাছ। ইতোমধ্যে এসব মাল্টা গাছে ফলন ধরেছে। তবে এখনও ফল বিক্রি শুরু করিনি। কয়েকদিনের মধ্যে শুরু করবো। আগামী বছর কমলা গাছে ফলন ধরার কথা। মাল্টা বিক্রি নিয়ে কোনও টেনশন নেই আমার। পাইকাররা বাগানে এসে মাল্টা দেখে কিনে নিয়ে যান। প্রতি কেজি মাল্টা ১২০-১৫০ টাকা বিক্রি করি।’ 

দুই বিঘা জমিতে মাল্টা ও কমলার বাগান করেছেন জাকারিয়া

নতুন চাষিদের পরামর্শ দিয়ে এই চাষি বলেন, ‘মাটি ভালো নাকি খারাপ তা পরীক্ষা করে তারপর মাল্টা গাছ লাগাতে হবে। গাছ লাগানোর আগে কৃষি অফিসের পরামর্শ নিতে হবে। সময়ের আগে মাল্টা উত্তোলন করা যাবে না। অপরিপক্ব মাল্টা উত্তোলন করলে স্বাদ পাওয়া যায় না। এতে লোকসানের মুখে পড়তে হবে চাষিদের। অক্টোবর মাস থেকে মাল্টা উত্তোলন করলে স্বাদ যেমন পরিপূর্ণ হবে তেমনি দাম ভালো পাওয়া যাবে।’

হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মমতাজ সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার উপজেলায় তিন হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হয়েছে। এখানে মাল্টা চাষাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। যে কেউ চাইলে আমাদের পরামর্শ নিয়ে মাল্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।’

তার বাগানের মাল্টা বড় ও সুস্বাদু

তিনি বলেন, ‘প্রথমে প্রকল্পের আওতায় জাকারিয়াকে ৬০টি মাল্টা গাছ দিয়েছিলাম। গত কয়েক বছর ফলন ভালো হয়েছে। তার বাগানের ফল বেশ বড় ও সুস্বাদু। ফলে ৪৮৫টি গাছ দিয়ে মাল্টা ও কমলার বাগান করেছেন। তার বাগান দেখে এলাকার কৃষকরা মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আমাদের কাছে পরামর্শ নিতে আসছেন। আমরাও চাচ্ছি, এই ফসলটা উপজেলায় সম্প্রসারিত হোক। বিদেশ থেকে যে মাল্টা আমদানি হয় তার ওপর নির্ভরতা কমাতে চাই। সেইসঙ্গে দেশি ফল দিয়ে চাহিদা মেটাতে চাই। সে লক্ষ্যে কৃষকদের মাঝে চারা বিতরণসহ সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

/এএম/
সম্পর্কিত
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
একদিনে হিলি দিয়ে ১১৯৮ টন আলু আমদানি
লাভবান হওয়ায় বেগুন চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা
সর্বশেষ খবর
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ